শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেটে দুই দিন ব্যাপী গাঙচিল বিভাগীয় সাহিত্য সম্মেলন সম্পন্ন



নিসর্গের নান্দনিক ছায়াঘন সবুজ চা-বাগান ঘেরা বন-পাহাড়ী পুরনো মুলুক শ্রীহট্ট জুড়ে কামেল পীর-আওলীয়া গাউস-কুতুব স্থিত আধুনিক বিভাগীয় শহর সিলেট এবং বিরাজমান হাওর-বাওর, সুরমা নদীর পাড় পরিক্রমায় ফোক সম্রাট হাসন রাজা, রাধারমণ, শাহ্ আব্দুল করিম প্রমুখের অবস্থিতিতে কথিত আউল-বাউল লোকগীতি, চারণ সাহিত্যের রাজধানী আধুনিক জেলা শহর সুনামগঞ্জে পরিপাটি আনন্দময় আষাঢ়াঢ্য বরিষণ পরিবেশে সুসম্পন্ন হয়ে গেলো গত ২৮, ২৯ জুন দুই দিন ব্যাপী ‘গাঙচিল’ সিলেট বিভাগীয় সাহিত্য সম্মেলন-২০১৯।

বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর থেকে গাঙচিল কবি সাহিত্যিকগণ উক্ত অনুষ্ঠানে যোগদেন। রাজধানী ঢাকা থেকে আসেন প্রধান অতিথি গাঙচিল কেন্দ্রীয় কমিটির কো-চেয়ারম্যান, সনামধন্য গীতিকার, গবেষক প্রাকৃতজ শামীমরুমি টিটন, প্রধান আলোচক আন্তর্জতিক খ্যাতিসম্পন্ন কবি, সাহিত্য সমালোচক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান খান, এ ছাড়া স্বরচিত কবিতা পাঠ ও আলোচনা করেন ঢাকা মহানগর শাখার সহকারী সমন্বয়ক কবি মাতবর রফিক, কবি এ্যাডঃ সুবীর কুমার রাহুত, ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক কবি শাহী সবুর, খুলনা থেকে আগত গাঙচিল কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সমন্বয়ক ও কবি সৈয়দ আশরাফ, কবি শাহেদ ফারসী, গাঙচিল মাগুরা শাখার সভাপতি কবি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা পরেশ কান্তি সাহা, কবি পত্নী অর্পণা সাহা, কবি তপন কুমার তপু প্রমুখ।

২৮ জুন, ২০১৯ শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যে ৬টা পর্যন্ত সিলেট প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মুসলিম সাহিত্য কেন্দ্রে প্রাণোচ্ছ্বল আন্তরিক পরিবেশে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাঙচিল সিলেট বিভাগীয় সভাপতি কবি আব্দুল ওয়াহিদ এবং আলোচনা করেন পয়েটস ক্লাবের সভাপতি কবি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী সহ স্থানীয় কবিগণ স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন।

২৯ জুন, ২০১৯ শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জ টাউনে অবস্থিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরীর দোতলায় হল রুমে সারা দিনব্যাপী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাঙচিল সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি কবি ওবায়দুল হক মুন্সী, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কবি জীবন কৃষ্ণ সরকার সঞ্চালনার দায়ীত্ব পালন করেন এবং স্থানীয় কবিগণ স্বরচিত কবিতা পাঠ ও আলোচনা করেন।

বিশেষ আসনে সমাসীন ছিলেন গাঙচিল সিলেট বিভাগীয় সভাপতি কবি আব্দুল ওয়াহিদ, সুনামগঞ্জের উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডঃ আবুল হোসেন, জেলা কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল চৌধুরী পাবেল, কবি ও গীতিকার শেখ এমএ ওয়ারিশ, সাংবাদিক ও গল্পকার শামসুল কাদির মেজবাহ্, কবি অজয় রায়, প্রভাষক ও লেখক মশিউর রহমান, কবি সিবেন দাস, কবি শেখ এমএ জাকারিয়া, কবি এমদাদুর রহমান, সাংবাদিক ও সংগঠক জাকির হোসেন রাজু, কবি আনোয়ারা খাতুন, আসাদুল্লাহ্ সরকার প্রমুখ।
সম্মেলনে ঢাকা, খুলনা,মাগুরা,সিলেট, সুনামগঞ্জসহ দেশের বাইরেও বসবাসরত প্রবাসী কবিগণ অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে গাংচিল প্রকাশিত চারটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়:-
*ওবায়দুল হক মুন্সী সম্পাদিত- “সুনামগঞ্জ গাংচিল কন্ঠ”,
*আনোয়ারা খাতুন সম্পাদিত- “আলোকচিত্রে সুনামগঞ্জ গাংচিল”
* ধীরেন্দ্র কুমার দেবনাথ শ্যামল সম্পাদিত- “নব ঝংকার বিশ্বম্ভরপুর গাংচিল কন্ঠ” ও
*আমেরিকা প্রবাসী সুনামগঞ্জের গীতিকবি রইস রহমানের রচিত গীতিকাব্য- “আকাশ গাঙ্গে চাঁদের বাড়ি”।

