ধলাই নদীতে একটি ব্রিজ নির্মাণ কমলগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। কারণ ধলাই নদীর উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ পৌরসভার সাথে সদর ইউনিয়নের যোগাযোগের সহজ সেতুবন্ধন তৈরি হয়। যাতায়াতে এই এলাকার প্রায় ২৫ হাজার মানুষের দুর্ভোগ লাগব হয়। বর্তমানে এই ২৫ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হচ্ছে একটি বাঁশের সাঁকো। এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে প্রতিবছর খরা মৌসুমে যে বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয় আবার বর্ষা মৌসুমে তা পানিতে তলিয়ে যায়। আর সেই বাঁশের তৈরি সাঁকোর উপর দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, গর্ভবতী মহিলা, অসুস্থ রোগীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিত্য পারাপার হন।
কমলগঞ্জ পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড করিমপুর গোপালনগর খেয়াঘাট হয়ে সদর ইউনিয়নের সাথে এই সড়কের যোগাযোগ। এই সহজ যোগাযোগের একমাত্র বাধা হচ্ছে ধলাই নদী। যেখানে একটি ব্রিজ দেশ স্বাধীনের পর থেকে এলাকাবাসীর প্রাণের দাবির পরেও আজ পর্যন্ত ব্রিজ নির্মাণ তো দূরের কথা কোনো উদ্যোগও নেয়া হয়নি।
রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিকটে এই বাঁশের সাঁকোটির অবস্থান। সড়ই বাড়ি, রামপুর, রামপাশা, সাইয়া খালি, চৈতন্য গঞ্জ, নারায়ণপুর, বনগাঁও, বাদে উবাহাটা গ্রামগুলো ছাড়া ও পৌরসভাসহ ১০ থেকে ২০ টি গ্রামের লোকজন এ সাঁকোটি ব্যবহার করেন। প্রতি বর্ষা মৌসুমে সম্পূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন এ সময় এলাকাবাসী চরম হতাশা ও দুর্ভোগে পড়েন।
গত ৩০ জানুয়ারি রোজ বৃহস্পতিবার সকালের দিকে সরেজমিনে গেলে এ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে নবম শ্রেণীর ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, বৃষ্টির সময় ছাতা ও বই নিয়ে বিপদে থাকি। ছাতা হাতে ধরবো নাকি বই ধরবো, নাকি বাঁশের সাঁকো ধরে ধরে এই জায়গাটি পেরিয়ে যাব।
মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মুমিনা বলেন, সাঁকোটি পারাপার হতে গিয়ে অনেকেরই বই কলম খাতা পানিতে পড়ে ভিজে যায়।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে এই খেয়াঘাটে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানালেও দাবিটি বার বারই উপেক্ষিত।
স্থানীয়রা বাসিন্দাদের সাথে আলাপকালে তাঁরা আরো জানান, বাজারের সদাই দোকানির মাল, কৃষি যন্ত্রপাতি পারাপারে ভোগান্তি হয়। ফসলের বুঝা নিয়ে অতিকষ্টে সাঁকোটি পার হতে হয়। সত্তর ঊর্ধ্ব বয়সের কৃষক আবদুল মনাফ বলেন, গত ৪০ বছরে সাঁকোটি পারাপার হতে গিয়ে কয়েক’শ লোক আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন।
স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা দেওয়ান আব্দুর রহিম মুহিন আলাপকালে এ প্রতিনিধিকে বলেন, এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসনসহ জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান বলেন, এ স্থানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে কমলগঞ্জ পৌরসভার সাথে সদর ইউনিয়নের যোগাযোগের একটি সেতুবন্ধন তৈরি হবে।