প্রধানত শীতকালীন সবজি লাউয়ের দেশে চাষাবাদ উপযোগী অনেকগুলো ভালো জাত রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি উফসী জাত হলো বারি লাউ-১, ডালিসা, গ্রীণ ডায়মন্ড, বিগচয়েচ, ক্ষেত লাউ প্রভৃতি। হাইব্রিড জাতের মধ্যে আছে এএসবিডি- ১৪০১, বিএসবিডি-১৪০৪, জামালী, ঝিনাই, রাজা, রাণী, গ্রীণ সুপার, গ্রীণ সার্জেন্ট, মার্টিনা, বর্ষা প্রভৃতি। লাউয়ের বীজ বপণের উপযুক্ত সময় মধ্য ভাদ্র-মধ্য কার্তিক পর্যন্ত। লাউ চাষাবাদের জন্য দেশে সাধারণত মাদায় বীজ লাগানো হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, লাউ চাষাবাদের জন্য পলিব্যাগে চারা তৈরি করা ভালো। এতে বীজের যেমন সাশ্রয় হয়, তেমনি হৃষ্ট-পুষ্ট চারাও পাওয়া যায়। গাছ একটু বড় হলে পরিকল্পিত স্থানে চারা রোপণ করা যেতে পারে।
দেশে চাষাবাদ উপযোগী ডাঁটার অনেকগুলো ভালো জাত রয়েছে; যেমন- সুরেশ্বরী, রেড টাওয়ার, লাবণী, ভুটান কিং, ভুটান সফট, আমনী (আমলী), আঁখি, রেড ফোর্স, কাটোয়া ইত্যাদি। পানি জমে না এমন সব ধরণের মাটিতে ডাঁটার চাষাবাদ সম্ভব হলেও বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটিতে এর ফলন ভালো হয়। বন্যামুক্ত ও সেচ সুবিধা সম্বলিত জমিতে প্রায় সারা বছর ডাঁটার চাষাবাদ সম্ভব হলেও ভালো ফলনের জন্য মার্চ-জুলাই মাস বীজ বপণের উপযুক্ত সময়।
সব ধরণের মাটিতে শিমের চাষাবাদ সম্ভব হলেও বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটিতে শিমের ভালো ফলন পাওয়া যায়। পানি নিষ্কাশনের সুবিধা সম্বলিত জায়গায় এ সবজির চাষাবাদ করতে হয়। পেঁপে গাছের ন্যায় শিম গাছ দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না। যদিও পর্যাপ্ত ফুল ও ফল ধরার জন্য জমিতে যথেষ্ট পরিমাণ রস থাকা উচিৎ। শিমের ভালো চাষাবাদের জন্য বীজ বপণের উপযুক্ত সময় আষাঢ়-ভাদ্র মাস পর্যন্ত। উল্লেখ্য, শিম একটি পুষ্টিকর এবং আমিষ সমৃদ্ধ সবজি। এ ছাড়া শিমের পরিপক্ব বীজে প্রচুর আমিষ ও স্নেহ জাতীয় পদার্থ রয়েছে। শিমের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জাত হলো- কার্তিকা, বারি শিম-১, বারি শিম-২, বারি শিম-৪, ইপসা শিম-১, ইপসা শিম-২, বিইউ শিম-৩, নলডক, ঘৃতকাঞ্চন, বারোমাসি, বারোমাসি বেগুনি শিম, বারোমাসি সাদা শিম প্রভৃতি।
শীতকালীন একটি জনপ্রিয়, পুষ্টিকর ও সুস্বাদু সবজি পালংশাক। চাষাবাদের জন্য এর কয়েকটি ভালো জাত হলো- অল গ্রীণ, সবুজ বাংলা, কপি পালং, সাঁথী, ইভান, ব্যানার্জি জায়েন্ট, নবেল জায়েন্ট, পুষা জয়তি প্রভৃতি। এর চাষাবাদের জন্য দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি উত্তম। বীজ বপণের উপযুক্ত সময় সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত। বীজ বপণের আগে জমির মাটি ঝুরঝরে করে নিতে হয়। বপণের পূর্বে বীজ ২৪-৪৮ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে সহজেই অঙ্কোরোদগম হয়। পালংশাকের বীজ সারিতে বপণ করা ভালো। এ ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ২৫ সে.মি এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব হবে ১০-১৫ সে.মি।
দেশে চাষাবাদকৃত পাতা জাতীয় সবজির মধ্যে একটি অন্যতম সবজি পুঁইশাক। পুঁইশাক দেশের অন্যতম প্রধান গ্রীষ্মকালীন সবজি হলেও প্রায় সারা বছর এর চাষাবাদ করা যায়। বাণিজ্যিকভাবে জমিতে ব্যাপকহারে চাষাবাদের পাশাপাশি পারিবারিক চাহিদার জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় ও টবে সহজেই এর চাষাবাদ করা যায়। দুই ধরণের পুঁইশাক রয়েছে; একটি লাল এবং অপরটি সবুজ। চাষাবাদের জন্য উল্লেখযোগ্য পুঁইশাকের জাত হলো- বারি পুঁইশাক-১ (চিত্রা), ঘৃতকাঞ্চন, মনীষা, রূপসা গ্রীণ ইত্যাদি। সাধারণত: বর্ষায় পানি ওঠে না এমন উঁচু জায়গায় বেলে দোআঁশ থেকে এঁটেল দোআঁশ মাটি পুঁইশাক চাষাবাদের উপযোগী। উল্লেখ্য, পাতা জাতীয় সবজিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ থাকে। বিজ্ঞানীরা বলেন, মানসিক ও শারীরিক গঠনের জন্য ভিটামিন ‘এ’ বিশেষ প্রয়োজনীয়। তাই ভিটামিন ‘এ’র প্রয়োজনে নিয়মিত পাতা জাতীয় সবজি খাওয়া প্রয়োজন।
টমেটোর চাষাবাদের অনেকগুলো ভালো জাত রয়েছে। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য জাত হলো বারি টমেটো-১ (মানিক)। এ জাতের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে; যেমন- গাছের উচ্চতা ১০০-১১০ সে.মি হয়ে থাকে। ফল কিছুটা লম্বাটে। উপযুক্ত পরিচর্যায় গাছ প্রতি ফলন আড়াই থেকে তিন কেজি পর্যন্ত হয়। চারা লাগানোর ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে টমেটো পাকতে শুরু করে। এ ছাড়াও ১০৫-১১০ দিন জীবনকালের এ জাতের ব্যাকটেরিয়াজনিত ঢলে পড়া রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও রয়েছে। এ জাতের টমেটোর চাষাবাদ লাভজনক। উল্লেখ্য, টমেটোতে যথেষ্ট পরিমাণ আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘সি’ বিদ্যমান। গবেষকদের ধারণা, মধ্য আমেরিকা টমেটোর উৎপত্তি স্থান।
পেঁপের চাষাবাদে ভালো ফলন পেতে জাত নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে চাষাবাদ উপযোগী পেঁপের একটি আধুনিক ও ভালো জাত হলো বারি পেঁপে-১ (শাহী পেঁপে)। পানি নিষ্কাশনের সুবিধা সম্বলিত দোআঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটি পেঁপে চাষাবাদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এ ছাড়া রস ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন যে কোনো মাটিতে পেঁপের চাষাবাদ করা যেতে পারে। তবে অম্লযুক্ত মাটিতে এর চাষাবাদ ভালো হয় না। জমিতে ছিটিয়ে বীজ বপণের সাথে সাথে পলিব্যাগেও চারা উৎপাদন করা যেতে পারে। কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে চৈত্রের মাঝামাঝি পর্যন্ত বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। মাটি শুষ্ক থাকলে বীজ বপণের পর হাল্কা সেচ দেয়া প্রয়োজন। উল্লেখ্য, পেঁপে কাঁচা এবং পাকা উভয় অবস্থায় খাওয়া উপকারী। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমের পরই পাকা পেঁপে ভিটামিন ‘এ’ এর প্রধান উৎস। এ ছাড়াও, কাঁচা পেঁপেতে প্রচুর ‘পেপাইন’ নামক এক প্রকার হজমকারী পদার্থ বিদ্যমান, যা মানুষের খাদ্যদ্রব্য হজমে সাহায্য করে। একই সাথে কাঁচা পেঁপের আঠা ও বীজ কৃমিনাশক এবং যকৃতের জন্য উপযোগী।
লেখক: সম্পাদক – আনোয়ারা (শিকড় সন্ধানী অনিয়মিত প্রকাশনা)।