মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগসমূহ তদন্তের অনুমতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারকরা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রি ট্রায়াল চেম্বার-৩ ঘটনার শিকার অসংখ্য মানুষের পক্ষ থেকে আসা অভিযোগ পেয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
আইসিসির রেজিস্ট্রি অনুযায়ী নির্যাতনের শিকার হওয়া বিভিন্ন ব্যক্তি সর্বসম্মতভাবে তদন্ত শুরু করার দাবি করেছেন। চেম্বারের বক্তব্য হলো যে আদালত সদস্য দেশের ভূখণ্ডে কোনো অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে হওয়া অপরাধ এখতিয়ার ভুক্ত হিসেবে বিবেচনা করতে পারে।
যদিও মিয়ানমার সদস্য দেশ নয়, তবে বাংলাদেশ আইসিসি রোম সনদ ২০১০ সালে অনুস্বাক্ষর করেছে। আর প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে আদালত মনে করেছে যে এটা বিশ্বাস করার কারণ আছে যে ব্যাপক ভিত্তিক সহিংসতা হয়েছে যার কারণে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জোরপূর্বক দেশত্যাগের মতো ঘটনা মানবতা বিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যেখানে বহু মানুষ ঘটনার শিকার তার ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে চেম্বার মনে করে পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। তথ্য প্রমাণ অনুযায়ী প্রায় ছয় লাখ থেকে দশ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম মিয়ানমার থেকে বাস্তুহারা হয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে গেছে এমন জবরদস্তিমূলক কার্যক্রমের কারণেই।
এর ধারাবাহিকতায় এমন অপরাধ বা ভবিষ্যতেও হতে পারে এমন অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আদালত তদন্ত শুরুর অনুমতি দিয়েছ। রোম সনদের নীতিমালা অনুযায়ী ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই আদালত বিচারের মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারে। এমনকি গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করতে পারে সংস্থাটি। তবে এর নিজস্ব কোনো বাহিনী না থাকায় অভিযুক্তদের আটক বা গ্রেপ্তার করতে বা দণ্ড কার্যকর করতে পারে না। এ জন্য তারা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র ও অন্যান্য রাষ্ট্রকে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের আহ্বান জানায়।
এর আগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে মিয়ানমারের বিচারের এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আছে বলে সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছিলো।
এ বছরের মার্চে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর ফাতো বেনসুদা, স্ব-উদ্যোগে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর জুলাই মাসের চার তারিখে রোহিঙ্গাদের ওপর যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা তা নিয়ে তদন্ত শুরু করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইসিসির অনুমতি চান প্রসিকিউটর ফাতো বেনসুদা।এদিকে, আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরুর অনুমোদন পাবার পর আইসিসির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রসিকিউটর বেনসুদা।