ওষুধি গুণ সম্পন্ন ও মসলা হিসেবে দেশ-বিদেশে ব্যবহৃত গোল মরিচের দাম বলা যায় আকাশ ছোঁয়া। সংগত কারণে এর চাষাবাদ তাই লাভজনক। গোল মরিচের আদি উৎস দক্ষিণ ভারত হলেও পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো দেশেও এর চাষাবাদের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। কেননা, দেশের আবহাওয়া গোল মরিচ চাষাবাদের উপযোগি বলে গবেষকরা মনে করেন। ছায়াময় ও রস বিদ্যমান থাকা জমিতে এর উৎপাদন ভালো হয়। লতা বেড়ে ওঠার জন্য অবলম্বন স্বরূপ বাঁশের কঞ্চি বা অন্য গাছের ডালপালার প্রয়োজন হয়। তবে জমি ও শ্রম সাশ্রয়ের জন্য অবলম্বন স্বরূপ আম, কাঁঠাল, সুপারি প্রভৃতি গাছ ব্যবহার করা যেতে পারে। শাখা কলমের মাধ্যমে গোল মরিচের চাষাবাদ বিস্তার করা হয়। কলমের উপযুক্ত সময় হলো এপ্রিল-মে মাস। ফলন পেতে সময় লাগে ৩-৪ বছর। উপযুক্ত পরিচর্যায় একর প্রতি ১৫-১৭ মন গোল মরিচ উৎপাদন সম্ভব। সিলেট ও চট্টগ্রামে গোল মরিচ চাষাবাদে সাফল্যের খবর ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। উল্লেখ্য, গবেষকদের ধারণা, শুধু ভারতবর্ষে নয়, প্রাচীনকাল থেকে গোল মরিচের গুড়ো খাদ্যে মশলা হিসেবে ইউরোপ-আমেরিকাতেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পাকা অবস্থায় ফলের রং লালবর্ণ ধারণ করে। ভেতরে মাত্র একটা বিচি থাকে, যা গোল মরিচ/মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলের ব্যস ৫ মিলি মিটারের মতো।
ক্রমাগত জনপ্রিয় হওয়া ভুট্টার চাষাবাদে ফসল সংগ্রহে যতœবান হওয়া উচিৎ। গবেষক ও অভিজ্ঞ কৃষক/কৃষাণীরা বলেন দানার জন্য ভুট্টার সংগ্রহের ক্ষেত্রে মোচা চক্চক খড়ের রঙ এবং পাতা হলুদ বর্ণ-ধারণ করতে হবে। এ অবস্থায় মোচা থেকে ছড়ানো বীজ (দানা)’র গোড়ায় কালো দাগ দেখা যাবে। অন্যথায় ধরে নিতে হবে ভূট্টার দানা পরিপক্ক হয়নি। উল্লেখ্য, অপরিপক্ক ভুট্টা দানা সংগ্রহ চাষাবাদে ক্ষতির কারণ হয়ে থাকতে পারে। ভুট্টা গাছের মোচা ৭৫-৮০ শতাংশ পরিপক্ক হলে সংগ্রহ করা উচিৎ। এ ছাড়া বীজ হিসেবে সংগ্রহের জন্য অবশ্যই পরিপক্ক মোচার মাঝামাঝি অংশের বড় ও পুষ্ট দানা সযত্নে সংগ্রহ করতে হবে।
চাষাবাদে সাফল্যের জন্য ভালো বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। দেশে অনেক কৃষক/কৃষাণী নিজেদের চাষাবাদের প্রয়োজনে নিজেরাই বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করেন। উৎপাদন ও সংরক্ষণ কৌশল প্রয়োগের যথাযথ নিয়ম/কৌশলের অভাবে প্রায়ই তা মানের দিক থেকে ভালো হয় না। এ অবস্থাকে কাটাতে বিশুদ্ধ জাতের ও ভালো মানের ফসল থেকে অবশ্যই বীজ সংগ্রহ করতে হবে। এ ছাড়া বীজ সংগ্রহের জন্য বায়ু নিরোধ পাত্র/মোটা পলিথিন ব্যবহার করতে হবে। উল্লেখ্য, বীজ সংরক্ষণের পাত্রে নিমের পাতার গুড়া, ছাই বা শুকনো কাঠ কয়লা রাখলে বীজ ভালো থাকার সম্ভাবনা বাড়ে। মনে রাখা দরকার, উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে ভালো বীজও খারাপ হতে পারে।
