নানা নাটকীয়তায় ভরপুর এক ফাইনাল। একবার আর্জেন্টিনা এগিয়ে যায় পরক্ষণেই এমবাপ্পে ম্যাজিকে সমতায় ফিরে ফ্রান্স। চরম উত্তেজনাকর ফাইনাল গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে ফ্রান্সকে ৪-২ গোলে হারিয়ে ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জিতে নিলো আর্জেন্টিনা।
রবিবার (১৮ ডিসেম্বর) লুসাইল স্টেডিয়ামে গোটা ম্যাচ জুড়ে বারবার বদলালো খেলার রং। প্রথমার্ধে মেসি ও ডি মারিয়ার গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। তো নির্ধারিত সময়ের শেষ দিকে জোড়া গোল করলেন ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পে। অতিরিক্ত সময়ে নিজের দ্বিতীয় গোল করলেন মেসি। খেলা শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করলেন এমবাপ্পে।
নির্ধারিত সময়ে খেলা ৩-৩ গোলে ড্র হওয়ায় শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে হলো খেলার ফয়সালা। সেখানে ফ্রান্সকে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতলো আর্জেন্টিনা। শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালের দুই অর্ধে দেখা গেল দুই ছবি। প্রথমার্ধ যদি লিওনেল মেসির হয়, তা হলে দ্বিতীয়ার্ধের ৭৮ থেকে ৮৫ মিনিটের মধ্যে খেলার ছবি বদলে দিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। দুই দলের দুই সেরা ফুটবলারের লড়াইয়ে শেষ হাসি হাসলেন মেসি।
প্রথমার্ধে মেসি একটি গোল করলেন তো এমবাপ্পে জোড়া গোল করে ফ্রান্সকে লড়াইয়ে রাখলেন। প্রথম ৭০ মিনিট খেলায় দাপট দেখালো আর্জেন্টিনা। কিন্তু তারপর ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশম দুটো পরিবর্তন খেলার রং বদলে দিলো। কোম্যান ও কামাভিঙ্গা নামার পরে এমবাপ্পে সেই খেলাটা খেললেন যেটা তিনি প্রথমার্ধে খেলতে পারেননি। ৯০ মিনিটের খেলা শেষ হলো ২-২ গোলে। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে আবার গোল করলেন মেসি। কিন্তু তাতেও জয় আসেনি। ৩ মিনিট বাকি থাকতে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন এমবাপ্পে।
শেষ পর্যন্ত খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে বাজিমাত করলেন মেসিরা। খেলাটা হওয়ার কথা ছিলো মেসি বনাম এমবাপ্পের। দুই দলের দুই ১০ নম্বর জার্সিধারীর। সেখানে প্রথমার্ধে তরুণ যুবরাজকে প্রতি পদে টেক্কা দিলেন বৃদ্ধ রাজা মেসি। বয়স হয়তো হয়েছে, কিন্তু ধার কমেনি তার। গতি হয়তো কিছুটা কমেছে, কিন্তু রক্ষণ চেরা পাস কমেনি। প্রথমার্ধ জুড়ে তার ঝলক দেখা গেল। নিজের শেষ বিশ্বকাপ স্মরণীয় করে রাখতে মরিয়া হয়ে খেলছিলেন মেসি।
আর তাকে বিশ্বকাপ দেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে খেলছিলেন আর্জেন্টিনার বাকি ১০ ফুটবলার। রক্ষণ, মাঝমাঠ থেকে আক্রমণ, কোথাও ফ্রান্সকে একটু জায়গা দিলেন না আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা। আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে রক্ষণেও নামতে দেখা গেল মেসিকে। যথার্থ নেতার মতো খেললেন তিনি। প্রথমার্ধে মেসি ছাড়া আর্জেন্টিনার আরও একজনের নাম করতেই হয়। ডি মারিয়া। চোটের কারণে নকআউটের কোনো ম্যাচে খেলেননি।
ফাইনালের জন্য তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন কোচ লিওনেল স্কালোনি। আর্জেন্টিনার প্রায় সব আক্রমণই হল প্রান্ত ধরে। প্রথম গোলের পিছনে ডি মারিয়া। বক্সের মধ্যে তাকে ফাউল করেন ওসমান দেম্বেলে। পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। তার পরে হুগো লরিসকে ভুল দিকে ফেলে গোল করলেন মেসি।
আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোল এল ডি মারিয়ার পা থেকেই। প্রতি আক্রমণে নিজেদের অর্ধে বল পেয়ে বাঁ পায়ের আউট সাইড দিয়ে রদ্রিগো দি পলকে পাস দেন মেসি। দি পলের পা থেকে বল পান আলভারেস। বাঁ দিক দিয়ে অরক্ষিত উঠছিলেন ডি মারিয়া। আলভারেসের থেকে বল পেয়ে আগুয়ান লরিসের উপর দিয়ে গোল করতে ভুল করেননি মারিয়া। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে খেলা যত গড়াল তত ম্যাচে দাপট দেখাতে শুরু করলেন এমবাপ্পে।
তিনি নিজের পছন্দের জায়গায় খেলা শুরু করতেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেন। বক্সের মধ্যে ওটামেন্ডি ফাউল করায় পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। গোল করেন এমবাপ্পে। দুই মিনিট পরেই বক্সের মধ্যে থেকে ডান পায়ের দুরন্ত শটে ফ্রান্সের হয়ে দ্বিতীয় গোল করেন এমবাপ্পে। অতিরিক্ত সময়েও আক্রমণ-প্রতি আক্রমণের খেলা চলতে থাকে। দ্বিতীয়ার্ধে গোল করেন মেসি। দেখে মনে হচ্ছিল আর্জেন্টিনা জিতে যাবে। কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে মন্তিয়েল বক্সের মধ্যে হ্যান্ডবল করায় পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। নিজের তিন নম্বর গোল করেন এমবাপ্পে। এরপর ভাগ্য নির্ধারণ হয় টাইব্রেকারে।