বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

আনিসুল আলম নাহিদ

কৃষিতে হোমিওপ্যাথি (পর্ব-০১)



হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় মানবদেহ ছাড়াও চাষাবাদে উপকার পাওয়া যেতে পারে। এ প্রেক্ষিতে আমাদের প্রতিষ্ঠান ‘আনোয়ারা এগ্রো ভিশন’ এর অর্গানিক পণ্য উৎপাদনে প্রায়ই হোমিওপ্যাথিক ঔষধসমূহ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আগ্রহী কৃষি উদ্যোক্তারা কৃষিতে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। আশা করা যায়, এতে কৃষি উদ্যোক্তারা উপকৃত হবেন। তবে এইসাথে অবশ্যই কৃষির যথাযথ পরিচর্যা করতে হবে।

যেসব হোমিওপ্যাথিক ওষুধ উদ্ভিদের রোগবালাই দমন, বীজ শোধন, বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উপকারে আসে সেগুলোর মধ্যে- সাইলেশিয়া, কার্বোভেজ, সালফার,
ম্যাগনেশিয়া, এপিস মেলাফিকা, চায়না, বেলেডোনা, স্ট্যাফিস্যাগরিয়া, নাক্সভমিকা, আর্নিকা, ক্যালকেরিয়া কার্ব, ভ্যালিরিয়ানা অফিসিনালিস, সিনা, ক্যামোমিলা, ক্যালকেরিয়া ফস, আর্সেনিক এল্বাম উল্লেখযোগ্য। নিচে কয়েকটি হোমিওপ্যাথি ওষুধের কৃষিতে প্রয়োগের ক্রিয়া-কলাপ সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলঃ

বেলেডোনাঃ গাছের কান্ডে বা ফলে লালচে দাগ বা ক্ষত থাকলে বেলেডোনা প্রাথমিক অবস্থায় ব্যবহার করা যায়। এত গাছের বা ফলের দাগ বা ক্ষত দূর হয়ে গাছ ও ফল সুন্দর ও বলিষ্ঠ হয়ে উঠবে।

কার্বোভেজঃ চারা রোপনের পর মরে বা শুকিয়ে যাওয়া, ডালপালা ভেঙে যাওয়ার পর গাছ শুকিয়ে বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ত্রুটি রোধ করে। এছাড়া ফাঙ্গাসের আক্রমণ, পাতার কালো দাগ ও ঝলসানো রোগ দূর করে এবং অপরিপক্ব ফল ঝরে যাওয়া প্রতিরোধ করে।

ফসফরাসঃ এই ঔষধ মাটির ফসফরাসের অভাব দূর করে। এছাড়াও ফলের দাগ ও পচন, পাতা ঝলসানো রোগ, পাতা শুকিয়ে যাওয়া, জাব পোকার আক্রমণ ইত্যাদি দূর করে।

সাইলিশিয়াঃ উদ্ভিদের বৃদ্ধি কম হলে বা গাছের বৃদ্ধি থেমে গেলে, যথাসময়ে ফুল না এলে কিংবা কম এলে, ফুল ঝরে পড়লে এ ওষুধ ব্যবহার করা যায়। গাছের ফুল আসার আগে এটি ব্যবহার করলে গাছে ফুল ও ফলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

আর্ণিকাঃ গাছ বা ফুল-ফল কোনভাবে আহত বা আঘাত প্রাপ্ত হলে প্রথমেই আর্ণিকা প্রয়োগ করতে হয়। গাছ ছাঁটাইয়ের পরেও আর্ণিকা প্রয়োগ করতে হবে। এতে দ্রুত আহত বা আঘাত প্রাপ্ত গাছ বা ফুল ফল সতেজ হয়ে উঠবে।

আর্সেনিক এল্বামঃ বিষাক্ত পোকামাকড় ও পতঙ্গের আক্রমণের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় আর্সেনিকের কোন জুড়ি নেই। এই ঔষধ প্রয়োগের ফলে বিষাক্ত পোকা মাকড় থেকে গাছপালা রক্ষা পায়।

সিনাঃ উদ্ভিদের বিশেষ করে শিম বা লতা জাতীয় উদ্ভিদের শিকড়ে কৃমির আক্রমণ হলে এ ওষুধ ব্যবহার করা যায়। উদাহরণস্বরুপ এখানে গুটিকয়েক হোমিওপ্যাথিক ঔষধের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা প্রদান করা হল। এ ধরনের বহু ঔষধ উদ্ভিদ ও ফসলের উপর পরীক্ষা করে গবেষক ও পর্যবেক্ষকরা ইতিবাচক কার্যকারিতা লক্ষ্য করেছেন। ফলে অনেক দেশে এর প্রয়োগ ও গবেষণা ইতোমধ্যে জোরদার হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথের শরণাপন্ন হওয়া যেতে পারে।

মনে রাখা দরকার, হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সূক্ষ মাত্রায় শক্তিকৃত অবস্থায় প্রয়োগ করতে হয় এবং এর স্বতন্ত্র প্রয়োগ পদ্ধতি রয়েছে। শততমিক অথবা পঞ্চাশ সহস্রতমিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে। বলাবাহুল্য, এগ্রো হোমিওপ্যাথি স্বল্পব্যয়ী ও চাষাবাদ সংশ্লিষ্ট সবার জন্য নিরাপদ ও উপকারী।

উল্লেখ্য, নেদারল্যান্ডের চিকিৎসক ও গবেষক বৈকুন্ঠ দাস কবিরাজ সর্বপ্রথম কৃষিতে হোমিওপ্যাথির প্রয়োগ বিষয়ে আলোকপাত করেন। এতদসংক্রান্ত তাঁর বই ‘হোমিওপ্যাথি ফর ফার্ম অ্যাণ্ড গার্ডেন’ ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয়েছে।

লেখক, কৃষি উদ্যোক্তা
anisulnahid2001@gmail.com

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!