একই সময়ে একই জমিতে একাধিক ফসল চাষাবাদ কৌশল ক্রমশ: দেশে জনপ্রিয় হচ্ছে। যা চাষাবাদে লাভজনকও প্রমাণিত হয়েছে। এমন খবর প্রায়ই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আসছে। আখের সংগে এখন অনেকেই গোল আলু, মিষ্টি আলু, শিম, লালশাক, পুঁইশাক, কুমড়া, লাউ প্রভৃতি সাফল্যের সংগে চাষাবাদ করছেন। উল্লেখ্য চাষাবাদে এ পদ্ধতিতে জমি তৈরি, পরিচর্যা, সার প্রয়োগ ও কীটনাশক প্রয়োগে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হয়ে থাকে।
প্রায় সারা বছরই লালশাক উৎপাদন সম্ভব হলেও শীত মৌসুমে এর উৎপাদন ভালো হয়। এর চাষাবাদের জন্য জমি খুব ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করতে হয়। লালশাক বীজ ছিটিয়ে ও সারিতে বপণ করা যেতে পারে। তবে সারিতে বপণ করলে পরিচর্যার সুবিধা হয়। এ ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ২০ সে.মি.। বীজ বপণের সময় বীজের সাথে সমপরিমাণ ছাই/বালু মিশিয়ে বপণ করলে বীজ সমতালে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। উল্লেখ্য, জমিতে রসের অভাব হলে ঝাঝরি দিয়ে হাল্কাভাবে পানি ছিটিয়ে দিলে বীজ গজাতে সহায়তা হয়।
শীতকালীন ফসল গম চাষাবাদের জন্য বীজ বপণের উপযুক্ত সময় নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। উঁচু ও মাঝারি দোআঁশ মাটিতে গমের চাষাবাদ ভালো হয়। দেশে গমের অনেক উচ্চ ফলনশীল জাত রয়েছে; যেমনÑ বিজয়, কাঞ্চন, শতাব্দী, আকবর, অঘ্রাণী প্রভৃতি। গমের বীজে গোবরের প্রলেপ দিয়ে বপণ করলে পাখির উপদ্রব কম হয় এবং বীজ রোদে শুকিয়ে যায় না। উল্লেখ্য, গমের বীজ সাধারণভাবে বপণ করলে প্রায়ই পাখি তা খেয়ে পেলে। এমতাবস্থায় কমপক্ষে ১৫ দিন পাখি তাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হয়। বীজে গোবরের প্রলেপের জন্য প্রথমে বীজ গোবর গোলানো পানিতে কয়েক ঘন্টা ডুবিয়ে রাখার পর তুলে শুকিয়ে নিতে হয়। এছাড়া বীজ বপণের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে গম ক্ষেতের আগাছা দমন করতে পারলে উৎপাদন ভালো হয়।
প্রায় সব রকম মাটিতে ধনিয়ার চাষাবাদ সম্ভব হলেও বেলে দোআঁশ মাটি ধনিয়া চাষাবাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগি। সাধারণত আগস্ট-জানুয়ারি পর্যন্ত এর চাষাবাদ হয়ে থাকে। এর জীবনকাল ৬০-৯০ দিন। উপযুক্ত পরিচর্যায় একর প্রতি দুই থেকে আড়াই টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। ধনিয়ার চাষাবাদে পানি নিষ্কাশনের দিকে সযতœ দৃষ্টি রাখতে হয়। এ ছাড়া প্রতিবার সেচের পর জমির জো আসামাত্র অবশ্যই মাটির চটা ভেঙ্গে দিতে হবে এবং আগাছা পরিস্কার করতে হবে। উল্লেখ্য, ধনিয়ার পাতা সবজি হিসেবে ব্যবহার/বাজারজাত করতে হলে পাতা কচি অবস্থায় সংগ্রহ/উত্তোলন করতে হবে।
লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী অনিয়মিত প্রকাশনা)।