করোনাভাইরাসে মুত্যু, দুর্ভোগ, অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি মানুষে মানুষে ব্যবধান বাড়িয়েছে এই ভাইরাস। তবে এত সব কষ্টের মাঝে করোনার ব্যতিক্রমী এক ভালো প্রভাব দেখতে পাচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বাসিন্দারা। করোনাভাইরাস মহামারির এই সময়ে দেশটির সহিংস অপরাধ ৭৫ শতাংশ কমে গেছে। এমনকি কেপটাউনের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাংগুলো অভাবী মানুষের খাবার এবং প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ ও বিতরণ করার জন্য এক জোট হয়েছে, যা একরকম বিরলই বলা যায়।
গুড নিউজ নেটওয়ার্কের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর সদস্যদের সঙ্গে কাজ করা একজন যাজক অ্যান্ডি স্টিল স্মিথ বলছেন, ‘আমরা এখানে যা ঘটতে দেখছি তা আক্ষরিক অর্থে অলৌকিকই বলা যায়।’
মহামারির আগে এই মহাদেশে সহিংসতার হার সবচেয়ে বেশি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। তবে এখন নতুন পরিস্থিতিতে এমন পরিবর্তন হয়েছে, যা একেবারেই আলাদা। এ দেশের সরকার অ্যালকোহল ও সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ করাসহ বিশ্বের সবচেয়ে কঠোর লকডাউন আরোপ করেছে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মারাত্মক আঘাত লেগেছে, যা সমাজের অন্য মানুষের মতো এসব গ্যাংয়ের সদস্যরাও বুঝতে পারছেন।
অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভূত এই যাজক বলেন, ‘দুজন গ্যাং নেতার ফোন পেয়েছিলাম আমি। দুজনেই বলেন, অ্যান্ডি, আমি কখনোই তোমার কাছে কিছু চাইনি, তবে আমরা ক্ষুধার্ত।’ অ্যান্ডি বলেন, ‘আমি কেবল ভাবলাম যে এই ছেলেরা যদি অনাহারে থাকে, যারা খাদ্য-শৃঙ্খল ব্যবস্থার শীর্ষে রয়েছে, তাহলে বাকিরা না জানি কত গুরুতর অবস্থার মধ্যে রয়েছে।’
অ্যান্ডি এমন একটি পরিকল্পনা তৈরি করেলেন, যা এই মুহূর্তে কেবল এই সম্প্রদায়ের প্রয়োজনই পূরণ করবে না, বরং এই তরুণদের বিশ্বের জন্য নতুন উদ্দেশ্যও দেখাবে। তিনি গ্যাংয়ের সদস্যদের জিজ্ঞাসা করলেন, তারা একটি সাধারণ লক্ষ্য নিয়ে একসঙ্গে কাজ করবে কি না। যেমন এই মহামারির সময়ে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় খাবার ও সাবান সরবরাহ করা। এই মানুষগুলো সাধারণত একে অপরের সঙ্গে হানাহানিতেই লিপ্ত থাকে।
এখনকার আমেরিকান গ্যাংয়ের অন্যতম সদস্য প্রিস্টন জ্যাকবস বলছেন, ‘মানুষের পক্ষে ভালো কিছু করতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে। আমি এখন দেখছি এখানে অনেক ভালো মানুষ রয়েছেন। এবং আমাদের এই কাজ দেখে তারা আমাদের ভালোও বাসছেন।’
‘ক্লেভার কিডস’ গ্যাংয়ের সদস্য সানসি হাসান আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘তাদের এই যুদ্ধবিরতি স্থায়ী হবে। এটি যদি এভাবেই চলতে থাকে তবে কোনো গ্যাংয়ের মধ্যে আর লড়াই হবে না। এবং সবগুলো গ্যাংই আমাদের সঙ্গে একমত হবে।’
পাঁচ বছর আগে সিডনি থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় যান অ্যান্ডি। তিনি প্রথম জীবনে একজন ব্যাংকার ছিলেন। পরে যাজক হন। এত বছরের যাজক জীবনে এবার কেপটাউনের এই ঘটনা তাঁকে অভিভূত করেছে। গ্যাংগুলোর এই কাজে তিনি গর্ববোধ করছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা আমাকে গর্বিত করেছ। আক্ষরিক অর্থেই। আজ যদি আমি মারা যাই, আমি একজন অত্যন্ত সুখী মানুষ হিসেবে মারা যাব।’