রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

ডায়াবেটিস ও স্থূলতা থাকলে ভিসা বাতিল হতে পারে: যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্দেশনা



ছবি সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদনকারীদের মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস, স্থূলতা বা অনুরূপ স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, তাদের ভিসা বাতিল হতে পারে—এমন নতুন নির্দেশনা জারি করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর (স্টেট ডিপার্টমেন্ট) এই নির্দেশিকা প্রকাশ করে।

নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এসব স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত আবেদনকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘পাবলিক চার্জ’ বা অর্থনৈতিক বোঝা হয়ে উঠতে পারেন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ ক্ষয় করতে পারেন। তাই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের আগে এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হবে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কেএফএফ হেলথ নিউজ জানিয়েছে, মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোতে ইতিমধ্যে এই নির্দেশনাটি নোটিশ আকারে পাঠানো হয়েছে। আগে ভিসা প্রক্রিয়ায় কেবল সংক্রামক রোগ, টিকাদান ইতিহাস, মানসিক অবস্থা ও শারীরিক সক্ষমতার মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করা হতো। তবে নতুন নীতিমালায় আরও কিছু স্বাস্থ্য সমস্যাকে যুক্ত করা হয়েছে।

নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, আবেদনকারীর সামগ্রিক স্বাস্থ্য এখন থেকে ভিসা মূল্যায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে। কিছু জটিল রোগ যেমন হৃদ্‌রোগ, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, মেটাবলিক বা স্নায়বিক সমস্যা, এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যজনিত অসুস্থতার চিকিৎসার খরচ কয়েক লাখ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। তাই ভিসা কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, আবেদনকারী এসব চিকিৎসা ব্যয় নিজে বহন করতে পারবেন কি না—তা যাচাই করতে হবে।

ক্যাথলিক লিগ্যাল ইমিগ্রেশন নেটওয়ার্কের সিনিয়র অ্যাটর্নি চার্লস হুইলার বলেন, যদিও এ নির্দেশনা সব ধরনের ভিসার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, তবে এটি মূলত স্থায়ী বসবাসের (পারমানেন্ট রেসিডেন্সি) আবেদনকারীদের জন্যই প্রযোজ্য হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার মতে, চিকিৎসাসংক্রান্ত মূল্যায়নের ক্ষমতা ভিসা কর্মকর্তাদের হাতে দেওয়া উদ্বেগজনক, কারণ তারা চিকিৎসক নন এবং এ বিষয়ে তাদের কোনো পেশাগত অভিজ্ঞতা নেই। ফলে ব্যক্তিগত ধারণা বা পক্ষপাতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, আবেদনকারীর কি আজীবন চিকিৎসা ব্যয় বহনের মতো পর্যাপ্ত আর্থিক সক্ষমতা আছে, যাতে সরকারি সহায়তা বা দীর্ঘমেয়াদি সেবার প্রয়োজন না পড়ে—এটি অবশ্যই যাচাই করতে হবে। পাশাপাশি আবেদনকারীর পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য অবস্থাও বিবেচনা করতে হবে। যেমন কোনো সন্তান বা প্রবীণ অভিভাবকের শারীরিক অক্ষমতা, দীর্ঘস্থায়ী রোগ বা বিশেষ যত্নের প্রয়োজন আছে কিনা, তা দেখা হবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, আবেদনকারীর নির্ভরশীল সদস্যদের (ডিপেনডেন্ট) মধ্যে কেউ শারীরিক বা মানসিকভাবে অসুস্থ হলে, তার প্রভাব আবেদনকারীর কর্মক্ষমতার ওপর পড়তে পারে কি না—তাও মূল্যায়ন করতে হবে।

জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিবাসন আইনজীবী সোফিয়া জেনোভেস বলেন, নতুন এই নীতিমালায় ভিসা কর্মকর্তাদের আবেদনকারীর চিকিৎসা ইতিহাস ও সম্ভাব্য চিকিৎসা ব্যয় মূল্যায়নের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের সক্ষমতা যাচাই করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এর লক্ষ্য হলো নিশ্চিত করা যে, যুক্তরাষ্ট্রে আগত কোনো অভিবাসী স্বাস্থ্যগত কারণে সরকারের ওপর আর্থিক বোঝা হয়ে না ওঠেন।

সার্বিকভাবে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই নতুন নির্দেশনার উদ্দেশ্য হলো—স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত আবেদনকারীরা যেন যুক্তরাষ্ট্রে এসে ‘পাবলিক চার্জ’ বা অর্থনৈতিক বোঝা না হয়ে ওঠেন, তা নিশ্চিত করা।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!