সংক্ষিপ্ত কবি পরিচিতি :
খালেদ উদ-দীন
জন্ম ১০ মে ১৯৭৮ বিশ্বনাথ, সিলেট
সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ।
রাগীব রাবেয়া ডিগ্রি কলেজ, সিলেট
স্থায়ী ঠিকানা:
বৈশাখী-১১৭/২, খরাদিপাড়া, শিবগঞ্জ, সিলেট
প্রকাশিত কবিতা বই:
রঙিন মোড়কে সাদা কালো (২০০৮)
ভাঙা ঘর নীরব সমুদ্র (২০০৯)
জলপাতালে মিঠে রোদ (২০১৫)
নৈঃশব্দ্যের জলজোছনা (২০১৮)
শিশুতোষ:
সুপারম্যান (২০১৬)
কথা বলা পাখি (২০১৭)
শেফালি খালার গল্প (২০১৮)
পাখিবন্ধু (২০১৮)
সম্পাদনা :
বুনন (ছোটোকাগজ)
পাপড়ি রহমানের ‘নির্বাচিত গল্প’ (২০১৭)
সাহিত্য সম্পাদক : দৈনিক শুভ প্রতিদিন
কবি খালেদ উদ-দীন এর কয়েকটি কবিতা –
খোলামাঠ
মাঠ পেরোলেই বিস্তৃর্ণ জনপদ। মাঠ পেরোলেই কোলাহল। মাঠ পেরোলেই ব্যস্ততা। উপড়ে ওঠার সিঁড়ি অতিক্রমের মহড়া। মাঠ পেরোলেই তন্ত্রমন্ত্র। শাসন শোষণের কৌশল। মাঠ পেরোলেই আইন-আদালত মামলামোকদ্দমা। মাঠ পেরোলেই শিশুর কাঁধে বইয়ের ব্যাগ। মাঠ পেরোলেই ক্রন্দন–হাহাকার। দিনশেষের হিসাব। মাঠ পেরোলেই মিছিল মিটিং। সুবিধা আদায়ের লড়াই। মাঠ পেরোলেই রক্ত। স্বজাতির নির্মমতা। অস্ত্র আর বোমা। নগরে জনপদে অস্তিরতা। মাঠ পেরোলেই ক্ষুধা–রাজ্যের খাবার নিয়ে বসে থাকা মহাজন।
তবে আসুন এই খোলামাঠে। চুপ করে বসুন। দেখুন– কী মধুময় বাতাস বইছে।
অভিসার
হঠাৎ এভাবে যদি থমকে দাঁড়াও
পাহাড়ি ঝরনায় সখ্য হবে
গোধূলি শেষের আলোছায়ায়
বিবর্ণ জোছনায়ও হোঁচট লাগে স্মৃতির ফ্রিজারে
গলে যায়; উন্মুখ জমানো বরফ।
কত চক্র পেরিয়ে গোপন সখ্যকথা কানে আসে
এই নির্জন দুপুরে কারে শোনাও গান
কে নাচে এমন পেখম তুলে রূপের উদ্যানে
অদূরে হুইসেল বাজছে, এইবার থামো, মুখোমুখি হও
বলে যাও, কোন অভিসারে এই সংসার করেছ শ্মশান।
আগুন অাগুন অাগুন…
সীমান্ত পুড়েছে বেরসিক দাবানলে-
আর আমাদের সুমনার পুড়েছে ঘর ও সংসার
পৃথিবীর তামাম মানুষই এক একটি অগ্নিশিখা
সেই অাগুনে পুড়েছে হিরোশিমা…
পুড়ছে মানবতা।
আমি ও মহাকাল
স্বপ্ন শুয়েছিল স্রোতময় নদীর ভাসমান কচুরিপানার ওপর। ভাসছিল সে দূরে যাবে বলে–অচেনা নগরে। অচেনা নগরে কোনো নদী ছিল না। স্বপ্ন নিমজ্জিত হল সাগরে– উথালপাতাল ঢেউয়ে সে মিশে গিয়েছিল।
একটা পাখি উপর থেকে এই খেলা দেখছিল আর হাসছিল।
হাওয়া বাড়ি
ফুঁ দিয়ে যখন উড়িয়ে দিয়েছি–সংসার, হিসাবি খাতা। তখন থেকে হাওয়াই আমার বাড়িঘর। হাওয়ায় ভেসে ভেসে যখন তোমার বাড়ির পাশ দিয়ে যাই–ডানায় আর উড়ার শক্তি থাকে না। ইচ্ছে করে নেমে যাই তোমার বাড়ির ছাদে–ছোবল দিয়ে তুলে নিয়ে যাই।
তোমার যদি কোনও দিন বাতাসে ভাসতে ইচ্ছা করে, তবে এসো–আকাশে কোথাও ঘর বাঁধব। অাবার সংসারী হব।
জলবিছানা
জলাশয়ে বা হাওরে স্থির জল দেখলে ভাবি
এমন সমতলে যদি শুয়ে থাকা যেত!
