১.
সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্ররা, তাঁদের নির্বাচনী প্রচারণার জন্য বিভিন্ন পোস্টার, ব্যানার,ফেস্টুন সাঁটানোর ক্ষেত্রে, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গগণশিরিষ, দেবদারুসহ আরো অনেক গাছে পেরেক ঠুকে দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়াদের এই অবিবেচক আচরণ এবং অমানবিক কাজ হয়ত তাঁদের অজ্ঞতা, অপরিণামদর্শিতা এবং বিচক্ষণতার অভাবে হয়েছে অথবা তাঁদের উগ্রতার কারণে কিংবা তাঁদের অসতর্কতার জন্য হয়েছে।তবে যে কারণেই হোক,জ্যান্ত গাছগুলো সত্যি ব্যথা পেয়েছে। পেরেক ঢুকানোর কারণে গাছগুলো আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। এটি প্রমাণিত সত্য যে তাতে গাছের প্রভূত ক্ষতি হয়।
২.
এ ঘটনা প্রমাণ করে,অনেক শিক্ষিত সমাজেও, অনেকক্ষেত্রে গাছ সুরক্ষিত নয়। তাঁরাও ব্যর্থ হন গাছের সাথে ন্যায্য সদ্ব্যবহার দেখাতে। এবং তা হয়ত রাষ্ট্রীয় আইনেরও লঙ্ঘন।
৩.
সৃষ্টিকর্তা, বৃক্ষ, লতা-পাতা, ফল ও ফুলকে মানুষের উপকারের জন্যে সৃষ্টি করে যে যে বিশেষ কাজ তাদেরকে দিয়েছেন, তারা অনবরত সে কাজ করে যাচ্ছে এবং নিজ নিজ কর্তব্য পালন করে মানুষের উপকার সাধন করে যাচ্ছে, তাদের এই বাধ্যতামূলক আনুগত্যকেই হয়ত কুরআনের ৫৫ নাম্বার সূরার ৬ নাম্বার আয়াতে সিজদা বলে ব্যক্ত করা হয়েছে :
وَّ النَّجۡمُ وَ الشَّجَرُ یَسۡجُدٰنِ
অর্থ :
তৃণলতা ও গাছপালা (আল্লাহরই) সিজদাহ করে।
আরেক অর্থ :
তারকা ও বৃক্ষ উভয়ে (আল্লাহকে) সিজদা করে।
তাছাড়া, গাছসহ অন্যান্যদের সিজদা করার কথা ২২ নাম্বার সূরার ১৮ নাম্বার আয়াতেও বলা হয়েছে।
৪.
আল-ইসরা কুরআনের ১৭ নাম্বার সূরা, এরমধ্যে ৪৪ নাম্বার আয়াতে বলা হয়েছে, এ পৃথিবীর সবকিছু আল্লাহর তাসবীহ অথবা মহিমা ঘোষণা করে যাচ্ছে (তাদের স্ব স্ব কাজ দ্বারা), যদিও সাধারণত মানুষ তা বুঝতে সক্ষম নয়।
تُسَبِّحُ لَهُ السَّمٰوٰتُ السَّبۡعُ وَ الۡاَرۡضُ وَ مَنۡ فِیۡهِنَّ ؕ وَ اِنۡ مِّنۡ شَیۡءٍ اِلَّا یُسَبِّحُ بِحَمۡدِهٖ وَ لٰکِنۡ لَّا تَفۡقَهُوۡنَ تَسۡبِیۡحَهُمۡ ؕ اِنَّهٗ کَانَ حَلِیۡمًا غَفُوۡرًا
“সাত আকাশ ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছু তাঁর তাসবীহ পাঠ করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর প্রসংশায় তাসবীহ পাঠ করে না, কিন্তু তাদের তাসবীহ তোমরা বুঝ না। নিশ্চয় তিনি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ।”
৫.
যারা স্রষ্টার সিজদায় রত, যারা স্রষ্টার তাসবীহে লিপ্ত, যারা তাঁর কাজে নিয়োজিত, যারা মানুষের উপকারে সদা ব্যস্ত,যারা পৃথিবীর কন্যাণে ব্যাপৃত তাদের সাথে এই হীন আচরণের সংশোধন হওয়া প্রয়োজন।এবং প্রকৃতি বিরোধী এই প্রকৃতির জন্য তাওবা করা প্রয়োজন।এবং প্রয়োজন সচেতনা বৃদ্ধির।
লেখক: মুফতি