রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধর্মান্তরিত স্ত্রীর ‘ষড়যন্ত্রমূলক মামলা’ থেকে নিষ্কৃতি চান বালাগঞ্জের সিরাজুল ইসলাম



ধর্মান্তরিত এক নারীকে বিয়ে করে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতিসহ একাধিক মামলার আসামী হয়ে মারাত্মক হয়রানীর মধ্যে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন বালাগঞ্জের মো. সিরাজুল ইসলাম। মো. সিরাজুল ইসলামের অভিযোগ প্রায় দেড় বছরের বিবাহিত জীবনে স্ত্রী আয়েশা আক্তার (বর্ণালী সরকার বন্যা) ও শাশুড়ি অঞ্জনা রাণী সরকার সাড়ে ১৩লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। টাকা ফেরত চেয়ে বিভিন্ন সময়ে সালিশ বৈঠক করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে মো. সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত ও চেক ডিজওনারের অভিযোগে স্ত্রী আয়েশা আক্তার (বর্ণালী সরকার বন্যা) ও শাশুড়ি অঞ্জনা রাণী সরকারের বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা (বালাগঞ্জ সি.আর মামলা নম্বর ৩০/২০১৯ এবং জালালাবাদ সিআর মামলা নম্বর ৪৮/২০১৯) দায়ের করেছেন। এসব মামলা চলমান থাকা অবস্থায় ইন্টারনেটে ছবি আপলোড ও ধর্ষণের অভিযোগ জানিয়ে স্ত্রী আয়েশা আক্তার (বর্ণালী সরকার বন্যা) আদালতে পৃথক দু’টি আবেদন দাখিল করেছেন।

মো. সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ জানিয়েছেন, তার স্ত্রী ও শাশুড়ি মিলে অর্থ আত্মসাতের পর তাদের ‘মিথ্যা মামলা’য় অভিযুক্ত হয়ে তিনি মারাত্মক হয়রানীর মধ্যে পড়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন।

আদালতে দায়েরকৃত মো. সিরাজুল ইসলামের মামলার বিবরণ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ শহরের উকিলপাড়া আবাসিক এলাকার অনাবিল-৬৪’র বাসিন্দা সুভাষ চন্দ্র সরকারের মেয়ে, বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী বর্ণালী সরকার বন্যা ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে আয়েশা আক্তার নাম ধারণ করে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। একই দিনে বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ান বাজার ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের মৃত মাওলানা ইউছুফ আলীর ছেলে মো. সিরাজুল ইসলামের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বালাগঞ্জের পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে ১লাখ ১টাকা দেন মোহরের বিবাহ রেজিস্ট্রি হয়। বিবাহের পর প্রায় ১বছর পর্যন্ত মো. সিরাজুল ইসলাম ও আয়েশা আক্তার স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পরস্পর মিলেমিশে সাংসারিক জীবন চালিয়ে যান।

এক পর্যায়ে গত বছর ১৩ অক্টোবর গুরুতর সমস্যা ও জরুরী প্রয়োজন দেখিয়ে ৩মাস পর ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করে অঞ্জনা রাণী সরকার জামাতা মো. সিরাজুল ইসলামের কাছ থেকে নগদ সাড়ে ৮লাখ টাকা হাওলাত গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ১৩ ডিসেম্বর সিরাজুল ইসলামের কাছ থেকে তার শাশুড়ি অঞ্জনা রাণী সরকার হাওলাত হিসেবে আরও ৫লাখ টাকা নগদ গ্রহণ করেন। এই টাকা পরিশোধের ব্যাপারে উভয়পক্ষে পৃথক দু’টি চুক্তিনামা সম্পাদন করা হয়। পরবর্তীতে অঞ্জনা রাণী সরকার যমুনা ব্যাংক সিলেট বন্দর বাজার শাখায় তার একাউণ্টের চেক বহি থেকে যথাক্রমে ৫লাখ এবং সাড়ে ৮লাখ টাকার পৃথক দু’টি চেক প্রদান করেন। মো. সিরাজুল ইসলাম এসব চেক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জমা করলেও টাকা উত্তোলন করতে পারেননি। টাকা উত্তোলন করতে না পেরে তিনি তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার ও শাশুড়ি অঞ্জনা রাণী সরকারকে বিবাদী করে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন। (বালাগঞ্জ সি.আর মামলা নম্বর ৩০/২০১৯ এবং জালালাবাদ সিআর মামলা নম্বর ৪৮/২০১৯)।

এদিকে সিরাজুল ইসলামের এসব মামলা চলমান থাকা অবস্থায় তার স্ত্রী আয়েশা আক্তার ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণের তথ্য গোপন রেখে তার পূর্বের নাম বর্ণালী সরকার হিসেবে মো. সিরাজুল ইসলামকে বিবাদী করে পৃথক অভিযোগ আদালতে দাখিল করেছেন। ইন্টানেটে ছবি আপলোড ও ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত পৃথক পৃথক এসব আবেদন (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, সিলেট (নারী ও শিশু মামলা নং ৫২৭/২০১৯ এবং বালাগঞ্জ সিআর-৪০/২০১৯) চলমান রয়েছে। এর মধ্যে বালাগঞ্জ সিআর-৪০/২০১৯ মামলায় অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম এবং অপর অভিযুক্ত বালাগঞ্জের শিওরখাল গ্রামের লিমন আহমদ হাইকোর্ট থেকে গত ২১মে আগাম জামিন লাভ করেছেন।

এ বিষয়ে আলাপকালে আয়েশা আক্তারের স্বামী বালাগঞ্জ উপজেলার জামালপুর গ্রামের মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, তার স্ত্রী একজন নওমুসলিম হিসেবে তার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সরল বিশ্বাসে তিনি তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু বিবাহের কয়েক মাস পর থেকেই তার স্ত্রী ও শাশুড়ি মিলে নানা
ভাবে অর্থ আত্মসাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। এসব বিষয়ে প্রথমে তিনি বুঝে উঠতে না পারায় তারা মা, মেয়ে মিলে হাওলাতের নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পরবর্তীতে টাকা ফেরত চাইলে পাল্টা নানা অযুহাতে সময়ক্ষেপ করে। তিনি বাধ্য হয়ে তার স্ত্রী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। তার দায়েরকৃত মামলার সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী পিবিআই কর্মকর্তা ইতোমধ্যে মামলার তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেছেন।

সিরাজুল ইসলাম জানান, তদন্ত রিপোর্টে আয়শা আক্তার একজন নওমুসলিম ও আমার স্ত্রী থাকা এবং অঞ্জনা রাণী সরকার কর্তৃক চুক্তিনামার মাধ্যমে অর্থগ্রহণ, তার প্রদত্ত চেক ডিজওনার বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এত কিছুর পরও ‘ মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক মামলা’ দিয়ে আমাকে হয়রানী করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মামলা থেকে নিস্কৃতি চাই এবং যারা আমার অর্থ আত্মসাত করেছে তাদের শাস্তি চাই’।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!