মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চিকিৎসক ২১ দিন পর সুস্থ হয়ে পরিবারের কাছে ফিরেছেন



টোলারবাগের আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষের পরিবার তাঁর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানতে পেরেছিলেন ২০ মার্চ। মিরপুরের যে হাসপাতালে তিনি ভর্তি ছিলেন, সেটির চিকিৎসকের জ্বরও এসেছিল ওই দিনই। একদিন পর চিকিৎসক আবু ফয়সাল মো. জাহাঙ্গীর আলম জানতে পারেন তিনিও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।

আজ সোমবার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ২১ দিন চিকিৎসাধীন থেকে সুস্থ এখন। পরিবারের কাছে ফিরেছেন তিনি।

আবু ফয়সাল মো. জাহাঙ্গীর আলম মিডিয়াকে বলেন, ১৭ মার্চ রাত ২টা থেকে ৪টার মধ্যে রোগী হাসপাতালে আসেন। তিনি রাতের পালায় কাজ করছিলেন। রোগীকে তিনিই ভর্তি দেন। তাঁর (রোগীর) খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। শরীরে যেখানে ৯০ শতাংশের ওপর অক্সিজেন থাকার কথা, সেখানে অক্সিজেন ছিল ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, অ্যা\জমাও ছিল।

আবু ফয়সাল জানতে পারেন, আগে তিনি যে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ছিল না। সে কারণেই মিরপুরে তাঁদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। রোগী পক্ষ আইইডিসিআরে ফোন করেছিলেন। ওরা রাজি হচ্ছিল না।

পরে এক্সরে করে চিকিৎসকরা আবারও আইইডিসিআরে খবর দেন। রোগী যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সে খবর তাঁদের ফোনে জানানো হয় ২০ মার্চ। ওই দিনই আবু ফয়সাল মো জাহাঙ্গীর আলমের গায়েও হালকা জ্বর ওঠে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১০১ এর মতো। ২০ মার্চ দিবাগত রাতে রোগী মারা যান। আবু ফয়সালের একটু খটকা লাগে। তিনি আইইডিসিআরকে জ্বরের কথা জানান।

ওই দিনই পরীক্ষার পর সন্ধ্যার দিকে তিনি নিশ্চিত হন, তিনিও আক্রান্ত হয়েছেন।

জ্বর নিয়ে ঘরেই আলাদা ছিলেন। এর মধ্যেই শুরু হয় ডায়রিয়া। ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে আসতে না আসতেই শ্বাসকষ্ট। না শুতে পারেন, না বসতে। শুলে মনে হয় বসলে শ্বাস নিতে পারবেন, বসলে মনে হয় শুলে স্বস্তি হতো। এবার সত্যি ভয় পেয়ে যান আবু ফয়সাল। আইইডিসিআরে যোগাযোগ করলে অ্যাম্বুলেন্স এসে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যায় তাঁকে।

মা, তিনবছরের সন্তান আর স্ত্রীকে পেছনে রেখে আবু ফয়সাল পৌঁছান হাসপাতালে। জরুরি ভিত্তিতে তাঁকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল হয়ে ওঠে। কিন্তু তিনি ছাড়া পাননি। জ্বর বা শ্বাসকষ্ট না থাকলেও ভাইরাস তাঁকে ছেড়ে যায়নি। বারবারই পরীক্ষায় ফল আসছিল একই রকম।

চিকিৎসক আবু ফয়সাল হাসপাতালের যে তলায় ছিলেন, সেখানে আরও ১৫-১৬ জন ছিলেন। চোখের সামনেই দুজনকে তিনি স্থিতিশীল অবস্থা থেকে খারাপ হতে দেখেছেন। তাঁরা গতকাল পর্যন্তও আইসিইউতে ছিলেন।

হাসপাতালে থাকার সময় ভিডিওতে আবু ফয়সাল কথা বলতেন তিন বছরের সন্তানের সঙ্গে। বাবা বাড়ি আসছে না কেন, কবে আসবে এমন প্রশ্নে অস্থির করে তুলত সন্তান। দীর্ঘ হাসপাতালবাসের সময় চোখ রাখতেন খবরাখবরে। সবচেয়ে কষ্ট পেতেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তাঁর প্রতি যে অবহেলা তা দেখে।

আবু ফয়সাল মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মাঝে মাঝে ভয় হতো, আমি মারা গেলে কি আমার মৃতদেহও এভাবে পড়ে থাকবে? কেউ স্পর্শ করবে না?’

নাম প্রকাশ করা যাবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নাম প্রকাশে তাঁর কোনো আপত্তি নেই। যে কেউ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। রোগে আক্রান্ত হওয়া কোনো অপরাধ নয়। রোগী এর জন্য দায়ীও নন।

জাতীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, রোগটিকে ভয় করতে। ভয় না পেলে সচেতনতা আসবে না। যদিও সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চললেই নিজে ও আশপাশের সবাইকে সুস্থ রাখা সম্ভব।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন