বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বালাগঞ্জে একটি ঘর পাওয়ার জন্য গৃহহীন এতিমের আকুতি



 

এতিম ভাই-বোন।

বালাগঞ্জের দেওয়ানবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ শিওরখাল গ্রামের কালু মিয়ার ছেলে জাহেদ মিয়া (১৮) একটি টিভি ক্যাবল সার্ভিসের দোকানে চাকুরি করে। এক ছোট ভাই ও এক বড় বোন রয়েছে তার। তাদের পিতা মাতাও নেই আবার মাথা গোঁজার কোন ঘরও নেই। দাদা-দাদির একটু জায়গা থাকলেও অর্থের অভাবে একটি ঘর বানানোর সাধ্য নেই তাদের। ফলে দুই ভাই যেখানে চাকুরি করে সেখানেই তাদের থাকতে হয়। স্বামী পরিত্যক্তা বোনও থাকতে হয় মানুষের বাড়িতে। সরকার আশ্রয়হীনদের জন্য ঘর দিচ্ছে জেনে তারাও স্বপ্ন দেখছে এবং একটি ঘর পাওয়ার দাবি জানাচ্ছে।

জানা যায়, ছোট বেলা মাকে হারিয়ে এতিম হয় জাহেদ ও তার ভাই-বোন। নিজেদের কোন ভিঠে মাটি না থাকায় তাদের বাবা কালু মিয়া রিকশা চালিয়ে তিন সন্তানকে নিয়ে কলোনীতে বসবাস করতেন। কিন্তু বিগত ২১ জানুয়ারি খুন হন কালু মিয়া। কে বা কারা কালু মিয়াকে হত্যা করলে অনাথ ভাই বোনের জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। আর্থিক দুরবস্থার কারণে জাহেদ স্থানীয় একটি টিভি ক্যাবল সার্ভিসের দোকানে চাকুরি নিয়ে মালিকের বাড়িতেই বসবাস করছে। তার ছোট ভাই মাসুক মিয়া (১৩) একজনের রিকশা গ্যারেজে কাজ নিয়ে গ্যারেজেই বসবাস করতে হচ্ছে। একমাত্র স্বামী পরিত্যক্তা বোনটিও বিভিন্ন জনের বাড়িতে আশ্রিত থাকতে হচ্ছে। নিজের ঘর বাড়ি না থাকায় ভাই বোন কখনো একসাথে থাকার সুযোগ নেই তাদের।

মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে দেশের প্রতিটি এলাকায় গরীব গৃহ ও আশ্রয়হীনদের জায়গাসহ ঘর প্রদান করার খবরে তারাও একটি ঘর পাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। কিন্তু অনেকে জায়গাসহ ঘরের মালিক হলেও এখনো তাদের ভাগ্যে ঝুটেনি একটি ঘর। তাই সরকারি বা ব্যক্তিগত ভাবে হলেও একটি ঘরের জন্য সবার নিকট আকুতি জানিয়েছে তারা।

আলাপকালে জাহেদ মিয়া বলে, বাবা সবাইকে নিয়ে একটি কলোনীতে থাকতেন। তখন অভাব হলেও ভাই বোন একসাথে থাকতে পারতাম। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর নিজের কোন ঘর বাড়ি না থাকায় যেখানেই চাকরি করি সেখানেই থাকতে হয় আমাদের। আশ্রয়ণ প্রকল্পে অথবা ব্যক্তিগত ভাবে হলেও হৃদয়বানদের কাছে একটি ঘর পাওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছে অনাথ জাহেদ।

জাহেদের বোন কোকিলা বেগম বলেন, বাবা মাকে হারিয়ে আমরা কত কষ্টে আছি একমাত্র আল্লাহ জানেন। নিজেদের কোন ঘর না থাকায় ভাই বোন কখনো একত্রিত হতে পারি না। সরকার আশ্রয়হীনদের ঘর দিচ্ছে কিন্তু আমাদের ভাগ্যে এখনো ঝুটেনি। আমাদের একটি ঘর দিলে আমরা খুবই উপকৃত হবো।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আইয়ুব উল্লাহ বলেন, রিকশা চালক কালু মিয়া গহরপুর মাদ্রাসার গত ওয়াজের রাতে খুন হওয়ার পর তার অনাথ ছেলে মেয়েরা অসহায় হয়ে পড়েছে। ছোট ছোট সন্তান রেখে তাদের মা মারা যাওয়ার পর কালু তাদের কথা ভেবে আর বিয়ে করেনি। কালুর বাবা-মার নামে বাড়ীতে জায়গা থাকলেও কালুর ঘর নেই। ঘর বানোর মতো সামর্থ না থাকায় তারা নিরাশ্রয়।

ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার নেছাওর আলী বলেন, খুন হওয়ার পর কালু মিয়াকে আমরা এলাকাবাসী দাফন কাপন করেছি। অসহায় এ এতিমদের জন্য সরকারি বা ব্যক্তিগত ভাবে একটি গৃহ নির্মাণ ব্যবস্থা হলে তাদের খুব উপকার হবে। এ জন্য সকলের দৃষ্টিকামনা করছি।

এ ব্যাপারে আলাপকালে বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোজিনা আক্তার বলেন, যার জমি আছে তার জন্য বর্তমান প্রজেক্টে বরাদ্দ নেই। পরবর্তীতে কোন বরাদ্ধ আসলে বিবেচনা করা হবে।

উল্লেখ্য, বিগত গত ২১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে রিকশা (ভাড়ায় একটি ব্যাটারিচালিত ) নিয়ে সন্তানদেরকে বাজার আনার কথা বলে ঘর থেকে বের হয়ে যান মৃত জানু মিয়ার পুত্র রিকশা চালক কালু মিয়া। পরদিন ওসমানীগরের চক মন্ডল কাপন এলাকায় কালু মিয়ার লাশ পাওয়া যায়। পরে নিহতের ছেলে জাহেদ বাদি হয়ে ওসমানীগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মৌলভীবাজার জেলার কাজির বাজারের মিলপুর (মাঝপাড়া) গ্রামের ইলাস আলীর পুত্র হাসানকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে। অভিযুক্ত হাসান মিয়া মনাই বালাগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর গ্রামের ছহুল আহমদের গরুর খামারের কাজে নিয়োজিত ছিল।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!