শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

আব্দুর রশীদ লুলু

চাষাবাদ বিষয়ক টুকিটাকি-১০



 অনাবৃষ্টি ও পরিবর্তিত আবহাওয়ার ধরুণ ইদানিং প্রায়ই ফুলকপিতে মাজরা ও লেদা পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। যা ফুলকপি চাষাবাদে বিরাট সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে অর্থাৎ মাজরা ও লেদা পোকা দমণে ক্ষেতে ক্লোরোপাইরিফস ও সিনথেটিক পাইরফ্রয়েট জাতীয় কীটনাশক ব্যবহারের জন্য কৃষি বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন। তবে কীটনাশক ব্যবহারের আগে ফুলকপির ক্ষেতকে গভীর পর্যবেক্ষণে রেখে গাছের পাতা কুঁকড়ানো দেখলে সেসব পাতাকে সাবধানে ছিঁড়ে ফেলে তা মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে। এতেও মাজরা ও লেদা পোকার আক্রমণ প্রতিহত না হলে তবেই উপরোল্লিখিত কীটনাশক যথাযথ বিধি মেনে চলে সাবধানে প্রয়োগ করতে হবে। উল্লেখ্য, ফুলকপির ক্ষেতে মাজরা ও লেদার পোকার আক্রমণ হলে প্রথমে পাতা কুঁকড়ে যায়। এরপর পাতা খেয়ে পোকা ফুলকপির ভেতরে ঢুকে যায়। ফলে ফুলকপি পচে গিয়ে খাওয়া ও বিক্রির অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

 দেশের একটি স্বল্প পরিচিত অথচ সুস্বাদু ফল সফেদা। ক্যালসিয়াম, খনিজ লবণ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ এ ফল দেশের প্রায় সর্বত্রই জন্মায়। তবে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, খুলনা ও বৃহত্তর বরিশালে তুলনামূলক ভাবে বেশি চাষাবাদ করা হয়। দেখতে খুব সুন্দর সফেদার গাছ খুব বৃষ্টি হয় এমন এলাকায় ভালো জন্মে। দেশে এবং বিশ্বে সফেদার অনেকগুলো জাত রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট আবিস্কৃত একটি ভালো জাত হচ্ছে, বারি সফেদা-১। প্রায় সব ধরণের মাটিতেই সফেদার চাষ হলেও উর্বর দো-আঁশ মাটিতে ভালো হয়। উপযুক্ত পরিচর্যায় কলমের গাছে ৩/৪ বছরে ফল আসলেও বীজের গাছে ফল আসতে অনেক সময় ৮/১০ বছর সময় লাগে। উল্লেখ্য, একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছে বছরে ১৫০০-২০০০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়।

 ভোজন বিলাসী বাঙালীর অতি প্রয়োজনীয় মসলা পেঁয়াজ চাষাবাদের জন্য সুনিষ্কাশিত পলি মাটি অর্থাৎ ঝরঝরে হালকা দো-আঁশ মাটি সব চেয়ে ভালো। এঁটেল মাটি পেঁয়াজ চাষাবাদের জন্য একেবারে অনুপযুক্ত। বিদেশী পেঁয়াজ বিভিন্ন রংয়ের (লাল, হলুদ ও সাদা) এবং আকারে বড় হলেও ঝাঁঝ কম। পক্ষান্তরে দেশী পেঁয়াজ আকারে ছোট ও লাল রংয়ের হয়। কিন্তু ঝাঁঝ বেশী। সাধারণত: তিনটি পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষ করা হয়। ০১. সরাসরি ক্ষেত্রে বীজ বুনে ০২. পেঁয়াজের বাল্ব / শল্ক কন্দ রোপণ করে এবং ০৩. বীজ তলায় বীজ তুলে পরে তা তুলে নিয়ে মূল জমিতে রোপণ করে। তবে অভিজ্ঞ চাষীরা বলেন, বীজ তলায় চারা উৎপাদনের মাধ্যমে পেঁয়াজ চাষাবাদ লাভজনক।

 বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ গাজর দেশের সকল প্রকার মাটিতে চাষাবাদ সম্ভব হলেও, দো-আঁশ মাটিতে ভালো ফলন হয়। আগাম ফলনের জন্য পলি দো-আঁশ মাটি ভালো বলে চাষাবাদ সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করেন। তবে এঁটেল মাটি ও খুব ভেজা মাটিতে গাজর ভালো হয় না। সাধারণত: শীতকালে এবং সমতল ভূমিতে গাজর উৎপাদন করা হয়। বীজ নভেম্বর মাসে বোনা হয়। বৃষ্টিপাত কম হলে আগাম ফলনের জন্য অক্টোবর মাসেও বীজ বোনা যেতে পারে। উল্লেখ্য, সরাসরি মূলজমিতে বীজবুনে মুলার মতো গাজর চাষাবাদ করতে হয়।

 দেশীয় সুগন্ধী ধান কালিজিরা সাধারণত: আমন মৌসুমে চাষাবাদ করা হয়। এ ধানের ফলন সাধারণত: বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটিতে ভালো হয়। কালিজিরা ধান চাষাবাদের জন্য প্রথমাবস্থায় বীজ তলায় চারা উৎপাদন করতে হয়। প্রতি শতাংশ জমিতে (বীজতলায়) ৪০০-৫০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন। চারার বয়স ৩০-৩৫ দিন হলে তা মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। সারিবদ্ধ ভাবে রোপণ করলে ফসল ভালো হয় এবং পরিচর্যায়ও সুবিধা হয়। সারিবদ্ধভাবে রোপণ করতে হলে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ৬-৮ সে.মি. এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ১০-১৫ সে.মি.। উল্লেখ্য, অন্যান্য উচ্চ ফলনশীল ধান থেকে একর প্রতি কালিজিরার উৎপাদন কম হলেও, অন্যান্য ধান থেকে এর বাজার মূল্য অনেক বেশী। সুগন্ধি ও সরু চাল হিসেবে কালিজিরার চাহিদা দেশ-বিদেশের অভিজাত শ্রেণীর কাছে খুব বেশি।

 ধান (এবং অন্যান্য ফসল) চাষাবাদে রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগে খুব সাবধান হওয়া উচিৎ। অনেকে ধান ক্ষেতে পোকার আনাগোণা লক্ষ্য করলেই কীট নাশক প্রয়োগে উদ্যত হন। কিন্তু অভিজ্ঞরা বলছেন, নির্বিচারে ধান ক্ষেতে কীট নাশক প্রয়োগ ঠিক না। নিতান্ত প্রয়োজন হলে রোগ ও পোকার আক্রমণ সঠিক ভাবে সনাক্ত করে কৃষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে রাসায়নিক কীট নাশক প্রয়োগ করতে হবে। উল্লেখ্য, রাসায়নিক কীট নাশক প্রয়োগে আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতির প্রচুর ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া, ধানের ফুল ফোটার সময় কীট নাশক প্রয়োগে বিরত থাকা উচিৎ। এ সময় কীট নাশক প্রয়োগ করলে চিটার হার বেশি হওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা।

লেখক, সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা)।

 

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!