সিলেটের চা বাগানগুলোতে উড়িয়া, ভোজপুরি (দেশোয়ালি), তেলেগু, কুরুখ, ককবরক, আচিক, সাদরি, মুণ্ডারি, সাঁওতালি, ছত্তিসগড়ি ইত্যাদি ভাষার মানুষ বসবাস করেন। সাম্প্রতিক লেখালেখিতে সিলেটের চা বাগানগুলোতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা চর্চার হতাশজনক চিত্র উঠে এসেছে। বর্তমান প্রজন্মের অনেকে নিজ মাতৃভাষার নাম পর্যন্ত জানে না। অনেক জাতিগোষ্ঠী দুই/তিন প্রজন্ম আগেই নিজ মাতৃভাষা হারিয়ে বাংলা ভাষায় আত্তীকৃত হয়েছে। চা বাগানগুলোতে উড়িয়া ভাষার একটা ধারা প্রবাহিত হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের তথ্যের ভিত্তিতে আলোচ্য প্রবন্ধে চা শ্রমিকের উড়িয়া ভাষা পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোকপাত করা হবে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা জরিপ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের চা বাগানগুলোতে একাত্তর ধরনের ক্ষুদ্রজাতিসত্তার মানুষ আছে। এসব মানুষকে ভারতের উড়িষ্যা, বিহার, ছত্তিসগড়, আসাম, ঝাড়খ-, ইত্যাদি এলাকা থেকে এনে চাশ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অভিবাসিত জাতিবর্ণের অনেকেই তাদের মূল ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়েছেন। অনেকে আবার তা নিষ্ঠার সাথে লালন-পালন করে চলেছেন। দুষ্টকূটচক্রের ফাঁদে পড়ে মূল আবাসস্থল থেকে বিচ্যুত হয়ে আজ তারা বাংলাদেশের ভূমিহীন নাগরিক। বলা হয়ে থাকে চাবাগানের জীবন শান্তিপূর্ণ পৃথক জীবন। কিন্তু তাদের জীবনযাত্রার মান দারিদ্র্য সীমার বহু নিচে। তারা তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ শ্রম দিয়ে এদেশের জাতীয় জীবনকে আলোকিত করতে অবদান রাখছেন। আজ তাদের ভাষা, সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি বহুলাংশে হুমকির সম্মুখীন। চাবাগান বাসিন্দাদের জীবন- দারিদ্র্যক্লিষ্ট সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যময় জীবন। প্রকৃতি-সংলগ্ন এই জীবনধারা থেকে বহু অভিজ্ঞতা, বহু জ্ঞান, বহু সংস্কৃতি, বহু ভাষা চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
বাংলাদেশে উড়িয়া ভাষী মানুষ চেনার উপায় হচ্ছে তারা তাদের নামের শেষে রাজবল্লভ, বোনার্জি, তাঁতি, তংলা, নায়েক, চাষা, গোয়ালা, কন্দ ইত্যাদি পদবি ব্যবহার করেন। এসব পদবিধারী ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করে জানা যায় বাংলাদেশে বেশির ভাগ বাগানে উড়িষ্যা থেকে আগত মানুষ বসবাস করছেন এবং এখনও তারা তাদের মাতৃভাষা উড়িয়াকে ভুলে যাননি। তারা যেখানেই বসবাস করছেন ত্রিশ থেকে চল্লিশটি পরিবার একসাথে আছেন। মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার ধামাই চা বাগানে কটকটিলা নামে একটা স্থান আছে যেখানে সবাই উড়িষ্যার কটক জেলা থেকে আগত এবং সবাই উড়িয়া ভাষায় কথা বলেন। কটক থেকে আগত বলে স্থানের নাম কটকটিলা। একই ভাষাভাষী মানুষ একত্রে থাকার সুবাদে তারা নিজ ভাষাসহ সমাজ সংস্কৃতি লালন করার একটা সুবিধা ভোগ করছেন। তাই চা বাগানে উড়িয়া ভাষার ব্যবহার অন্যান্য ভাষার তুলনায় বেশ ভালো বলা যায়।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফুলছড়া চা বাগানের গোপেশ চন্দ্র বোনার্জি যিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট। তার মাতৃভাষা তিনি জানেন বোঝেন কিন্তু তার আশেপাশে উড়িয়া জানা লোক না থাকায় তিনি উড়িয়া ব্যবহার করতে পারছেন না। যখন তার মা-বাবা ছিলেন তখন তার পরিবারে উড়িয়া ভাষায় কথাবার্তা চলত। এখন সেই সুযোগ নেই। সন্তানরা উড়িয়া জানে বোঝে কিন্তু নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র ও বাসস্থানে উড়িয়া ভাষায় কথা বলার মতো লোক নাই বিধায় তাদের মধ্যে উড়িয়া ভাষার ব্যবহার ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে।
এভাবে প্রচুর উড়িয়া পরিবার আছে যাদের মাতৃভাষা চর্চার সুযোগ সীমিত। ভাষাচর্চায় মনোযোগী না হওয়ার কারণ হিসেবে গোপেশ চন্দ্র বোনার্জির মন্তব্য হচ্ছে, ‘যেখানে মানুষের মৌলিক চাহিদাই মেটাতে পারে না, সেখানে মাতৃভাষার চর্চা কিংবা সাহিত্য, সংস্কৃতির চর্চার কথা কেউ কল্পনাও করতে পারে না।’ তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত উড়িয়া ভাষীর মধ্যে নিজ ভাষা ও সংস্কৃতিকে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে একটা সংকোচ প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
অন্যদিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালীঘাট চা বাগানের তাঁতি পদবির লোক মনি তাঁতির পাড়ায় উড়িয়া ভাষার পরিস্থিতি অনেক ভালো। তার আশেপাশের সবাই উড়িয়াভাষী। মনি তাঁতির জন্ম বাংলাদেশে হলেও তার পূর্বপুরুষ এসেছেন ব্রিটিশ আমলে উড়িষ্যার কটক জেলার গঞ্জামটিলা থেকে। মাতৃভাষা উড়িয়ায় তিনি বলতে, লিখতে ও পড়তে পারেন। তার কাছে উড়িয়া ভাষার পাঁচখানা প্রাচীন গ্রন্থ সংরক্ষিত আছে। বাল্যশিক্ষার বই ‘চাটসালি’, ‘চ-ীপুরাণ’, ‘স্বভাবীনন্দন’, ‘শিবপুরাণ’ ও ‘তুস্তি চিন্তামনি’- এই পাঁচখানা বই উড়িয়া লিপিতে লেখা। তিনি তার আশেপাশের বাচ্চাদের উড়িয়া বর্ণমালা লিখতে ও পড়তে শেখান। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি উড়িয়া ভাষা শেখানোর জন্য একটি স্কুল করবেন বলে চিন্তা করে রেখেছেন। বর্তমানে তার বয়স সত্তর বছর। তার কাছে সংরক্ষিত বাল্যশিক্ষার বইয়ের নাম ‘চাটসালি’। বইটিতে রয়েছে যথাক্রমে উড়িয়া বর্ণমালা, কারচিহ্ন, শব্দগঠনের পর্যাপ্ত উদাহরণ, কবিতা, গণনা, নামতা, গান, মহাপুরুষের জীবনী এবং শেষে আছে রোমান হরফের পরিচয়। তার আশেপাশের শিশুদের ভাষিক পরিস্থিতি ভালো। ওরা উড়িয়া ভাষা বেশ ভালো বলতে পারে, তবে উড়িয়া লিপি লিখতে পড়তে পারে না। মনি তাঁতির কাছে সংরক্ষিত বাল্যশিক্ষার বই ‘চাটসালি’র প্রথম গানটি নিম্নরূপ:
পূর্ব আকাশে সূর্য উইঁলেণী।
রজনী রানি জেণড়ু– নেলে মেলাড়ি ॥
শিশুমানে উঠি মাতা পাশে বসি।
গুরুঘরো পায় সজো হেলেড়ে হেলে বসি।
চাট্টিশাড়ি পাঠো শিলোটো খড়ি।
কাঁখে ঘিনি পিলে গলে পাঠ পড়ি ॥
দুয়ারো মুহড়ে মা রহে অনায়।
কেতে বেড়ে সরবে ফেরিবে ভাড়ই ॥
পাঠো পড়ো পিলে মনোকূলো গায়।
হাকিমি করিবো গৌরবো বড়াই ॥
মাতা-পিতা পাদে সেবা করুথিবো।
তাঙ্করো আশিসে মণিশো করিবো ॥৩
