আগামী ১২ ডিসেম্বর ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচন। গত মঙ্গলবার সরকারের তোলা আগাম নির্বাচনের প্রস্তাবে বিরোধী দলগুলো সায় দিলে এই মধ্যবর্তী নির্বাচনের পথ সুগম হয়। তবে ব্রিটেনে যে আবারও একটি আগাম নির্বাচন হতে যাচ্ছে তার আভাস ইতোপূর্বে রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন কর্মকান্ডে সাধারণ জনগণ ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারছিলেন। বিশেষ করে সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলগুলোর আগাম প্রার্থী নির্বাচন জোরেশোরে জানান দিচ্ছিল ব্রিটেনে আরেকটি আগাম নির্বাচন সন্নিকটে।
ব্রিটেনের এই আগাম নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অন্যান্য অনেক আসনের মতো ইতোমধ্যে ‘পপলার এণ্ড লাইম হাউজ’ আসনের লেবার পার্টির প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। যে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে হাস্টিংস বলা হয়ে থাকে। আরো সহজ ভাবে বললে হাস্টিংস হলো নিজ দলের স্থানীয় মেম্বারদের ভোটাভুটিতে জয়লাভ করে পার্টির মনোনয়ন লাভের প্রক্রিয়া। গত ২৭ অক্টোবর লেবার পার্টি আয়োজিত এ হাস্টিংসয়ে বিজয়ের মাধ্যমে আপসানা বেগম এমপি হওয়ার জন্য সম্পুর্ণরুপে নিশ্চিত হলেন। নিশ্চিত একারণে বলা হচ্ছে এই আসন লেবার আসন বলে পরিচিত এই কারণে। যে কারণে আপসানার এ বিজয় নিয়ে বাঙ্গালিদের মধ্যে ব্যাপক হৈচৈ হচ্ছে। সবারই ধারণা প্রার্থী মনোনয়ের এই নির্বাচনের পর তাঁকে আর সাধারণ নির্বাচনে তেমন বেগ পেতে হবে না। কারণ এখানে অন্য দলের অবস্থান খুবই দুর্বল। বিগত কয়েক দশক থেকেই উক্ত আসনে লেবার দলের এমপি নিয়মিত নির্বাচিত হয়ে আসছেন। এখানে বলে নেয়া ভাল যে, এ দেশে তেমন কোন বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া কোন দলের নিরাপদ আসনগুলির জনপ্রতিনিধি পরিবর্তন হয় না।
সবাই জানেন যে, অনেক সময় ফাইনাল খেলার চাইতে সেমিফাইনাল খেলা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। এ নির্বাচনী খেলাটাও ছিল প্রায় সে রকম। এখানে জিততে না পারলে সম্ভাব্য এমিপ আপসানার পরবর্তী পর্যায়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। তাছাড়া বাঙালিদের রাজধানী বলে খ্যাত টাওয়ার হ্যামলেটস এর ‘পপলার এণ্ড লাইম হাউজ’ এবং ‘বেথনালগ্রীন এণ্ড বো’ আসন দুটি একেবারেই পাশাপাশি। অনেকটা বাংলাদেশের রাজধানীর দুটি সিটি কর্পোরেশন যথা ‘ঢাকা উত্তর’ ও ‘ঢাকা দক্ষিণ’ এর মত। বেথনালগ্রীন এণ্ড বো আসনের এমপি হচ্ছেন আরেক বাঙালি এমপি রুশনারা আলী। তাই স্বাভাবিক ভাবেই এর একটা প্রভাব থাকতেই পারে।
সর্বশেষ কথা হলো সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া আপসানার পক্ষে সবাই কাজ করেছেন। তাই আগামী সাধারণ নির্বাচনে সবাই সহযোগিতা করলে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আপসানা বেগম হবেন রুশনারা, টিউলিপ ও রুপার পর চতুর্থ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি। আমি নিজেও এ এলাকার একজন ভোটার এবং একই সাথে লেবার পার্টিরও মেম্বার।
উল্লেখ্য, নিয়ম অনুযায়ী দেশটিতে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু গত পাঁচ বছরের কম সময়ে দেশটিতে এটি তৃতীয় সাধারণ নির্বাচন। আর গত ১০০ বছরের ইতিহাসে ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের দ্বিতীয় ঘটনা।