শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বহু আগে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ব্রিটিশ আমলের মসজিদ, এখন

বালাগঞ্জের স্থানান্তরিত মসজিদটিও কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনের কবলে!



সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী বালাগঞ্জ উপজেলা সদরের ব্রিটিশ আমলের মসজিদ। ইতোমধ্যে ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে স্থানান্তরিত বর্তমান মসজিদটিও।

বর্তমান বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ এবং রাজনগর উপজেলা নিয়ে ১৮৮২ সালে বালাগঞ্জ থানা গঠিত হয়। ১৯২২ সালে বর্তমান বালাগঞ্জ উপজেলা এলাকা নিয়ে বালাগঞ্জ থানা পুনর্গঠিত হয়। পরবর্তীতে ৭ নভেম্বর, ১৯৮২ খ্রিঃ তারিখে বালাগঞ্জ থানা আপগ্রেডেড হয় এবং বালাগঞ্জ উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।
১৮৮২ সালের যেকোনো এক সময় কুশিয়ারা নদীর তীরে (বর্তমান কুশিয়ারা নদীর পুরাতন থানাস্থ বিলিন হয়ে যাওয়া নদীর স্থানে) উপজেলা সদরের একমাত্র এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঘড়গাও গ্রামের মরহুম আলীম উদ্দিন। এই মসজিদে আরবসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বণিকরা নামাজ আদায় করতেন বলে এলাকার প্রবীণ মুসল্লীদের কাছ থেকে জানা গেছে। মসজিদটি প্রতিষ্ঠার কয়েক বছরের মধ্যেই ভয়াল কুশিয়ারা পেটে চলে যায়।

পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে বর্তমান ভূমিতে স্থানান্তরিত করা হয় বর্তমান মসজিদ। কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাকালীন ইমাম মরহুম মাওলানা জামীল আহমদ সাহেবের ছেলে মাওলানা হুসাইন আহমদ মিসবাহ’র সূত্রে জানা যায় যে, বর্তমান মসজিদের পুরো জায়গা একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী ব্যাক্তির কাছ থেকে ক্রয় করা, এলাকাবাসীসহ দেশি-বিদেশী মুসলমানদের অর্থায়নে প্রায় ৩ বছরে মসজিদটির নির্মান কাজ সমাপ্ত হয়। সে সময় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন মরহুম আফতাব উদ্দিন চেয়ারম্যান।

মসজিদের অজুখানা, অজুখানার উপর তলায় ইমাম মুয়াজ্জিনের থাকার রুম, অবশিষ্ট প্রস্রাবখানায় মারাত্বক ফাটল দেখা দিয়েছে। পানি কমার সাথে সাথে যেকোনো মুহুর্তে ভেঙ্গে পড়তে পারে এই স্থাপনাগুলো। মুসল্লীরা ঝুঁকি নিয়ে প্রস্রাব, উজু করে নামাজ আদায় করছেন। গতবছরও মুসল্লিদের চোখের সামনে নিমিষেই মসজিদের টয়লেট প্রস্রাবখানা, গাছগাছালি,পুরাতন থানার স্থাপনা সহ নদীর বুকে চলে যায়।

মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল লতিফ জানান, শুনছিলাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষার জন্য কাজ করবে, কিন্তু এখনো করেনি।
মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি আব্দুল মতিন, বর্তমান ইমাম মাওলানা ছাদ উদ্দিন, মুসল্লী আব্দুর রশিদসহ স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, নদী প্রায় যায়গায় ভরাট হওয়া কারণে উজান থেকে আশা পাহাড়ী ঢলের পানি সংকুলান নাও হওয়াতে তীব্র স্রোতের ফলে নদীর পানির গতিপথ পরিবর্তন হয় যার ফলে প্রতিবছর ভাঙ্গন দেখা দেয়। ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে পুরাতন থানা সহ বাজারে অসংখ্য দোকানপাট। মসজিদ কমিটি সহ এলাকাবাসী ভাঙ্গন রোধে দ্রুত নদী খনন ও প্রতিরক্ষা স্থায়ীভাবে ব্লক নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন। এই মসজিদসহ আরো ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে পুরাতন থানাসহ বাজারে অসংখ্য দোকানপাট। এলাকাবাসী ভাঙ্গন রোধে দ্রুত নদী খনন ও প্রতিরক্ষা স্থায়ীভাবে ব্লক নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন। নদীর তীরের এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

এব্যাপারে জানতে চাইলে মসজিদের নিয়মিত মুসল্লী, বালাগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মোঃ জুনেদ মিয়া বলেন, শুনেছি পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে পুর্বগৌরীপুর ইউনিয়নের আমজুড় এলাকায় নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য অস্থায়ীভাবে কাজ চলছে। এদিকেও কাজ করার কথা রয়েছে। স্থায়ীভাবে পুরাপুরি ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা পেতে বালাগঞ্জ জামে মসজিদ, পুরাতন থানা, বালাগঞ্জ বাজার সহ ভাঙ্গন কবলিত সংশ্লিষ্ট এলাকায় ব্লক নির্মাণ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মুনিম জানান, বালাগঞ্জ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সহ নদীর তীরবর্তী এলাকা মারাত্মক ঝুকির সম্মুখীন। দ্রুত জামে মসজিদ সহ ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় প্রতিরক্ষার ব্যাবস্থা করার জন্য সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহবান জানাচ্ছি।
এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট অফিসে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলে ফোন রিসিভ করেননি।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!