বদরুল মনসুর : আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি। একুশ আমাদের অহংকার একুশ আমাদের আত্মপরিচয়। একুশের পথ ধরে আমরা প্রবাসে বহণ করে চলছি বাংলাদেশের লাল বৃত্ত সবুজ পতাকা; গৌরব ও গর্বের সাথে উচ্চারণ করছি বাংলা আমার দেশ। বাংলা আমার ভাষা। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কতৃক স্বীকৃতি লাভের পর ২০০০ সাল থেকেই বিশ্ববাসীর ১৮৮টি দেশ আমাদের ২১ শে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালন করে আসছে। এই গৌরব প্রবাসী বাঙালীদের এই গৌরব বাঙালী জাতির।
অমর একুশ ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগাম্ভীর পরিবেশে নানা অনুষ্টানের মধ্য দিয়ে বৃটেনের ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফ শহরের গ্রেঞ্জমোর পার্কে কাউন্সিলের প্রদত্ত জায়গায় কমিউনিটির নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে প্রথম বারের মত এক নব ইতিহাসের সূচনা করেছে ওয়েলস বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ইউকে।
একুশের গান গেয়ে প্রথম প্রহরে র্যালী সহকারে বাংলাদেশের হাইকমিশনার কার্ডিফ কাউন্টি কাউন্সিলের লর্ড মেয়র, কাউন্সিল লিডার, ওয়েলস অ্যাসেম্বলি মিনিষ্টার, কার্ডিফের লেবার পার্টি, কনজার্ভেটিভ পার্টি, লিবারেশন ডেমোক্রেট পার্টির কাউন্সিলারবৃন্দ ও ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাংগুয়েজ মনুমেন্ট তথা শহীদ মিনার ফাউন্ডার ট্রাষ্ট কমিটি সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক যুব সংগঠন. সামাজিক সাংস্কৃতিক ও কমিউনিটি সংগঠনের পক্ষ থেকে স্কুল ছাত্র ছাত্রীরা একে একে শহীদ মিনার বেদীতে ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন।
মনুমেন্ট তথা শহীদ মিনার ফাউন্ডার ট্রাষ্ট কমিটির চেয়ারম্যান আনোয়ার আলীর সভাপতিত্বে ও মনুমেন্ট তথা শহীদ মিনার ফাউন্ডার ট্রাষ্ট কমিটির জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ মকিস মনসুর এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি বামিংহামের সহকারী হাইকমিশনার নাজমুল হক, কাউন্সিলার দিলওয়ার আলী, ফাউন্ডার ট্রাষ্ট কমিটির ডেপুটি চেয়ার মোহাম্মদ সেরুল ইসলাম, ট্রেজারার আনহার মিয়া। ট্রাস্টি – শেখ তাহির উল্লাহ, মোহাম্মদ মুজিব, আসাদ মিয়া, এম এ সালাম বুলবুল ও শামীম আহমদ প্রমুখ।
পরদিন ২১ শে ফেব্রুয়ারি কার্ডিফের বিভিন্ন স্কুলের বিপুল সংখ্যক ছাত্র ছাত্রীদের অংশগ্রহণে নব প্রজন্মের মাসুদা আলী ও নব প্রজন্মের নাদিয়া ইসলামের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত পোগ্রামে প্রধান অতিথি কার্ডিফের লর্ড মেয়র রাইট অনারেবল ডায়ান রিস.কাউন্সিল লিডার হিউ টমাস, মরফুড মেরেডিথ ওয়েলস অ্যাম্বলির মেম্বার জুলি মগান সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
সভায় কাউন্সিলার ফাউন্ডার ট্রাস্টি লাইফ মেম্বার, ফ্রেন্ডস অব মনুমেন্ট সহ সোয়ানসী, নিউপোর্ট ও কাডিফ শহরের অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। উভয় অনুষ্ঠানেই ভাষা শহীদানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা ভাষার গুরুত্ব ও ইউনেস্কো কতৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি প্রদান সহ নানা ইতিকথা তুলে ধরেন।
ওয়েলসের মাটিতে ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাংগুয়েজ মনুমেন্ট তথা প্রথম শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠায় যাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন ফাউন্ডার ট্রাস্ট কমিটি সহ সকল অবদানকারীদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেন – অনেক ত্যাগ, তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে একটি জাতি তাঁর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছতে পারে। বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাস ও অমর একুশ তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমাদের এখানকার বেড়ে উঠা নব প্রজন্মের সন্তানদের সামনে ও বৃটিশ এবং ওয়েলস নাগরিকবৃন্দকে আমাদের ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, সাফল্য সম্ভাবনা ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এবং বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নয়নের ও সম্ভাবনাময় বিনিয়োগের চিত্র তুলে ধরতে হবে বলে বক্তারা অভিমত ব্যাক্ত করেন।
এদিকে ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাংগুয়েজ মনুমেন্ট তথা শহীদ মিনার ফাউন্ডার ট্রাস্ট কমিটির চেয়ারম্যান আনোয়ার আলী ও ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাংগুয়েজ মনুমেন্ট তথা শহীদ মিনার ফাউন্ডার ট্রাস্ট কমিটির জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ মকিস মনসুর সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতাকারী ও দু’দিনের ঐতিহাসিক এই প্রোগ্রামে উপস্থিত সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান।