মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

ইউরোপে ২ বছরে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন অর্ধ কোটিরও অধিক বাংলাদেশি



ইউরোপে ২বছরে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন অর্ধ কোটিরও অধিক বাংলাদেশি লোকজন। যার মধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে সপ্তম।

জানাগেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে অবৈধ অনুপ্রবেশের পর উদ্বাস্তু হিসেবে স্বীকৃতি পেতে বাংলাদেশিরা মূলত ইতালি এবং ফ্রান্সকেই বেছে নিচ্ছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের উপাত্তে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
ইউরোপে অনেক অভিবাসন প্রত্যাশী ভূমধ্যসাগর দিয়ে অবৈধপথে পাড়ি জমান আবার কেউ যান বৈধপথে। বিগত দুই বছরে ৫০ হাজার ৭শ ৯০জন বাংলাদেশি ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। নিজ দেশে বর্ণ, ধর্ম, জাতীয়তা, রাজনৈতিক কারণে কেউ নির্যাতনের শিকার হলে বা কারও জীবন হুমকির মুখে থাকলে তিনি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ইউরোপের দেশগুলোতে সুরক্ষা চেয়ে আবেদন করতে পারেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কত সংখ্যক আবেদন জমা পড়ছে, তা নিয়ে ২০১৪ সাল থেকে প্রতিবছর হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে ইইউ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান ব্যুরো ইউরোস্ট্যাট জানিয়েছে, ২০২২ সালে ইতালিতে এসাইলাম কেইস করা নন-ইইউ দেশের তালিকায় শীর্ষে আছে বাংলাদেশিরা (১৪ হাজার ৫শ৯০)। বাংলাদেশের পরে রয়েছে পাকিস্তান (১১ হাজার ৩শ৭০), মিশর (৮ হাজার ৮শ৩৫), তিউনিসিয়া (৫ হাজার ৩শ৬৫) এবং জর্জিয়া (৩ হাজার ২শ৪০)। ইতালিতে অন্য সব দেশ মিলে ৩৩ হাজার ৮শ ৫ জন।

এবং ফ্রান্সে ২০২২ সালে আশ্রয় প্রার্থী নন-ইইউ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ২য় স্থানে রয়েছে। ফ্রান্সে গত বছর ২২ হাজার ৫শ৮৫ জন আফগান আশ্রয় প্রার্থনা করে, তালিকায় যার পরেই আছে ১০ হাজার ৫শ ৫৫ জন বাংলাদেশি। তৃতীয় অবস্থানে তুরস্ক (১০ হাজার ৫জন), জর্জিয়া (৮ হাজার ৯শ ৫জন) এবং কঙ্গো (৬ হাজার ৭শ ৬০জন)। ফ্রান্সে অন্য সব দেশ মিলে ৭৮ হাজার ৬শ ৯৫জন। এছাড়া বাংলাদেশের নাগরিকরা রোমানিয়ায় ১ হাজার ৩শ ৬০জন, স্লোভেনিয়ায় ৮শ২৫জন, মাল্টায় ৭৫ এবং স্লোভাকিয়ায় ৫৫ জন আশ্রয় প্রার্থনা করে।

ইউরোস্ট্যাট পরিসংখ্যানুযায়ী গত ২০২১ ও ২০২২ দুই বছরে সমস্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নে আশ্রয় প্রার্থনা করা নন-ইইউ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ৭ম স্থানে রয়েছে । এছাড়া প্রথম থেকে ষষ্ট স্থানে রয়েছে যথাক্রমে সিরিয়া, আফগানিস্তান, ভেনিজুয়েলা, তুরস্ক, কলম্বিয়া ও পাকিস্তান।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে ইতালি ও ফ্রান্সে ২০২১ ও ২০২২ সালে উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় আবেদন করা অধিকাংশ বাংলাদেশির কেইস ঝুলে আছে চরম অনিশ্চিত অবস্থায়।
একটা বড় অংশের আবেদন ইতিমধ্যে প্রত্যাখ্যাত (রিজেক্ট) হয়েছে। এর নেপথ্যে যে বিষয়গুলো কাজ করছে তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে ইউরোপীয় প্রশাসনের কাছে বাংলাদেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত কিংবা দুর্ভিক্ষপীড়িত কোন রাষ্ট্র নয়। কারণ হিসেবে আরও যোগ হয়েছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট কেলেংকারি অর্থাৎ বয়স কম দেখিয়ে নিজেদেরকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক দাবি করে আন্ডার এইজ কিন্ডার (বাম্বিনো) কেইস করার পর তার সাথে মিল রেখে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে চাহিদা মাফিক নতুন পাসপোর্ট পেতে বিড়ম্বনা। সব মিলিয়ে খুব একটা ভালো নেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে উদ্বাস্তু হতে আগ্রহী তথা আশ্রয়প্রার্থী বাংলাদেশের নাগরিকরা।

নন-ইইউ সব দেশ মিলিয়ে শুধুমাত্র ২০২২ সালে ৯ লাখ ৬২ হাজার ১শ৬০ জনের আবেদন জমা হয়। এর মধ্যে আবেদন গৃহীত হয় ৩ লাখ ৮৪ হাজার ২শ৮৫ জনের। কেইস এক্সেপ্ট যাদের হয়েছে তাদের ৪৪% পলিটিক্যাল এসাইলাম (রাজনৈতিক আশ্রয়), ৩১% সাবসিডিয়ারি প্রটেকশন (সহায়ক আশ্রয়) এবং ২৫% হিউম্যানিটারিয়ান প্রটেকশন (মানবিক আশ্রয়)। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- আশ্রয়প্রাপ্ত উদ্বাস্তুদের দেশের তালিকার প্রথম দশে নেই বাংলাদেশের নাম। প্রথম ১০ দেশ যথাক্রমে সিরিয়া (১ লাখ ৯ হাজার ৮শ১৫), আফগানিস্তান (৮৭ হাজার ৫শ৩০), ভেনিজুয়েলা (২২ হাজার ৩শ৫০), ইরাক (১৩ হাজার ৩৫), সোমালিয়া (১১ হাজার ৭শ৪০), তুরস্ক (১০ হাজার ৭শ৫০), ইউক্রেন (৯ হাজার ৪শ৪৫), নাইজেরিয়া (৯ হাজার ৪শ১৫), মালি (৮ হাজার ৫শ৬০) এবং ইরিত্রিয়া (৮ হাজার ১শ৪৫)।

জার্মানিতে সবচাইতে বেশি আবেদন মঞ্জুর হয়েছে উদ্বাস্তু হিসেবে ২০২২ সালে। ইউরোস্ট্যাটের হিসেবের খাতায় এই সংখ্যাটি ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩শ৬৫, যা ইইউ’র সব দেশে মোট আশ্রয়প্রাপ্ত উদ্বাস্তুর সংখ্যা ৪১%। জার্মানির পরের তিনটি দেশ হচ্ছে- ফ্রান্স (৪৯ হাজার ৯শ৯০), ইতালি (৩৯ হাজার ৬শ৬০) ও স্পেন (৩৫ হাজার ৭শ৬৫)।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন