তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা এ পর্যন্ত সরকারি হিসেবে ১৭,০০০ ছাড়িয়ে গেছে। তুরস্কে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৪,০১৪ জন মানুষ। আর সিরিয়ায় কমপক্ষে ৩১৬২। কিন্তু বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা কয়েকগুন বেশি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এখনও ধ্বংসস্তূপের ভিতর থেকে বের করে আনা হচ্ছে জীবিতদের। ঘটনার চারদিন পেরিয়ে যাওয়ায় ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। সময় যত গড়াচ্ছে, এই সম্ভাবনা ক্ষীণ থেকে আরও ক্ষীণ হচ্ছে। খোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা তবু আশায় বুক বেঁধে আছেন। হয়তো, অলৌকিকভাবে জীবিত বের করে আনা হবে তাদের প্রিয়জনকে।
ওদিকে ভূ-বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূমিকম্পের ফলে আনাতোলিয় এবং আরবীয় টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে ২২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যুতিরেখা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে তুরস্ক তার আগের ভৌগোলিক অবস্থান থেকে ১০ ফুট দূরে সরে গিয়েছে। ইতালির ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কার্লো ডগলিয়োনি বলেছেন, টেকটোনিক প্লেটগুলির সঞ্চালনের কারণে তুরস্ক প্রায় ২০ ফুট পশ্চিমে সরে গেছে। এ খবর দিয়ে অনলাইন আল জাজিরা বলছে, দ্রুতই মানুষকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধারের আশা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং সিরিয়ার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে অনুসন্ধান ও উদ্ধার প্রচেষ্টাকে খুব ধীর গতির বলে সমালোচনা করেছেন অধিবাসীরা। তবে এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত তীব্র ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছিলেন কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা।
ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গাজিয়ানতেপ সফরে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান বলেছেন, তার দেশে নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ১৪,০১৪। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৬৩,০০০ মানুষ। ধ্বংস হয়ে গেছে কমপক্ষে ৬,৪০০ ভবন। তিনি এক বছরের মধ্যে ওই অঞ্চলে তিন এবং চারতলা ভবন নির্মাণের লক্ষ্য আছে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তুরস্কের কাহরামানমারাস থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক রসুল সরদার বলছেন, ওই শহরে শত শত ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এই শহরটি সোমবারের ভয়াবহ ভূমিকম্পের উৎসস্থলের খুব কাছে। সেখানে একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন ৪০ জন অতিথি এবং ২০ জন স্টাফ। তারা এখন ধ্বংসস্তূপের নিচে। এই ৬০ জন মানুষের কারোই এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সন্ধান মেলেনি।
তিনি উদ্ধার অভিযোন নিয়ে বলেন, একটি ভবনের ধ্বংসাবশেষের সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি। দুর্ভাগ্যজনক হলো এ ভবন থেকে কেউই জীবিত বেরিয়ে আসতে পারেননি। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন কিছু মৃতদেহ বের করে আনা হয়েছে। এগুলো আগুনে পুরোপুরি পুড়ে গেছে।