আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে রবিবার (১৯ নভেম্বর) ১ লাখ ৩২ হাজার দর্শকের সামনে ভারতই ফেবারিট, ম্যাচ শুরুর আগে ছিল এই আলোচনা। তবে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স বলেছিলেন, ফুল প্যাকড স্টেডিয়ামকে স্তব্ধ করে দিতে চান তারা। সেটা শুধু কথায় না, করে দেখালেন কামিন্সরা। অস্ট্রেলিয়া যখন বিজয়-উল্লাস করছে, পুরো স্টেডিয়ামে তখন পিনপতন নীরবতা। প্রায় অজেয় হয়ে উঠা ভারত ফাইনালে এসেই প্রথম হার দেখলো, সেটাই হলো শেষ।
বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ৬ উইকেটে হারিয়ে ষষ্ঠ বারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে নিলো অস্ট্রেলিয়া। হার দিয়ে শুরু করা অজিরা আসরে শেষ পর্যন্ত নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলো। ভারতের ছুড়ে দেয়া ২৪১ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ৪৩ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় প্যাট কামিন্স বাহিনী। পুরো আসরে রাজত্ব করে আসা ভারত যেন ফাইনালে নিজেদের ছন্দ হারিয়ে ফেলে।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে ২৪১ রানের টার্গেট ফাইনালের জন্য কিছুটা কমই হয়েছিল। ২৪১ রান তাড়া করতে নেমেই হোঁচট খায় অজিরা। ওয়ার্নার ৩ বলে ৭ রান করে সাজঘরে ফেরেন শামির বলে। এরপর মিচেল মার্শ ও স্টিভেন স্মিথও টিকতে পারেননি। মার্শ ১৫ বলে ১৫ ও স্মিথ ৯ বলে ৪ রান করে ফেরেন সাজঘরে। কিন্তু দেখে শুনে খেলতে থাকা ট্রাভিস হেড তার কথা মতো জয়ের দরজার কাছে এনে দেয় নিজের দলকে। চতুর্থ উইকেটে ট্রাভিস হেড ও লাবুশেন ১৯২ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন । তাদের জুটিতে ভর করে ২০১৫ সালের পর ফের শিরোপা জিতল অস্ট্রেলিয়া। এর আগে ১৯৮৭, ১৯৯৯, ২০০৩, ২০০৭,২০১৫ সালে বিশ^কাপে ট্রফি জয় করেছিল অস্ট্রেলিয়া।
প্রথমে আহমেদাবাদে টসে জিতে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। এর আগে প্রথমে বোলিং করা ম্যাচগুলোতে অনেকটা খেটে খেলে জিততে হয়েছে তাদের। এই ম্যাচেও শুরুর দিকে তেমন সুবিধা করতে পারেনি কামিন্সরা। তবে এবার অজি বোলারদের তোপের মুখে টিকতে পারেননি ম্যান ইন ব্লুরা। বিরাট কোহলি আর লোকেশ রাহুলের লড়াকু ফিফটির কারণে শেষ পর্যন্ত পুরো ৫০ ওভার খেললেও ২৪০ রানে গুটিয়ে যায় ভারতের ইনিংস। শুরুটা ঝড়ো হলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি কোনো ব্যাটারই। ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ১০৭ বলে ৬৬ রানের ইনিংস খেলেন লোকেশ রাহুল। এবারের আসরে ফর্মে থাকা শুভমান গিল ৭ বলে ৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন। হাফসেঞ্চুরির দোরগোড়া থেকে ৩১ বলে ৪৭ রান তুলে ম্যাক্সওয়েলের বলে ট্রাভিস হেডের দুর্দান্ত এক ক্যাচ হয়ে সাজঘরে ফেরেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
রোহিতের পর উইকেটে এসে আক্রমণাত্মক শুরুর চেষ্টা করেও শ্রেয়াস আইয়ার ৩ বলে ৪ রান করে ফেরেন সাজঘরে। ৮১ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর বিরাট কোহলি আর লোকেশ রাহুল দাঁতে দাঁত চেপে ক্রিজে পড়ে থাকার চেষ্টা করেন। চতুর্থ উইকেটে ১০৯ বল খেলে তারা ধীরগতিতে যোগ করেন ৬৭ রান। অবশেষে এই জুটিটি ভেঙে দেন প্যাট কামিন্স। বিরাট কোহলি তার দুর্দান্ত ডেলিভারিতে ইনসাইডেজ হয়ে বোল্ড হয়েছেন। ৬৩ বলে ৪ বাউন্ডারিতে কোহলির দায়িত্বশীল ইনিংসটি ছিল ৫৪ রানের। রবীন্দ্র জাদেজাও ২২ বলে ৯ রান করে হ্যাজেলউডের বলে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ তুলে দেন। এরপর ৬৬ রান করে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রাহুল। ১০৭ বলের ইনিংসে মাত্র একটি বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। মোহাম্মদ শামি ৬, সূর্যকুমার ১৮, বুমরাহ ১ ও কুলদিপ ১০ রান করে সাজঘরে ফিরে যান। অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক ৩টি, প্যাট কামিন্স আর জস হ্যাজেলউড নেন ২টি করে উইকেট।
এদিকে শিরোপা জিতে বড় অঙ্কের প্রাইজমানি পেয়েছে অজিরা। চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় কামিন্সের দল পেয়েছে ৪০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৪ কোটি ২৫ লাখ টাকারও বেশি। চ্যাম্পিয়ন দলের পাশাপাশি বড় অঙ্কের অর্থ পুরস্কার পেয়েছে রানার্সআপ ভারতও।
তারা পেয়েছে ২০ লাখ ইউরো। অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় ২২ কোটি ১২ লাখ টাকারও বেশি। এছাড়া, সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়া দুই দল পাবে ৮ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকার মতো।
১০ দলের বিশ্বকাপের প্রথম পর্বেই আটকে গেছে ছয়টি দল। তারা হলো পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডস। এদের প্রত্যেকে পাবে ১ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি)। তাছাড়া, প্রথম পর্বে জেতা প্রতিটি ম্যাচের জন্য দলগুলোর পকেটে ঢুকেছে ৪০ হাজার ডলার করে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪৪ লাখ টাকার বেশি)।
সব মিলিয়ে ১ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১০ কোটি টাকার বেশি) চলমান বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর জন্য প্রাইজমানি হিসেবে বরাদ্দ করা হয়েছে। হতশ্রী পারফরম্যান্সে আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কেবল দুটি ম্যাচ জিতে প্রথম পর্ব থেকে বাদ পড়ে যাওয়া বাংলাদেশের প্রাপ্তি প্রায় ২ কোটি টাকা।