রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

ইউরোপজুড়ে গাজায় হামলার প্রতিবাদে লাখো মানুষের বিক্ষোভ



ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান যুদ্ধ ও ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ ও মিছিল করেছে। শনিবার ও রোববার যুক্তরাজ্য, স্পেন, ইতালি ও পর্তুগালের বিভিন্ন শহরে এসব প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ ও বার্সেলোনায় আগেই নির্ধারিত বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হলেও ইতালির রোম এবং পর্তুগালের লিসবনে প্রতিবাদ শুরু হয় গাজাগামী ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর।

ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলি নৌবাহিনী ফ্লোটিলাটি আটক করে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর লক্ষ্যে নৌবহরটি বার্সেলোনা থেকে যাত্রা করেছিল। এতে থাকা ৪৫০ জন মানবাধিকারকর্মীর মধ্যে ৪০ জনের বেশি স্পেনের নাগরিক, যাদের মধ্যে বার্সেলোনার এক সাবেক মেয়রও রয়েছেন।

এর আগে, শুক্রবার ইতালিতে গাজার জনগণের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এক দিনের সাধারণ ধর্মঘটে অংশ নেন প্রায় ২০ লাখ মানুষ।

স্পেনে সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিনপন্থী জনসমর্থন বাড়ছে। দেশটির সরকারও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন দক্ষিণপন্থী সরকারের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক অবস্থান জোরদার করছে। গত মাসে স্পেনে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক সাইক্লিং প্রতিযোগিতায় ইসরায়েলি দলের অংশগ্রহণের সময়ও সেখানে প্রতিবাদ হয়েছিল, যা প্রতিযোগিতার কার্যক্রম বিঘ্নিত করে।

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ চলমান গাজা যুদ্ধকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং আন্তর্জাতিক সব ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে ইসরায়েলি দলকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

বার্সেলোনার স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, শনিবারের বিক্ষোভে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন।

এক বিক্ষোভকারী মারিয়া জেসুস পাররা বলেন,

“১৯৪০-এর দশকে ইউরোপে যেমন গণহত্যা দেখেছিলাম, আজ গাজায় ঠিক তেমনটাই ঘটছে। এখন আর কেউ বলতে পারবে না—ওখানে কী হচ্ছে তা তারা জানে না।”

অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে, ম্যানচেস্টারের একটি সিনাগগে প্রাণঘাতী হামলার পর লন্ডনে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ না করার আহ্বান জানিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে নিষিদ্ধ সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-এর সমর্থনে লন্ডনে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশ জানায়, সেখানে অন্তত ৪৪২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার দাবি, এ সংখ্যা ৫০০-এর কাছাকাছি।

ম্যানচেস্টারের হামলায় দুইজন নিহত হন এবং হামলাকারীকে ঘটনাস্থলেই গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। নিহত হামলাকারীর পরিচয় সিরীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে নিশ্চিত করা হয়েছে।

ঘটনার পর লন্ডনের সিনাগগ ও মসজিদে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, শনিবারের বিশাল বিক্ষোভ তাদের নিরাপত্তা তৎপরতাকে ব্যাহত করেছে।

প্রতিবাদ আয়োজকেরা জানান, হামলার ঘটনার আগেই বিক্ষোভের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তারা বলেন, গাজায় চলমান যুদ্ধ ও প্যালেস্টাইন অ্যাকশন সংগঠনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এদিকে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংগঠন হামাস জানিয়েছে, তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির শর্ত আংশিকভাবে মেনে নিতে রাজি।

দুই বছর ধরে চলা এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত গাজায় ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, আর উপত্যকাটি পরিণত হয়েছে এক ধ্বংসস্তূপে।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!