শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

আব্দুর রশীদ লুলু

চাষাবাদ বিষয়ক টুকিটাকি – ২৩



 দেশের আবহাওয়া মিষ্টি কুমড়া চাষাবাদের জন্য খুবই উপযোগি। তাই বছরের যে কোনো সময় এর চাষাবাদ করা যায়। শীতকালীন ফসলের জন্য অক্টোবর-ডিসেম্বর এবং গ্রীষ্মকালীন ফসলের জন্য ফেব্রুয়ারি-মে মাস পর্যন্ত বীজ লাগানোর উপযুক্ত সময়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বীজ উৎপাদনের জন্য নভেম্বরের মধ্যভাগে বীজ লাগানো উত্তম। মিষ্টি কুমড়া বর্ষজীবি লতানো উদ্ভিদ। এর চাষাবাদের একটি ভালো দিক হলো পাকা ফল দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। দেশে শীতকালীন ফসল হিসেবে সাধারণত: মিষ্টি কুমড়া চাষাবাদ করা হয়। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, শীতকালীন ফসল হিসেবে এর ফলন ভালো হয়। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটি এর চাষাবাদের জন্য ভালো।

 চাষাবাদে দেশের অনেক নারী-পুরুষের রয়েছে বিশেষ দক্ষতা। একটু নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করলে এ ক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে প্রতিষ্ঠা অর্জন সম্ভব। এতে অনেক ক্ষেত্রেই বড় অংকের পুঁজির প্রয়োজন হয় না। দেশিয় সস্তা জনশক্তি ও আধুনিক-উন্নত প্রযক্তি ব্যবহারে অনেকেই কৃষিতে সফলতা অর্জন করেছেন, দারিদ্রমুক্ত হয়ে অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা ছাড়াই। উল্লেখ্য, এক সময় দেশে কৃষি বলতে সাধারণত: ধান ও পাট চাষাবাদকে বুঝাত। কিন্তু এখন কৃষি সংগা অনেক বদলে গেছে। কৃষি এখন ব্যাপক ও বিস্তৃত। ধান ও পাট ছাড়াও ফল-মূল, শাক-সবজি, গাছ-পালা, হাঁস-মুরগ, গরু-ছাগল পালন/উৎপাদন প্রভৃতি এখন কৃষির অন্তর্ভূক্ত। মনে রাখা দরকার, চাষাবাদে সফলতার জন্য জ্ঞান অর্জন, অভিজ্ঞতা সঞ্চয় ও প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।

 অন্যান্য মাছের ন্যায় দেশের মাটি ও পানি শিং-মাগুর চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগি। এক সময় প্রাকৃতিক জলাশয় গুলোতে এমনিতেই প্রচুর পরিমাণ শিং-মাগুর পাওয়া যেতো। কিন্তু নানা কারণে এখন আর সেদিন নেই। এখন শিং-মাগুর পরিকল্পিত ভাবে চাষ করতে হচ্ছে। যা হোক, শিং-মাগুর চাষের একটি বিশেষ সুবিধা হচ্ছে অধিক ঘনত্বে এর চাষ করা যায়। এ ছাড়া অগভীর জলাশয়ে, বিরূপ পরিবেশে, অক্সিজেন স্বল্পতা, পানি দূষণ এমনকি পানির অত্যধিক তাপমাত্রায়ও শিং-মাগুর মাছ বাঁচতে পারে। অন্যান্য মাছের সাথে ইচ্ছে করলে মিশ্রভাবেও শিং-মাগুর চাষ করা সম্ভব।

 মাটি, পানি, আলো, বাতাস ও প্রয়োগকৃত সারের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে চাষাবাদকে লাভজনক করতে দেশ কুল ও আনারসের মিশ্র চাষ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে দেশের অনেক কৃষক লাভমান হওয়ার খরব সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। অথচ কুল ও আনারসের মিশ্রচাষ এক সময় ছিল অজানা-অকল্পনীয়।

