সিলেটের ওসমানী নগর উপজেলার, দয়ামীর ইউনিয়নের চুনারপাড়া (হুসন নমকী) গ্রামের এক উচ্চশিক্ষিত ও পরিশ্রমী উদ্যোক্তার নাম আব্দুল আজিজ লয়লু। যিনি নিজের সততা, দক্ষতা ও পরিশ্রমের গুণে আজ সিলেটের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের একজন। ১৯৭১ সালে জন্মগ্রহণকারী এই উদ্যোক্তার বাবার নাম মরহুম মো. মর্তুজা আলী ও মাতার নাম নাজমা বেগম। তাঁর পিতা পেশায় ছিলেন স্বনামধন্য একজন প্রাইমারী স্কুল শিক্ষক, মা আদর্শ গৃহিণী। পিতার আদর্শে উজ্জীবিত জনাব লয়লু সেই ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা বিস্তারে বেশ মনোযোগী ছিলেন। অকালে ঝরে পড়া অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে লেখাপড়ায় সার্বিক সহযোগিতা করে আসছেন যার ফলশ্রুতিতে অনেক ছাত্র-ছাত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত এবং দেশে-বিদেশে অবস্থান করছেন।
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এম.সি. কলেজ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্নকারী চাকুরী বিমুখ জনাব লয়লু দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন নিজে কিছু করে দেখাবেন বলে। যার প্রেক্ষিতে নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্বল্প কিছু পুঁজি নিয়ে শুরু করেছিলেন পুরনো বই ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা। তারপর ধীরে ধীরে তার সততা ও দক্ষতায় ব্যবসা এগিয়ে যেতে থাকে। তিনি আশানুরুপ লাভের মুখ দেখতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে আরো উজ্জীবিত হয়ে ব্যবসার প্রসার ঘটাতে থাকেন। ২০০১ সালে সিলেট শহরের বিখ্যাত রাজা ম্যানশনে নিজের সঞ্চিত কিছু অর্থ এবং বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধার নিয়ে শুরু করেন নাজমা বুক ডিপো। কালের পরিক্রমায় নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে নাজমা বুক ডিপো ও আব্দুল আজিজ লয়লু আজ সিলেটের বই ব্যবসার বিশ্বস্ত ও অনন্য এক নাম। বর্তমানে তাঁর সিলেট শহরে একাধিক বইয়ের দোকান রয়েছে। এর পাশাপাশি মমতা প্রকাশনী নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান আত্মপ্রকাশ করেছে। বর্তমানে তাঁর অধীনে এসব প্রতিষ্ঠানে অনেক তরুণের স্থায়ী এবং খন্ডকালীন কর্মসংস্থান হয়েছে।
এসবের পাশাপাশি এই উদ্যোক্তা বিভিন্ন ধরনের সমাজসেবার সাথে যুক্ত রয়েছেন। ব্যক্তি উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্টানে তিনি বইপত্র বিতরণ করে থাকেন। ২০০৭ সালে প্রতিষ্টিত রাজীব স্মৃতি গ্রন্থাগারে তিনি বিভিন্ন সময়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বই দান করে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। এর পাশাপাশি মর্তুজা আলী মাস্টার পাবলিক স্কুল প্রতিষ্টায়ও নিরলশ কাজ করে যাচ্ছেন।
কৃষিপ্রিয় জনাব লয়লু কৃষি উন্নয়নেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছেন। বেকার ও সাধারণ মানুষ জনকে কৃষিতে উদ্ভুদ্ধ করার পাশাপাশি বিশেষ করে সম্প্রতি নিজের গ্রামের পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনদের কৃষিতে প্রতিষ্টিত হতে নিয়মিত প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়ে চলেছেন। বিভিন্ন সময়ে অনেককে বিনামূল্যে বীজ ও গাছের চারা উপহার দিয়ে আসছেন। তার স্বপ্ন তৃণমূলে কৃষি উন্নয়নে গণজোয়ার সৃষ্টি করার মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখা।
তিন ভাইয়ের মধ্যে জ্যেষ্ঠ আব্দুল আজিজ লয়লু চলার পথে অর্জন করেছেন বৈচিত্রময় অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতা তাঁকে চলার পথে সাহায্য করেছে বলে তিনি মনে করেন। ব্যক্তি জীবনে বিবাহিত জনাব লয়লুর স্ত্রী মমতা বেগম একজন স্কুল শিক্ষিকা এবং তাঁর কাজের প্রেরণাও । দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক আব্দুল আজিজ লয়লু বর্তমানে সিলেট শহরে বসবাস করছেন। প্রত্যাশা করা যায়, তাঁর অনুসরণে আরো অনেক উদ্যোক্তা গড়ে উঠবেন। কর্মপ্রিয় এই মানুষটির ভবিষ্যতের জন্য রইলো অনেক অনেক শুভকামনা ও ভালবাসা।