শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

আব্দুর রশীদ লুলু

চাষাবাদ বিষয়ক টুকিটাকি – ৪১



 প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ.বি.সি এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ ঢেঁড়শ চাষাবাদের জন্য কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জাত হলো- বারি ঢেঁড়শ-১, ওকে-২৮৫, গোল্ড কোষ্ট, পেন্টাগ্রীণ, পুশাসাওয়ানী প্রভৃতি। হাইব্রিড জাতের মধ্যে আছে- বিএসবিডি-২০০৩, বিএসবিডি-২০০৫, টেন্ডার-৫, অপূর্ব, তাজা, সিলভিয়া, গ্রীণ গ্লোরী, গ্রীণ এনার্জি প্রভৃতি। ঢেঁড়শ চাষাবাদের জন্য ২০-৩৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা উত্তম। এ ছাড়া রাত্রিকালীন উচ্চ তাপমাত্রা ঢেঁড়শ গাছ বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত সহায়ক। দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতে ঢেঁড়শের চাষাবাদ ভালো হলেও পানি নিষ্কাশনের সুবিধা সম্বলিত এঁটেল মাটিতেও এর চাষাবাদ সম্ভব। উল্লেখ্য, গ্রীষ্মকালীন এ সবজিতে আয়োডিন থাকায় নিয়মিত খেলে গলগল্ড রোগ না হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর।

 উফশী জাতের একটি ভালো মুলা হলো বারি মুলা-১। এর কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট রয়েছে; যেমন-দেখতে অত্যন্ত সাদা এবং অনেকটা বেলুন আকৃতির। পাতা শাক হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী, খেতে সুস্বাদু ও প্রায় শাঁসবিহীন, উপযুক্ত পরিচর্যায় লম্বায় ৩০-৪০ সে. মি এবং ওজন ৯০০-১১০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়, বপণের ৪০-৪৫ দিনের পর থেকেই সংগ্রহের উপযোগী হয়। এ ছাড়া বারি মুলা-১ এর বেশিরভাগ অংশ মাটির ওপরেই জন্মে। উপযুক্ত পরিচর্যায় চাষাবাদে এ মুলার ফলন হেক্টর প্রতি ৭০-৮০ টন হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, মুলা চাষাবাদের জন্য ১০-২০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা সবচেয়ে উপযোগী।

 মসলা এবং সবজি হিসেবে ব্যবহৃত পেঁয়াজ দেশে চাহিদার তুলনায় অনেক কম চাষাবাদ হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন দেশে পরিকল্পিত ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে পেঁয়াজের চাষাবাদ লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। আগাছামুক্ত ঝুরঝুরে এবং সমতল মাটি পেঁয়াজ চাষাবাদের জন্য উত্তম। বীজ বপণের উপযুক্ত সময় মধ্য আশ্বিন- মধ্য কার্তিক। উল্লেখ্য, মানব শরীরের জন্য পেঁয়াজ অত্যন্ত উপকারী। পেঁয়াজের ডাঁটা এবং পাতা ভিটামিন সি এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ। পেঁয়াজের চাষাবাদ ১৫-২৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ভালো হয়।

 প্রোটিন সমৃদ্ধ পুষ্টিকর সবজি মটরশুটির বিভিন্ন জাত রয়েছে। এর মধ্যে দেশে চাষাবাদ উপযোগী কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জাত হলো বারি মটর শুটি-১, বারি মটরশুটি-২, ইপসা মটরশুটি-১, ইপসা মটরশুটি-২, ইপসা মটরশুটি-৩, আর্লি জায়েন্ট, আর্লি ওয়ান্ডার, আমেরিকান ওয়ান্ডার, গ্রীণ ফিস্ট প্রভৃতি। পানি নিষ্কাশনের সুবিধা সম্বলিত দোআঁশ মাটি মটরশুটি চাষাবাদের জন্য উপযোগী। আশ্বিন-কার্তিক মাস বীজ বপণের যথোপযুক্ত সময়। সাধারণত প্রতি শতকে ১৫-২০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়, বীজ বপনের দুই মাস পর থেকে ৩/৪ দিন পর পর কাঁচা মটরশুটি সংগ্রহ/উত্তোলন করা যায়। তবে ডাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য মটরশুটি শুকিয়ে খড়ের রং ধারণ করলে সংগ্রহ করতে হয়।

 জায়গার অভাব ও রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধার্থে অনেকেই বাসা-বাড়ীর ছাদে/বারান্দায় টবে টমেটো (এবং অন্যান্য শাক-সবজি ও ফল-মূলে)র চাষাবাদ করে থাকেন। এটা বিভিন্ন দিক থেকে অবশ্য লাভজনকও। যা হোক টবে টমেটো চাষাবাদের ক্ষেত্রে দুই ভাগ মাটির সাথে এক ভাগ জৈব সার (যেমন গোবর, পঁচা পাতা-লতা, হাঁস-মুরগীর পুরাতন বিষ্টা, রান্না ঘরের পুরাতন উচ্ছিষ্ট ইত্যাদি) ভালোভাবে মিশিয়ে টব ভর্তি করতে হবে। এ ছাড়া অন্যান্য শাক-সবজির মতো পরিচর্যার সাথে সাথে চারা রোপণের ১৫ দিন পর (গাছের বৃদ্ধির পর্যায়ে) টব প্রতি ২০ গ্রাম করে ইউরিয়া, টিএসপি এবং এমপি সার প্রয়োগ করলে গাছের বাড়-বাড়ন্ত ভালো হয়। ফলে ভালো ফলন পাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।

 খেতে তিতে হলেও রুচিবর্ধক ও পুষ্টিকর সবজি করলায় রয়েছে প্রচুর আয়রন ও ভিটামিন সি এবং কিছু ক্যারোটিন। এ ছাড়াও প্রচুর ওষধী গুণ সমৃদ্ধ এ সবজি সহজেই সারা দেশে চাষাবাদ সম্ভব। করলার হাইব্রিড কয়েকটা জাত হলো হীরা-৩০৪, বিএসবিডি-১৫০২, গৌরব, ইউরেকা, টিয়া, প্রাইম, ইউনিক, হীরক, মণি প্রভৃতি। ভালো ফলন ও পরিচর্যার সুবিধার জন্য করলা সারিতে চাষাবাদ করা উত্তম। এ ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব হবে ২ মিটার করে। করলা চাষাবাদের জন্য মাটির অম্লমান ৬-৭ হলে ভালো হয়। দোঁআশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতে চাষাবাদ ভালো হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে যে কোন মাটিতে করলার চাষাবাদ সম্ভব। বন্যামুক্ত ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধা সম্বলিত জমিতে সারা বছর করলার চাষাবাদ করা যায়। উল্লেখ্য, দেশের আবহাওয়া করলার চাষাবাদের উপযোগী। করলা গাছের জন্য বাউনীর ব্যবস্থা করতে হয়। এর চাষাবাদ সংশ্লিষ্টরা বলেন, করলার বাউনী নিচু হলে ভালো হয়।

 কাঁচা এবং পাকা উভয় অবস্থায় খাওয়ার উপযোগী ভিটামিন এ সমৃদ্ধ মিষ্টি কুমড়ার দেশে চাষাবাদ উপযোগী অনেক গুলো জাত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জাত হলো শান্তি-১, শান্তি-২, ব্যাংকক-১, ব্যাংকক-২, পিকে-১. সলিড গোল্ড, ড্রীম গোল্ড, থান্ডার বল, সুইটি বল প্রভৃতি। দোআঁশ এবং এঁটেল দোআঁশ মাটি মিষ্টি কুমড়া চাষাবাদের জন্য উপযোগী। ভালো ফলনের জন্য গাছের অতিরিক্ত লতাপাতা ছেঁটে দেয়া প্রয়োজন বলে এর চাষাবাদ সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এ ছাড়া ভালো ফলনের জন্য সকাল বেলা হস্ত পরাগায়ণও করা যেতে পারে। চারা গজানোর ৬০-৭০ দিন পর সাধারণত মিষ্টি কুমড়া গাছে ফল আসতে শুরু করে। উপযুক্ত পরিচর্যায় হেক্টর প্রতি এ সবজির ফলন ২০-৩০ টন পর্যন্ত হতে পারে।

লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী অনিয়মিত প্রকাশনা)।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!