 পেঁপে গাছে শীতকালে ১০-১২ দিন এবং গ্রীষ্মকালে ৬-৮ দিন পর পর পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। একই সাথে বর্ষায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও রাখতে হয়। কেননা পেঁপে গাছ অতিরিক্ত পানি/জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। বড় আকারের ফলের জন্য ছোট ছোট ফলগুলো ছিঁড়ে ফাঁক করে দিতে হয়। পরাগায়ণের সুবিধার জন্য পেঁপের চাষাবাদে ১০-১৫টি স্ত্রী গাছের জন্য একটি পুরুষ গাছ রাখতে হয়। পেঁপের ক্ষেত্রে ধারণা করা হয়, যে ফলের আকার লম্বাটে ও বড় ধরণের তা উভয় লিঙ্গের। অভিজ্ঞরা বলেন, এ ধরণের ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে চাষাবাদ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এছাড়া বেশি ফলনের জন্য পেঁপে চাষাবাদে কৃত্রিম পরাগায়ণেরও অনেক সময় দরকার হয়। এ ক্ষেত্রে সকাল বেলা সদ্য ফোটা পুরুষ ফুল সংগ্রহ করে এর পাঁপড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে পুংকেশরে স্ত্রী ফুলের গর্ভকেশরের ওপর ধীরে ধীরে ২/৩ বার ছোঁয়াতে হবে। এ পদ্ধতিতে একটি পুরুষ ফুল দিয়ে ৫/৬টি স্ত্রী ফুলের পরাগায়ণ করা যেতে পারে।

 পুঁইশাক একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর শাক। নানাভাবে প্রচার-প্রচারণার প্রেক্ষিতে দেশে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর চাষাবাদও তাই লাভজনক বিবেচিত হচ্ছে। আরেকটা ভালো দিক হলো ছত্রাক জনিত পাতায় কখনো কখনো দাগ/ছিদ্র রোগ ছাড়া অন্য কোনো রোগ-বালাই হয় না বললেই চলে। উল্লেখ্য দাগ/ছিদ্র রোগ হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে এর প্রতিকার করা যায়।

 ১৯৯৬ সালে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন পাওয়া বারি লাউ-১ একটি উন্নতমানের লাউয়ের জাত। এ জাতটি প্রায় সারা বছরই চাষাবাদ সম্ভব। বারি লাউ-১ এর জীবনকাল ১২০-১৪০ দিন। সব ধরণের মাটিতে চাষাবাদ সম্ভব হলেও দোআঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটিতে ফলন ভালো হয়। পলি ব্যাগে সহজেই এর চারা উৎপাদন করা যায। এতে খরচও কম পড়ে। শীতকালীন চাষাবাদের জন্য সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বীজ বপণ/রোপণ করতে হয়। তবে আগাম ফলন পাওয়ার জন্য আগষ্টের শেষ দিকে বীজ বপণ/রোপণ করতে হয়। মাচা ছাড়া এ লাউয়ের ফলন পাওয়া গেলেও মাচা দেয়া ভালো, এতে ফলন বৃদ্ধি পায়।

 অনেক আগে থেকেই উন্নত দেশ (যেমন- চীন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান প্রভৃতি) এ অল্প জায়গায় মাছ ও হাঁস পালন চালু থাকলেও আমাদের দেশে অল্প কয়েক বছর ধরে এ পদ্ধতি চালু হচ্ছে। মাছ চাষের সংগে হাঁস পালন একটি সমন্বিত খামার পদ্ধতি। একে অন্যের সহায়ক এবং তুলনামূলক ভাবে খরচ কম। এ পদ্ধতিতে উৎপাদন বা লাভ বেশি হয়। এ ক্ষেত্রে হাঁসকে মাছের পুকুরে জৈব সার উৎপাদনকারী মেশিন বলে অভিহিত করা হয়। ১৫ নভেম্বর ২০১২।

লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী অনিয়মিত প্রকাশনা)।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!