শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আব্দুর রশীদ লুলু

চর্ম পীড়ায় বাহ্য প্রয়োগ: প্রাসঙ্গিক কিছু কথা



চর্ম পীড়ায় অনেকেই বিশেষ করে এলোপ্যাথ ডাক্তার, সাধারণ মানুষ এমন কি অনেক হোমিও ডাক্তার বিভিন্ন ধরণের মলম, লোশন ইত্যাদি বাহ্য প্রয়োগ করেন। এতে অনেক ক্ষেত্রে বাহ্যিকভাবে চর্ম পীড়া হয়তো সারে, কিন্তু কার্যত: আভ্যন্তরীণভাবে রোগী আরো বেশী রোগাক্রান্ত হয়।

অনেকে চর্ম পীড়াকে শুধুমাত্র চর্মের স্থানীয় পীড়া বলে মনে করেন। আসলে এটা চর্মের কোনো স্থানীয় রোগ নয়, এটা শরীরের আভ্যন্তরীণ অসুস্থতার বহি:প্রকাশ মাত্র। এ প্রসঙ্গে ডা: জে.কম্পটন বার্নেট তাঁর বিখ্যাত “চর্ম রোগ” বইয়ের ভুমিকায় বলেছেন- “আজ-কাল বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সমস্ত পৃথিবী ব্যাপী চিকিৎসকরা ভেবে থাকেন চর্মরোগ একটি স্থানীয় রোগ এবং আমার মতে সেরূপ ভাবনা করা মানবতার প্রতি অপরাধমূলক এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে ইহা নির্বোধমূলক সংস্কৃতির পরিচায়ক।”

সত্য সন্ধানী বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, চর্ম পীড়ায় বাহ্যিক মলম, লোশন ইত্যাদি প্রয়োগের ফলে চর্মপীড়া চাপা পড়ে দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়া, চোখে ছানি পড়া, হাঁপানী (শ্বাস কষ্ট) প্রভৃতি জটিল-কঠিন রোগ দেখা দেয়। যে গুলো চর্ম পীড়ার চেয়ে রোগীর জন্য অনেক বেশী ক্ষতিকর ও কষ্টজনক।
এ প্রসঙ্গে নিজ চোখে দেখা আমার এক চাচার কথা বলি। আমার ওই চাচার যৌবনে হাঁটুর কাছে একজিমা ছিল। বিশ্রী ধরণের একজিমা। বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসায় তা ভালো না হওয়ায় জনৈক কবিরাজের পরামর্শে তিনি একটা ভেষজ ঔষধের সাথে আলকাতরা (যা সাধারণত: নৌকায় দেয়া হয়) বেশ কিছু দিন ব্যবহার করে সুস্থ হন (?)। তার বছর দু’য়েক পর থেকে তিনি প্রচন্ড হাঁপানীতে ভূগতে থাকেন। বিশেষত: বর্ষাকালে বর্ণনাতীত কষ্টে ভোগেন। এ ছাড়া ভালো ধীশক্তি সম্পন্ন আমার এই চাচা ক্রমান্বয়ে নুয়ে পড়তে থাকেন এবং ধীরে ধীরে দৃষ্টি শক্তি কমতে কমতে প্রায় অন্ধত্বের কাছাকাছি চলে আসেন। হাঁপানীর জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে দেখাতে বিরক্ত চাচা সম্প্রতি চোখের ছানি অপারেশন করে এসেও অভিযোগ করছেন- চোখের সমস্যা যাচ্ছে না।

বলা বাহুল্য, হোমিওপ্যাথিতে অবিশ্বাসী আমার ওই চাচাকে ইদানিং আমি খুব চেষ্টা করছি, নেট্রাম সালফ গেলানোর। আমার দূঢ় বিশ্বাস, লক্ষণ সাদৃশ্যে হোমিও ঔষধ প্রয়োগে তার হাঁপানী যাবে, চোখ ভালো হবে, চাপা পড়া একজিমা পূন: প্রকাশিত হবে এবং একদিন তাও ভালো হবে। সর্বোপরি, তিনি তাঁর হারানো স্বাস্থ্য ও ধীশক্তি পুন: ফিরে পাবেন এবং হয়তো আক্ষেপ করবেন- হায়, কেন আরো আগে হোমিও ঔষধ খেলাম না। তা হলে, হাজার হাজার টাকা গচ্ছা যেতো না এবং জীবনে অনেক কাজ করতে পারতাম।

যা হোক, হোমিওপ্যাথিতে চর্ম পীড়ায় বাহ্য কোন ঔষধ প্রয়োগ নিষেধ। স্বয়ং হোমিওপ্যাথির জনক স্যামূয়েল হ্যানিম্যান এ বিষয়ে সাবধান করে গেছেন। ক্ষতিকর দিকগুলো পর্যবেক্ষণ করে এ বিষয়ে সাবধান করেছেন অনেকে দেশী-বিদেশী হোমিও চিকিৎসক ও গুণীজন। অথচ দু:খজনক হলো, অনেকে নিজেকে হোমিওপ্যাথ পরিচয় দিয়েও চর্ম পীড়ায় বাহ্য প্রয়োগের ব্যবস্থা দেন। প্রসঙ্গত: আশা করব, এ ধরণের হোমিওপ্যাথ ও অন্যন্যদের এখন থেকে শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। চর্মপীড়ায় বাহ্য প্রয়োগে তারা বিরত থাকবেন।

আমার কাছে, কোনো হাঁপানী (শ্বাস কষ্ট), চোখের দৃষ্টি শক্তি কম, চোখে ছানি পড়া রোগী এলে আমি অন্যান্য বিষয়ের সাথে রোগীর চর্মপীড়ার ইতিহাস খুঁজি। এবং আমার মনে হয়, প্রত্যেক হোমিও চিকিৎসকেরও তাই করা উচিৎ।

পরিশেষে, ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ডা. জে. কম্পটন বার্নেট এর কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে বলব- “আমি ইহা সর্ব সাধারণকে বিশেষ করে রোগীদের সাবধান করে দিতে চাই যে, কোন প্রকার লোশন, জিঙ্ক মলম, সাইট্রিন মলম, সোনাজাত মলম, যা অনেক গৃহস্থের ঘরে থাকে তা যেন কখনো ব্যবহার করা না হয়। রোগ প্রতিকারক ঔষধ হিসাবে কোন মলম কিংবা লোশন ব্যবহার করা অত্যন্ত অনিষ্টকর।”

লেখক: আব্দুর রশীদ লুল, সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী প্রকাশনা), আনোয়ারা হোমিও হল, দেওয়ান বাজার, সিলেট।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!