শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

আব্দুর রশীদ লুলু

চাষাবাদ বিষয়ক টুকিটাকি -৩৫



 সময় ও চাহিদার প্রেক্ষিতে দেশে পান চাষাবাদে আগ্রহ সৃষ্টি হলেও উন্নত জাতের অভাবে ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। সাধারণত: দেশে পান চাষীরা দেশি জাতের পান চাষাবাদ করেন, যার ফলন/উৎপাদন কম হয়। এছাড়া ফলন কম হওয়ার আরেকটি অন্যতম কারণ সনাতন পদ্ধতির ব্যবস্থাপনা। এ ছাড়া অন্যান্য ফসলের তুলনায় পান চাষাবাদ অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ বলে সংশ্লিষ্টরা বলেন। পৃথিবী ব্যাপী অদ্যাবধি একশতটিরও বেশি পানের জাত শনাক্ত করা হয়েছে। দেশে বিভিন্ন এলাকার উৎপন্ন হয় এমন কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জাত হলো – মিঠা পান, বাংলা পান, ঝাল পান, জাইলো পান, সাচি পান প্রভৃতি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল, উন্নতমান সম্পন্ন ও রোগ বালাই প্রতিরোধক্ষম জাত হলো; বারি পান-১, বারি পান-২ এবং বারি পান-৩। উল্লেখ্য, পান দ্রুত পচনশীল হওয়ায় বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না তাই তাড়াতাড়ি বাজারজাত করতে হয়।

 অল্প পরিশ্রমে এবং কম সময়ে সহজেই হলুদ চাষাবাদ করা সম্ভব। পতিত ও বাড়ীর পার্শ্ববর্তী জমিতে যেখানে অন্যান্য ছোট ছোট গাছ রয়েছে সেখানেও হলুদ চাষাবাদ সম্ভব। হলুদ চৈত্র থেকে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত লাগানো যায়। লাগানোর ৭-৮ মাস পর হলুদ উত্তোলন করা যায়। উল্লেখ্য, হলুদ চাষাবাদ লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে ওঠছেন, এমন খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আসছে। হলুদের চারা গজানোর পর মাটির জো বুঝে ২/১ বার পানি সেচ ও সামান্য পরিমাণ সার প্রয়োগ করা ছাড়া এতে তেমন কোনো পরিশ্রম বা ব্যয় হয় না।

 বিভিন্নভাবে লাভজনক হওয়ায় এখন দেশে মৌমাছি চাষাবাদ ক্রমেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন প্রকার শত্রু ও রোগের আক্রমণে মৌমাছি কলোনি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় প্রায়ই সংশ্লিষ্টদের ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো, চাকের কুঠুরির ওপর মাকড়সার জালের ন্যায় আবরণের বিস্তার। বিশেষজ্ঞরা এটিকে মোমপোকার আক্রমণ বলে অভিহিত করে থাকেন। তাঁদের ধারণা, ভিজে ও স্যাঁতসেতে আবহাওয়ায় মোমপোকার আক্রমণ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। মৌমাছি চাষীদের তাই এদিকে সযত্নে দৃষ্টি দেয়া দরকার। মোমপোকার আক্রমণ প্রতিকারে মৌবক্স পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, পুরনো ও ময়লা চাক সরিয়ে ফেলা এবং পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দিয়ে বাক্সের মেঝে পরিস্কার রাখা উচিৎ। এরপরও প্রতিরোধ না হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

 বিদেশী ফল ড্রাগন এখন ক্রমশ: আমাদের দেশে জনপ্রিয় হচ্ছে। ড্রাগনের আরেক নাম পিটাইয়া। এটা এক ধরণের ক্যাকটাস গাছের ফল। এর ওষধি গুণও অনেক। ড্রাগন ফলের চারা তৈরি সহজ। বীজ দিয়ে এর চারা তৈরি করা গেলেও সেসব চারায় ফল ধরতে অনেক সময় লাগে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, কাটিং করে শাখা কলম করে চারা তৈরি করা ভালো। শাখা কলমের জন্য বয়স্ক ও শক্ত শাখা এক- দেড় ফুট লম্বা ও তেরছা করে কেটে ভেজা বালি বা বেলে দো-আঁশ মাটিতে লাগিয়ে দিলে ২০-৩০ দিনের মধ্যে তা থেকে শিকড় গজায়। তবে এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে মাটিতে যেন পর্যাপ্ত রস থাকে। এ ছাড়া রোপণকৃত শাখায় ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। উল্লেখ্য, কাটিং এর মাধ্যমে লাগানো গাছে বীজ থেকে লাগানো গাছের তুলনায় অনেক আগে ফল ধরে।

 চাষাবাদে আগাছা একটা বিরাট সমস্যা। চাষাবাদের সূচনা থেকেই মানুষ-জন এ সমস্যায় আক্রান্ত। আগাছা তার পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পানি, খাদ্য সামগ্রী ও আলো-বাতাসের জন্য চাষকৃত ফসলের সাথে প্রতিযোগিতা করে ও খাদ্যে ভাগ বসায়। এতে চাষকৃত ফসলের বাড়-বাড়ন্ত ও উৎপাদন হ্রাস পায়। যা চাষাবাদে ক্ষতিকর। চাষাবাদে ভালো ফলন প্রাপ্তি ও মাটির উর্বরতা সংরক্ষণের জন্য জমিকে অবশ্যই আগাছামুক্ত রাখতে সচেষ্ট থাকতে হবে।

 দেশের আবহাওয়া আদা চাষাবাদের জন্য খুবই উপযোগি। আদা চাষাবাদের উপযুক্ত সময় মধ্য চৈত্র হতে মধ্য বৈশাখ পর্যন্ত। সামান্য ছায়াযুক্ত স্থানে আদার চাষাবাদ ভালো হয়। লাগানোর ২০-২৮ দিনের মধ্যে আদার চারা বের হয়। চারা বের হওয়ার পর আগাছা দমন/উপড়ে ফেলা উচিৎ। আগাছা অথবা খড়-বিছালী দিয়ে চারায় আচ্ছাদন দেয়া ভালো। উল্লেখ্য, আদা উৎকৃষ্ট ওষধি গুণ সম্পন্ন মসলা জাতীয় ফসল। এতে উল্লেখযোগ্য পুষ্টিগুণও রয়েছে। এ ছাড়া এর চাহিদা দেশে-বিদেশে প্রচুর।

লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী অনিয়মিত প্রকাশনা)।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!