অসুস্থতার কারণে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে না পারলেও মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, এনবিআর চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর নিজেই সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এ সময় সরকারপ্রধান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের শহীদ সদস্য ও ১৫ আগস্টে অন্য শহীদদের স্মরণ করেন।
প্রস্তাবিত বাজেটকে ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বাজেট আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বাজেট জনকল্যাণমূলক। আমাদের সরকারের বিগত দুই মেয়াদে ১০ বছরে যে অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে তার কারণে আমাদের প্রতি জনগণের আস্থা বেড়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের মাধ্যমে তার প্রতিফলন ঘটেছে।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থ পাচার ঠেকাতে এবং বিনিয়োগের স্বার্থেই প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। অনেকের হাতেই কালো টাকা রয়েছে। সেগুলো কে কোথায় গুঁজে রেখেছেন তা আমরা সব সময় জানতে পারি না। কিন্তু পরবর্তীতে সে টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যায়। এই পাচার ঠেকিয়ে ওই অর্থ অর্থনীতির মূল ধারায় নিয়ে আসতেই এ সুযোগ দেয়া হয়েছে।
তিন কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কর্মসংস্থান তৈরির কথা বলেছি, চাকরি দেয়ার কথা বলিনি। তরুণদের জন্য ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রেখেছি, প্রযুক্তিগত শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নের কথা বলেছি। আমরা চাই, প্রশিক্ষণ নিয়ে তরুণরা শিক্ষিত হয়ে নিজের কাজ নিজে করা শুরু করুক। মূলত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আছে বলেই ধান কাটার লোক পাওয়া যায় না। আমরা কর্মসংস্থানের কথা বললেই অনেকে চাকরির কথা বলেন। ১৬ কোটি মানুষকে কি চাকরি দেয়া যায়? কোনো দেশ কি দেয়? মানুষ যেন কাজ করে খেতে পারে, সেই সুযোগটি তৈরি করতে হবে।
বাজেট নিয়ে সিপিডির পর্যালোচনার জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দেশে কিছু লোক থাকে, যাদের একটা মানসিক অসুস্থতা থাকে, তাদের কিছুই ভালো লাগে না। আপনি যত ভালো কাজই করেন, তারা ভালো কিছু খুঁজে পায় না। যখন দেশে একটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি থাকে, যখন দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়, সাধারণ মানুষের উন্নতি হয়, তখন তারা কোনোকিছুই ভালো দেখে না। সব কিছুতেই কিন্তু খোঁজে। সিপিডি কী গবেষণা করে, তারা দেশের জন্য কী আনতে পেরেছে- পাল্টা প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারপরও তাদের একটা কিছু বলতে হবে। এত সমালোচনা করেও আবার বলবে- আমরা কথা বলতে পারি না। এ রোগটাও কিন্তু আছে। এটা অনেকটা অসুস্থতার মতো।
তিনি বলেন, আমরা যা করছি, তার সুফলটা কিন্তু মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে। আর এই ভালো না লাগা পার্টি যারা, তাদের কোনো কিছুতেই ভালো লাগবে না। একটা গল্প আছে না, পড়াশোনা করছে ছেলে, পাস করবে না; পাস করার পরে বলল চাকরি পাবে না; চাকরি পাওয়ার পর বলল বেতন পাবে না; বেতন পাওয়ার পরে বলল বেতনের টাকায় চলবে না। তো ওনাদের সেই অসুস্থতা।
কৃষকের ধানের ন্যায্যমূল্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধানের গুদাম নির্মাণ হচ্ছে। প্রায় চার লাখ টন ধান কেনা হবে। কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হয়। কৃষকদের নিজেদের অল্প অর্থই ব্যয় হয়। বলতে গেলে সরকারই সবচেয়ে বেশি অর্থ দিয়ে থাকে। কৃষককে সব রকমের সুযোগ-সুবিধা আমরা দিয়ে থাকি। আর দিচ্ছি বলেই এত ধান উৎপাদন হয়েছে। প্রণোদনা না দিলে অতীতের মতো এখনো উৎপাদন এত হতো না। কৃষকদের দেখা আমাদের দায়িত্ব। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, বিশ্বে ধান উৎপাদনে চতুর্থ।
ব্যাংক ঋণের সুদের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সব সময় চেষ্টা করেছি যেন ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে থাকে। এজন্য কিছু সুযোগ করে দিয়েছি। কিন্তু অনেক বেসরকারি ব্যাংক সেটা মানেনি। এবার বাজেটে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঋণের সুদ সিঙ্গেল ডিজিটে হলে বিনিয়োগ বাড়বে। কারণ এত বেশি চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বাড়তে থাকলে মানুষ ব্যবসা করতে পারে না। এজন্য আইন সংশোধন করতে হবে, সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।
খেলাপি ঋণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পত্রিকা বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মালিকদের কত টাকা খেলাপিঋণ আছে, তার একটি হিসাব নেয়া হবে এবং তাদের টাকাটা শোধ দিয়ে তাদের পত্রিকায় লেখেন, এটি আমার অনুরোধ থাকবে।