টানা চারটি আসরে গ্রুপ পর্বের বৈতরণী পেরুতে না পারা বাংলাদেশ এবার শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করতে গতকাল মঙ্গলবার মালদ্বীপের উদ্যোশ্যে দেশ ছেড়েছে। এর আগে সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে কোচ অস্কার ব্রুজন ও অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া চ্যাম্পিয়ন হওয়ার এই লক্ষ্যের কথাই শোনিয়েছেন।
১ থেকে ১৬ অক্টোবর মালদ্বীপে অনুষ্ঠেয় দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের এই লড়াইয়ে ১ অক্টোবর-ই নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ৪, ৭ ও ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ যথাক্রমে খেলবে ভারত, মালদ্বীপ ও নেপালের বিরুদ্ধে। রাউন্ড রবিন লিগ ভিত্তিতে সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জনকারী দুটি দল ফাইনাল খেলবে ১৬ অক্টোবর। সাফে এবার অংশ নেয়া পাঁচ দলের মধ্যে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে ভারত (১০৭), এরপর মালদ্বীপ (১৬০) ও নেপাল (১৬৮)। বাংলাদেশের (১৮৯) চেয়ে পিছিয়ে কেবল শ্রীলঙ্কা (২০৫)।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের প্রথম ও শেষ ট্রফি ২০০৩ সালে ঢাকায়, সর্বশেষ ফাইনাল ২০০৫ সালে করাচিতে এবং সর্বশেষ সেমিফাইনাল ২০০৯ সালে ঢাকায়। তবে গত চারটি সংস্করণে ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে আছে বাংলাদেশ। গত চার আসরে ১২ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় ৩টি, ড্র দুটি এবং হার ৭টি।
অন্তর্বর্তীকালীন কোচ অস্কার ব্রুজন এই ধারা বদলে দিতে চান খেলার কৌশলে পরিবর্তন এনে। ৩-৪-৩ ফরমেশন থেকে বেরিয়ে দলকে প্রস্তুত করছেন ৪-৩-৩ ছকে। সংবাদ মাধ্যমকে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া জানিয়েছেন কোচের ভাবনা পরিষ্কার তারা বুঝতে পারছেন বলে। ব্রুজনের নতুন এই ফরমেশন মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে ও জানালেন অধিনায়ক। কৌশলে পরিবর্তন আনা নতুন করে স্বপ্ন দেখানো মধ্যবর্তী নতুন কোচ অস্কার ব্রুজন তার এই মধ্যবর্তী দায়িত্বটা তিনি রাঙাতে চান চ্যাম্পিয়ন হয়ে। ক্যারিয়ারের প্রথম জাতীয় দলের দায়িত্বটা রাখতে চান স্মরণীয় করে।
তবে তাঁর এই রাঙানোর স্বপ্ন যদি বাস্তবে রূপ নেয় তবে বাংলাদেশ ফুটবল দল পাবে একজন দীর্ঘমেয়াদী কোচ। দুই মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পাওয়া বসুন্ধরা কিংসের এই স্প্যানিশ কোচই যে হবেন তখন দীর্ঘমেয়াদী কোচ তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। অবসান হবে বাংলাদেশ দলের ঘনঘন কোচ বদলের সংস্কৃতি।
গত ১৩ বছরে শিরোপা জয়ের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ উত্তীর্ণ হতে না পারলেও কোচ বদলের প্রতিযোগিতায় সাফের অন্যান্য দলকে পেছনে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০২১ এই সময়ে সার্কভুক্ত সাত দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ১৯ বার কোচ বদল করেছে। একই সময় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ বার নেপাল এবং ১৩ বার মালদ্বীপ কোচ বদল করেছে। সমান ৯ বার করে ভুটান ও শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তান ও ভারত যথাক্রমে ৮ ও ৫ বার কোচ বদলের পথে হেঁটেছে।
তবে এবার আর কোচ বদলের প্রতিযোগিতায় নয় শিরোপা জয়ের দৌড়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করুক লাল সবুজের বাংলাদেশ – এমন প্রত্যাশা বাংলার ফুটবল প্রেমিদের।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ২৩ সদস্যের বাংলাদেশ দল: জামাল ভূইয়া (অধিনায়ক), আনিসুর রহমান, বিশ্বনাথ ঘোষ, তপু বর্মন, কাজী তারিক রায়হান, বিপলু আহমেদ, মাহবুবুর রহমান সুফিল, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মতিন মিয়া, আতিকুর রহমান ফাহাদ, শহিদুল আলম সোহেল, সোহেল রানা, সাদ উদ্দিন, জুয়েল রানা, টুটুল হোসেন বাদশা, রহমত মিয়া, রিয়াদুল হাসান রাফি, ইয়াসিন আরাফাত, রাকিব হোসেন, রেজাউল করিম, আশরাফুল ইসলাম রানা, সুমন রেজা ও মোহাম্মদ হৃদয়।