রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

ফজির আহমেদ আশরাফ

নিউইয়র্কে নতুন ইতিহাস: মুসলিম মেয়র জোহরান মামদানি



জোহরান মামদানি। ছবি: এএফপি

আমেরিকার ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল দিন ৪ জুলাই ২০২৫। এই প্রথমবারের মতো নিউইয়র্ক (State)-এর মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন একজন মুসলিম তরুণ— জোহরান মামদানি। এই বিজয়ে পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে হৃদয়ের গভীর থেকে শুকরিয়া জানাই। এই অর্জন শুধু নিউইয়র্কবাসীর নয়, বরং মানবতা, ন্যায় ও সত্যের বিজয়।

জোহরান মামদানি— একজন মেধাবী, সাহসী, ন্যায়পরায়ণ ও মানবতাবাদী তরুণ নেতা। তাঁর নেতৃত্বে আমরা বিশ্বাস করি আগামী প্রজন্মের জন্য নিউইয়র্ক আরও সুন্দর, আরও সম্ভাবনাময় হয়ে উঠবে।

বিশেষ করে আমরা বাংলাদেশি কমিউনিটি ভালোবাসা ও ঐক্যের শক্তিতে তাঁর পাশে থেকেছি। কেম্পেইন, ভোট প্রদান —সবখানেই আমরা আমাদের সময়, শ্রম ও হৃদয় ঢেলে দিয়েছি।

আমি নিজে নিউইয়র্ক সিটির একজন পেশাদার গাড়িচালক। প্রতিদিন প্রায় ২৫-৩০ জন যাত্রী ওঠানামা করেন আমার ট্যাক্সিতে। তাদের অনেকের সঙ্গেই আমি জোহরান মামদানির কথা বলেছি। আমার আনন্দের বিষয় হচ্ছে, প্রায় ৭৫% মানুষ নীতিগতভাবে তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন।

বালাগঞ্জ ওসমানীনগর প্রবাসী কল‍্যাণ সোসাইটির ইফতার মাহফিলে  জোহরান মামদানি

একটি ঘটনা আজও আমার মনে গেঁথে আছে—
একদিন আমার গাড়িতে এক তরুণী যাত্রী ছিলেন যিনি সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে একটি বড় ব্যাংকে চাকরি শুরু করেছেন। তাঁর সঙ্গে আলাপে যখন মামদানির কথা উঠল মেয়েটি উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন, আমি শুধু ভোটই দেব না, বরং জোহরান মামদানির জন্য ক্যাম্পেইন করছি।

তিনি বলেছিলেন, তাঁর অনেক বন্ধুদের নিয়েও তাঁরা কাজ করছেন মামদানির টিমে। আমার অনুভূতি শুনে মেয়েটি হাসিমুখে বলেছিল, “আমরা একসাথে পরিবর্তন আনব।”
বিদায়ের আগে গাড়িতেই তিনি একটি সেলফি তুলেছিলেন আমার সঙ্গে। সেই মুহূর্ত আজও আমার জীবনের এক স্মরণীয় আবেগ হয়ে আছে।

জোহরান মামদানি শুধু একজন রাজনীতিক নন—তিনি একজন বিশ্বাসী মানুষ, যিনি ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে সত্যের পক্ষে দাঁড়াতে জানেন। তাঁর দৃঢ় কণ্ঠে বলা সেই কথাটি আজও কানে বাজে— আমি যদি মেয়র হই, মানবতার শত্রু, যুদ্ধাপরাধী ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নিতানাহু নিউইয়র্কে এলে আমি তাঁকে আন্তর্জাতিক আদালতের ওয়ারেন্ট অনুযায়ী গ্রেফতার করব। এই সাহস, এই দৃঢ়তা—এটাই এক প্রকৃত নেতার পরিচয়।

তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নিউইয়র্ককে মানবতা, ন্যায়, শিক্ষা, কাজ ও নিরাপত্তায় এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।
ফ্রি বাস সার্ভিস, সাশ্রয়ী হাউজিং, তরুণদের কর্মদক্ষতা উন্নয়ন— সবই তাঁর প্রতিশ্রুতির অংশ।

মামদানির টিমের একজন কর্মীর সাথে লেখক।

আমরা জানি, আমেরিকা এমন এক দেশ যেখানে “ফ্রি” বলে কিছু নেই, কিন্তু জোহরান মামদানি প্রমাণ করতে চান—মানবতার সেবা কোনো মূল্যে বিক্রি হয় না। তিনি জানেন, সুন্দর শহর গড়তে হলে শ্রমজীবী মানুষের ঘাম, সততা, ও ভালোবাসার সম্মান দিতে হয়। তাই আমরা, নিউইয়র্কের সাধারণ মানুষ— শ্রমজীবী, ড্রাইভার, ছাত্র, ব্যবসায়ী—সবাই তাঁর পাশে আছি, থাকব ইনশাআল্লাহ।

আমরা বিশ্বাস করি— জোহরান মামদানি শুধু একজন মেয়র নন, তিনি আমাদের স্বপ্ন, আমাদের বিশ্বাসের প্রতীক।হে আল্লাহ, আপনি তাঁকে শক্তি, প্রজ্ঞা ও ন্যায়বোধে পরিপূর্ণ রাখুন। তিনি যেন মানবতার পক্ষে, ন্যায়ের পথে, সাহসের আলোয় পথচলা অব্যাহত রাখতে পারেন—এই প্রার্থনা।

অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জোহরান মামদানি, আপনার এই বিজয় আমাদের সকলের গর্ব।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!