বালাগঞ্জে আকস্মিক বন্যায় উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন-ই কমবেশি প্লাবিত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার লোকসহ ১৩শ পরিবার পানিবন্দি বলে জানা গেছে। টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন জায়গার মত বালাগঞ্জেও বন্যার এ প্রকোপ দেখা দেওয়ায় উপজেলা প্রশাসন থেকে কন্ট্রল রুম খোলা হয়েছে।
টানা বৃষ্টিপাতের কারণে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। যার ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষজন পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে কুশিয়ারা নদীর তীরঘেঁষা বালাগঞ্জ সদরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সম্মুখের রাস্তা, বাজারের ভেতরের রাস্তা, বালাগঞ্জ সরকারি ডিএন উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ, তয়রুন নেছা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ভেতর, প্রবেশের রাস্তা ও মাঠ, উপজেলা প্রশাসনের মূল সড়ক ও উপজেলা প্রশাসনের মাঠ পানিতে ডুবে গেছে এবং উপজেলা প্রশাসনিক ভবনের নিচতলার অফিসগুলোর ভেতরে পানি প্রবেশ করেছে। সেই সাথে দেখা দিয়েছে পানিবাহীত নানা রোগ। যার ফলে বন্যা আক্রান্ত এলাকাগুলোতে স্বাস্থ্য ঝুঁকির প্রভাব পড়েছে।
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বললে পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন জানান, কুশিয়ারা ডাইকের প্রায় পনের জায়গায় ভাঙ্গন দেখে দিয়েছে। যার প্রভাবে ১৩গ্রাম প্লাবিত হয়ে ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বালাগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মোঃ জুনেদ মিয়া বলেন, বাজারের একাধিক স্থানে পানি উঠে যাওয়ায় ব্যবসায়িরা চরম দুর্ভোগে রয়েছেন প্রশাসনের পাশাপাশি বিত্তশালীরা বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি আহ্বান জানান।
বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও বোয়ালজুড় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আনহার মিয়া বলেন, উপজেলার সর্বত্র বন্যা দেখা দিয়েছে। ইউনিয়নের ছোটবড় কাচা রাস্তাগুলো তলিয়ে গেছে। আউশ ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলা প্রকৌশলী এস আর এম জি কিবরিয়া বলেন, ছোটখাটো রাস্তা ছাড়াও ফেঞ্চুগঞ্জ – বালাগঞ্জ রাস্তার ডাইকের বাজার ও খছরুপুর টু বালাগঞ্জ রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে।
বালাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মফুর বলেন, শেরপুর থেকে বালাগঞ্জ বাজারের কুশিয়ারা ডাইকের ভাঙ্গনে হামছাপুর, জালালপুর, গালিমপুর গ্রামের বন্যা প্রতিরোধক বাধেঁর ভাটপাড়া, পৈলনপুর, ফাজিলপুর, পূর্ব ইছাপুর এ সকল স্থানে ডাইকের বাঁধ ভেঙে পানি ভিতরে প্রবেশ করছে। সেই সঙ্গে বালাগঞ্জের সাথে পূর্ব পৈলনপুরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। একিসাথে ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে বালাগঞ্জ রোডের ডাইকের বাজার সংলগ্ন রাস্তা ফাটল দেখা দেয়ায় ঝুকিপূর্ণ ভাবে গাড়ি চলাচল করছে। উপজেলার ৯টি প্রাইমারি ও ৪টি মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে ইতোমধ্যে। গালিমপুর হাইস্কুল ও পূর্ব পৈলনপুর হাইস্কুলে বন্যার্ত মানুষজন আশ্রয় নিয়েছেন এবং পূর্ব গৌরীপুর বি কে এম হাই স্কুলে মানুষ আসতে শুরু করেছেন। প্রশাসনিক ভাবে ৫টন চাল ও ১০০ প্যাকেটশুকনো খাবার হাতে এসে পৌঁছেছে। কন্ট্রল রুম খোলা হয়েছে।
বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাজমুস সাকিব জানান, সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভা করা হয়েছে। যাতে ত্রাণ সামগ্রী দূর্গত এলাকায় দ্রুত পৌছানো যায়। সেই সাথে বন্যা মোকাবেলায় আমরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি।
এদিকে, গত ১৫ জুলাই (সোমবার) বালাগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক বিশেষ সভা উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মোস্তাকুর রহমান মফুরের সভাপতিত্বে ও উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা প্রীতি ভুষন দাসের সঞ্চালনায় এ সভায় অংশ নেন – উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাজমুস সাকিব, অফিসার ইনচার্জ গাজী আতাউর রহমান, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ হেলাল উদ্দিন, উপজেলা প্রকৌশলী এস আর জি এম কিবরিয়া, বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বোয়ালজুড় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আনহার মিয়া, পূর্বগৌরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান হিমাংশু রঞ্জন দাস, পূর্ব পৈলনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মতিন, পশ্চিম গৌরি পুর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আমিরুল ইসলাম মধু, দেওয়ান বাজার ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম নজম, বালাগঞ্জ সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মুনিম সহ কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ। সভায় বন্যায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।