সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতল পাটির বালাগঞ্জে স্বাগতম: সদ্য নির্মিত নান্দনিক ফলকের সর্বত্র চলছে প্রশংসা



সম্প্রতি সময়ে ঐতিহ্যবাহী শীতল পাটির জন্য বিখ্যাত বালাগঞ্জ উপজেলার প্রবেশ মুখ বোয়ালজুড় ইউনিয়নের রাজাপুরে (বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর সীমানায়) উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে নান্দনিক একটি ফলক নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মিত নান্দনিক এ ফলকটির পরিকল্পনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাজমুস সাকিব। তাঁর পরিকল্পনায় নির্মিত এই ফলকটির ছবি ফেসবুকে আপলোড হওয়ার সাথে সাথে সর্বত্র প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছে। ফলকটি নির্মাণে ২ লক্ষ ৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানা গেছে। এবং ফলকটি বালাগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী মোস্তাকুর রহমান মফুর আগামী ৫ ডিসেম্বর উদ্বোধন করবেন বলে ও জানা গেছে।

নান্দনিক এ ফলক সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাজমুস সাকিব বলেন, শীতলপাটির আদি স্থানের একটি জায়গা হচ্ছে বালাগঞ্জ। আর ইতোমধ্যে ইউনেস্কো এ শীতল পাটিকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নিবর্স্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ‌্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে বিশ্বের দরবারে সম্মান সূচক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। তাছাড়া এই অঞ্চলের বুনন শিল্পীদের তৈরি শীতলপাটি ব্রিটেনের রাণী ভিক্টোরিয়ার প্রাসাদে স্থান পেয়েছে। এবং বালাগঞ্জের শিল্পীদের তৈরি শীলপাটি বিশ্বের বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছে। তাই এই অঞ্চলের ঐতিহ্যের সাথে মিল রেখে এই ফলকটি স্থাপনার কথা আমি পরিকল্পনায় আনি। এই ফলকটি স্থাপনার পর সবাই এত খুশি হয়েছেন তা জেনে আমার খুবই ভালো লাগছে।

উল্লেখ্য, বালাগঞ্জ উপজেলার ‘শীতলপাটী’ উৎপাদন ও বাজারজাত করণের গৌরবময় ঐতিহ্য রয়েছে। দেশে ও দেশের বাইরে এ শীতলপাটী সমভাবে সমাদৃত।বালাগঞ্জ উপজেলার গৌরীপুরের শিল্পীদের তৈরী একটি শীতলপাটী ব্রিটেনের রাণী ভিক্টোরিয়া’র প্রাসাদে স্থান পেয়েছিল। ১৯০৬ সালে কলকাতায় আয়োজিত শিল্প প্রদর্শনীতে শীতলপাটীর জন্য জদুরাম দাস স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৮২ সালে শীতলপাটী তৈরীর জন্য জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ কুটীর শিল্পী হিসেবে পুরষ্কার জিতে নেন বাবু পবনজয় দাস। ইতালি’র রোমে ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত কুটীরশিল্প প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের মনীন্দ্র নাথের উপস্থাপিত শীতলপাটী পুরষ্কার লাভ করে। বিভিন্ন ডিজাইন এবং বুননের বৈচিত্রের জন্য শীতলপাটী সর্বত্র সমাদৃত এবং একসময় এ কে বিশ্ববিখ্যাত মসলিন কাপড়ের সাথে তুলনা করা হত। বুননের ধরণ ও বেতের আকৃতির ভিত্তিতে শীতলপাটী বিভিন্ন স্থানীয় নামে পরিচিত, যেমন- সিকি, আধুলি, টাকা, নয়নতারা, আসমানতারা, জোড়াকে-চিরা ইত্যাদি।

এদিকে শীতলপাটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৬ সালে। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে জাতীয় জাদুঘর শীতলপাটিকে তালিকাভুক্ত করতে ইউনেস্কোর কাছে প্রস্তাবনা পাঠায়। সাথে পাঠানো হয় শীতলপাটির বুনন প্রক্রিয়াও। ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর ইউনেস্কোর সংশ্লিষ্ট মূল্যায়ন কমিটি বাংলাদেশের প্রস্তাবটিকে গ্রহণযোগ্য বলে অভিমত দেয়। তারপর দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দ্বীপে ৪ থেকে ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ইউনেস্কোর আন্তসরকার কমিটির (ইন্টারগভর্নমেন্টাল কমিটি ফর দ্য সেফগার্ডিং অব দ্য ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ) ১২তম অধিবেশন। ওই অধিবেশনে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সচিব মোহাম্মদ শওকত নবীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ওই সম্মেলনে অংশ নেয়। প্রতিনিধি দলে সিলেটের বালাগঞ্জের শীতলপাটির কারিগর গীতেশচন্দ্র ও হরেন্দ্রকুমার দাশও ছিলেন। ৬ ডিসেম্বর ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা দেয় শীতলপাটিকে। ঘোষণার পরই মঞ্চে একটি শীতলপাটি প্রদর্শন করে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল।

তবে বর্তমানে শীতলপাটির তেমন উৎপাদন আর এ অঞ্চলে না হলেও উপজেলার কোন কোন এলাকায় কিছু কিছু শীতলপাটী উৎপাদিত হচ্ছে। যদিও একসময় ব্যাপকভাবে উৎপাদিত ‘শীতলপাটী’ এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য এলাকায়ও সরবরাহ করা হতো। তবে অত্যন্ত আরামদায়ক ও বৈচিত্রময় এ শীতলপাটী আজও দেশের সর্বত্র সমভাবে সমাদৃত।

 

 

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!