বিভিন্ন বিষয়ে অবদানের জন্য গাঙচিল কেন্দ্রীয় শাখা একাধিক ব্যাক্তিগণকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করে।

এছাড়াও গাঙচিল জেলা শাখা কর্তৃক আয়োজিত শিশু-কিশোরদের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বিভাগ ও শাখায় বিজয়ী ১১০ জনকে আকর্ষণীয় ফলক, মূল্যবান বই ও উন্নত সনদপত্র প্রদান করা হয়।
গাংচিল এ পর্যন্ত ১০৮৫ টি বই প্রকাশ করেছে।

সকালে অতিথিগণ মরমী সাধক গীতিকার হাসন রাজার মিউজিয়ামসহ আবাসস্থল পরিদর্শন করেন এবং হাসন রাজার দৌহিত্র থেকে দীর্ঘ সময় ধরে হাসন রাজার জীবনালেখ্য জানেন। তারপর সুনামগঞ্জ গাঙচিল, থেকে অতিথিদের সম্মানে ‘পানসী’ হোটেলে মধ্যাহ্ন ভোজ দেওয়া হয়।

পুরো দুই দিন ব্যাপী সম্মেলনের সার্বিক পরিচালনা, পরিবেশনা, ব্যবস্থাপনা, তত্ত্বাবধায়ন এবং পর্যবেক্ষণে ছিলেন গাঙচিল প্রাণপুরুষ গাঙচিল কেন্দ্রীয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবি অধ্যক্ষ খান আখতার হোসেন, তার হাত দিয়ে গাঙচিল কেন্দ্রীয় কোষাগার থেকে সুনামগঞ্জ ও সিলেট গাঙচিলকে সফল সম্মেলন উজ্জাপনের জন্য যথাক্রমে ১০,০০০/- টাকা ও ৫,০০০/- টাকা অনুদান দেন। সম্মেলন থেকে উপস্থিত শিশু-কিশোর ছেলমেয়েরা কবি খান আখতার হোসেনকে ভূয়সী প্রশংসাকরে “গাঙচিল দাদু” ভাই উপধিতে ভূষিত করে। কবি আবু সুফিয়ান খান এই উপধির উপর বিষদ আলোচনা করে সর্বান্তকরণে সমর্থন জানান এবং সুনামগঞ্জে গাঙচিলের একটি স্থায়ী অফিস ঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানায়,যেখানে লেখকরা নিয়মিত সাহিত্য চর্চা ও সাহিত্য আসর করতে পারবে এবং সুনামগঞ্জকে লোকসাহিত্যের রাজধানী ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করার জন্য গাঙচিল থেকে প্রস্তাবাকারে সরকারের কাছে পেশকরার জন্য অনুোধ করে বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথি গাঙচিল কেন্দ্রীয় কমিটির কো-চেয়ারম্যান, সনামধন্য গীতিকার, গবেষক প্রাকৃতজ শামীমরুমি টিটন, তার আলোচনায় সকলকে পরস্পরের প্রতি “ভালোবাসা” বিনিময় করার অনুরোধ জানান।

দুইদিনের সম্মেলনে অতিথি, দর্শক, শ্রোতা, শুভানুধ্যায়ী সবাই সিলেট ও সুনামগঞ্জ গাঙচিল প্রতি অভাবনীয় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

সকলের সুস্বাস্থ্য, সুন্দর জীবন ও সার্বিক মঙ্গল কামনা করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!