আজ সোমবার জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ সালের সম্পূরক বাজেটের ওপর সমাপনি আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রীকে জাপার মন্ত্রী বলেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন।
তাতে অর্থমন্ত্রী বেশ রাগান্বিত হয়ে বলেন, আমি কখনো জাতীয় পার্টির এমপি বা সদস্য ছিলাম না। আগামীতে এমন বক্তব্যে দেওয়া হলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন মুহিত।
সম্পুরক বাজেটের আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মহিত বলেন, ‘কয়েকবারই বলেছি, কিন্তু জাতীয় পার্টির সদস্যরা সেটা অস্বীকার করে যান। আজকেও অস্বীকার করেছেন। আমি আবারও স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমি কোনো দিন জাতীয় পার্টির সদস্যও ছিলাম না, কোনো দিন জাতীয় পার্টির মন্ত্রীও ছিলাম না। অনেকবারই এটা বলেছিল।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘জেনারেল এরশাদ যখন সামরিক শাসক ছিলেন সেই সময় মন্ত্রী ছিলাম, জাতীয় পার্টির তখন জন্মও হয় নাই। জাতীয় পার্টি জন্ম হওয়ার আগে আমি সেই সরকার থেকে পদত্যাগ করে চলে যাই। কাজেই আমার অনুরোধ হবে, ভবিষ্যতে যেন জাতীয় পার্টির সদস্যরা মনে রাখেন, যদি মনে না রাখেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনার সময় এর জবাবে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘জাতীয় পার্টি গঠনের পূর্বেই এরশাদ সাহেবের সামরিক শাসনের সময় অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিত সাহেব বাজেট দিয়েছিলেন। উনি (অর্থমন্ত্রী) কখনো জাতীয় পার্টি করেননি। তবে আমি আশ্বস্ত করতে চাই, ভবিষ্যতে তার (অর্থমন্ত্রী) মতো জ্ঞানী, অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে জাতীয় পার্টি তাদের দলে স্থান দেবে না। এর জন্য আপনাকে (অর্থমন্ত্রী) আদালতে যেতে হবে না। কিন্তু আপনি ব্যাংক ডাকাতদের যে প্রটেকশন দিয়েছেন তার জন্য আদালতে যেতে হবে।’
অর্থমন্ত্রীর ক্ষোভের জবাব দিতে গিয়ে জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি তাকে (অর্থমন্ত্রী) জাতীয় পার্টির আমলের মন্ত্রী কথাটি বলিনি। তিনি খুবই শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি, সংসদে আমরা কিন্তু সহকর্মী। অর্থমন্ত্রী বয়স্ক হলেও অন্য সংসদ সদস্যকে এভাবে ধমকানো তার সঠিক হয়নি।’
জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, ‘প্রতিবছরই বড় বাজেট দিয়ে জনগণকে বড় স্বপ্ন দেখানো হয়। কিন্তু বছর শেষে দেখা যায় বাজেট বাস্তবায়ন হয়নি। গত ১০ বছরে একটি বাজেটও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। ব্যাংকখাতকে পরিপূর্ণ পরিবারতন্ত্রে রূপ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ, কোনো রেগুলেটরি কমিটি নেই। ১ লাখ ২৫ হাজার ঋণ খেলাপী রয়েছে। কারা ঋণ খেলাপী, কীসের জন্য ঋণ খেলাপী আজ পর্যন্ত দেশবাসীকে জানানো হয়নি, তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। দেশ থেকে বিপুল অর্থ পাচার বন্ধ করা না গেলে প্রবৃদ্ধি জনগণের কোনো কাজে আসবে না।’
প্রথম দিনের আলোচনায় সরকার ও বিরোধীদলের সংসদ সদস্যরা ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও সমাপনি বক্তব্যে এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি অর্থমন্ত্রী।
সম্পূরক বাজেটের ওপর সমাপনি বক্তব্যে অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘গতবার সম্পূরক বাজেট নিয়ে যেসকল আলোচনা হয়েছিল তাতে আমার ইচ্ছা ছিল সম্পূরক বাজেটটাকে আরেকটু অর্থবহ করা এবং সেটা বিস্তৃততর আলোচনার ব্যবস্থা করা। এটা এ বছর আমি করতে পারিনি সেজন্য খুবই দুঃখিত। আশা করছি, ভবিষ্যতে এধরনের একটা ব্যবস্থা হবে। সম্পূরক বাজেটে আমরা যে পরিবর্তন করেছিলাম সেটা খুবই সামান্য। মোটামুটিভাবে আগে বিভিন্ন বিভাগে যে ক্ষমতা এই সংসদ দিয়েছিল সেটা যতদূর সম্ভব রক্ষা করেছি। তবে কিছুটা আয় ব্যয় এদিকে সেদিক হয়েছে। সেটিকে আইনগত ভিত্তি দিতেই এই সম্পূরক বাজেট।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দুই টার্মে অর্থাৎ ১০ বছরে বাজেট ৫ লাখ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। আগে সংসদ সদস্যরা এক লাখ কোটি টাকার বাজেট পাস করতেন, এখন করছেন ৫ লাখ কোটি টাকা। আর সংবিধানই সম্পূরক ব্যয়ের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। সম্পূরক বাজেট পাস হয় সংবিধান সম্মতভাবেই।’