জলবিছানায় শুয়ে শুয়ে খোলা অাকাশের দিকে তাকিয়ে
পৃথিবীর অপার রহস্যে অারও কিছুটা সময় মুগ্ধ হয়ে–
শুধু তোমাকেই বলতাম–জীবন সত্যিই মধুময়!
অথবা স্রোতময় জলবিছানায় ভাসতে ভাসতে দিক থেকে দিগন্তে–
কবে থেকে লোকালয় অামার অপ্রিয় হয়ে ওঠলো
অামি তার কিছুই জানি না।
বাজারদর
বাজারদরে সবকিছু বিচার করলে হারবে–
পরাজয় হবে তোমার।
আমাদের আগামী বিলবোর্ডে স্থির হয়ে আছে–
উড়ছে টাকা বাতাসে–সুষে নিচ্ছে পুরনো জোক
ফানুসের মতো মিশে যায় করুণ সুর।
সবকিছু বাজারদরে বিচার করলে হারবে–
শেষ বিকালের ছায়া সাক্ষি, সাক্ষি হলদে আলোর নিরবতা,
ভালোবাসার বিশ্বাসে জমে আছে হাওরের জলম
এসো তবে–হংসবালিকা, উড়ে যাই দিগন্তে।
ভালোবাসা
তোমাকে ভালোবাসতে গিয়ে আমার কম কাঠগড় পোহাতে হয় নি। পরশির বাঁকা চোখ। বন্ধুদের ঈর্ষা ও হিংসা। এমনকি তোমাদের বাসার সামনে দাড়িয়ে থাকা কালো কুকুরটার ধমকও সইতে হয়েছে। এসব কাণ্ডকারখানা দেখে বারান্দায় দাড়িয়ে তুমি যখন হাসতে– ওড়না খসে পরার আগেই উড়ে যেত একপাল প্রজাপতি। তোমার বাগানে তখন বসন্ত।
এমন দখিনা বাতাস– হার মানি কেমনে বলো!
তোমার জন্য আমি অবশ্য একটা কবিতা লেখেছিলাম।কবিতায় তেমাকে অপ্সরী না বলে হাহাকার বলেছিলাম। এখন ভালোবেসে বুঝলাম, ভালোবাসা হাহাকার ছাড়া আর কিছু নয়।
পানশালা
এক তরুণ হতদস্ত হয়ে ঢুকে পরে শহরের সবচেয়ে বড় পানশালায়। ঠিক মধ্যখানে খালি টেবিলটায় সে বসে।হাতের ইশারায় চলে এলো পানীয় ও পানপাত্র। পানপাত্রেরর জলে তার ছায়া ভেসে ওঠলে, সে ভাবলো– সে কি এইমাত্র তার প্রেমিকাকে হত্যা করে এসেছে; না কি তাকে হত্যা করতে হবে পৌষের শেষ সন্ধ্যায়।
গোধুলিতে যখন তারা অমরত্বের সন্ধানে ছিলো; ফু দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিলো সংসার। বসেছিলো কোন কথা না বলে দীর্ঘ প্রহর। তখনও কী তার এমনই মনে হয়েছিলো!
পানশালা হঠাৎ দুলে ওঠলো–আবারও কী ভূমিকম্প হচ্ছে!
অস্ত্র কারিগড়
সমবেত বর্ষাযাপনের অনুষ্ঠানে এক অস্ত্রধারীর গুলিতে ৩৯ জন নিহত হয়; অস্ত্রধারী যে অস্ত্র ব্যবহার করেছিলো তারনাম শুনে চমকে উঠলো অস্ত্রনির্মাতা কিউলি হেগেল। তাহলে পরিশ্রম সার্থক হয়েছে!
আরও অস্ত্র বানাতে হবে এবং ছড়িয়ে দিতে হবে। শনিবার মধ্যরাতের পানশালায় একটু বেশিই পান করেছিলো হেগেল!