কবিতাটি উড়িয়া লিপিতে লেখা। কবিতার ভাবার্থ হলো- পূর্ব আকাশে সূর্য উঠেছে। রজনী রানি তার সন্তানকে ডেকে তুলেছে। শিশু ঘুম থেকে উঠে মায়ের পাশে বসেছে। মা তার সন্তানকে গুরুগৃহে পাঠানোর জন্য সাজিয়ে দিয়েছে। হাতে দিয়েছে বাল্যশিক্ষার ‘চাট্টশাড়ি’(চাটসালি), শ্লেট এবং খড়ি। শিশু বগলে বই-শ্লেট-খড়ি নিয়ে স্কুলে গিয়েছে। এদিকে মা তার সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে দুয়ারে বসে অপেক্ষা করছে কখন তার সন্তান সরবে বাড়ি ফিরবে। একসময় সন্তান গান গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরেছে। তার মুখে শুনা যাচ্ছে, লেখাপড়া করে হাকিম হব, গৌরব বাড়াব, মা-বাবার পায়ে সেবা করব এবং তাদের আশীর্বাদে মানুষ হব।
উড়িয়া ভাষীর ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে উড়িয়া ভাষার গান ছাড়া চলে না। এখানে উড়িয়া ভাষায় একটি বৈষ্ণব পদ উল্লেখ করা হলো।
কলা কৃষ্ণ কমল আঁখি
ডাকিলে ন শুন কাঁহিপাঁহি কি
নিলকন্দরে বিজে করি অছ
মিছে ভ-িবাকু লড়– অছ কি
লক্ষ যজনরে গজ ডাক দেলো
তা ডাক শুনিল পশা খেলা কি
কুরুসভাতলে দ্রুপদী চিন্তিলে
তাকু কোটি বস্ত্র দেইথিলোকি
কিশকিন্দাকু গল বালি
বিনাশিল জানকি নন্দনি সীতছলে কি
ভারত জুধরে অর্জুন রথরে
আপনে সারথি হইথিল কি
ভরথ জুধরে ভরথিয়া পাখি
ঘণ্ট ঘুডাইন রখিথিল কি
ভনর ভরথ পাদপদ্মে চিত
ম মন রহিব নিলচলে কি ॥
কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর চা বাগানের গুল্লিমারা লাইনের সূর্য রাজবল্লভ যিনি এলাকায় সূর্যা বৈষ্ণব নামে পরিচিত। ধর্মীয় প্রয়োজনে উড়িয়া ভাষার অনেক বইপুস্তক তার সংগ্রহে আছে। উড়িয়া ভাষায় লেখা ‘ত্রিনাথ মেলা’ নামে একখানি পুস্তক আছে- যেখানে দুইশত পঁচিশ লাইনের একটি কাহিনিকাব্য বর্ণিত হয়েছে। ত্রিনাথের সেবানুষ্ঠানে এই পালার গীত পরিবেশিত হয়। এখানে একটি ভজন গান নিম্নরূপ:
কি হব শুয়া পুশিলে হরিনাম ন ভজিলে
ঘরকু সুন্দর দুসে ঘরণী থিলে
ঘরণী থিলে কি হবো স্বামী সেবা ন করিলে
ঘরকু সুন্দর দুসে পিন্ডা বান্ধিলে
পিন্ডা বান্দিলে কি হবো পাঞ্চজন ন বসিলে
ঘরকু সুন্দর দুসে ঘরণী থেলে
ঘরণী থেলে কি হবো কুলে বালক ন থিলে
বৃক্ষকু সুন্দর দুসে ফল ফলিলে
ফল ফলিলে কি হবো জনমানখে ন পড়িলে
পুষ্পকু নাকি শুভা দুসে ফুল ফুটিলে
ফুল ফুটিলে কি হবো ভমর যা ন চুইঁলে
গুরুসেবা করিথিলে পারহই যিবি বলে
গুরুপদ নাম ধরি তরি ভুলি যিবি।
মুক্তিযুদ্ধেও এই ভাষার মানুষের অবদান আছে। কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের অন্তর্গত চাম্পারায় চা বাগানে চারজন মুক্তিযোদ্ধা আছেন। তাঁদের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা বিভূতি ভূষণ নায়েক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শুকদেব নায়েক, বীর মুক্তিযোদ্ধা হরি বোনার্জি। তথ্যদাতা চতুর্থ জনের নাম জানাতে পারেননি।
যেহেতু সিলেট বিভাগে চা বাগানের সংখ্যা বেশি সেহেতু চাজনগোষ্ঠীর নিত্য উঠাবসা সিলেটি জনগণের সাথে। তাই চাজনগোষ্ঠী তাদের নিজ মাতৃভাষার সাথে সিলেটি উপভাষাসহ একাধিক ভাষায় কথা বলতে পারেন। ফলে একই ভুখ-ের অন্তর্গত বিভিন্ন ভাষার মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান চলে এবং সেই সূত্রে বিভিন্ন ভাষার মধ্যে একটা মিতষ্ক্রিয়া ঘটেছে। উৎসের দিক থেকে বাংলা ভাষার সাথে উড়িয়া ভাষার একটা ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে। তাই কোনো বাঙালির পক্ষে উড়িয়া ভাষা বোঝা তেমন কষ্টকর নয়। এমনকি একসময় বাঙালি প-িতগণ উড়িয়া ভাষাকে স্বতন্ত্র ভাষার মর্যাদা দিতেও চাননি। তাদের বক্তব্য ছিল উড়িয়া বাংলারই একটা অংশ। সিলেটি ভাষা যেহেতু বাংলা ভাষার একটি উপভাষা তাই কোনো কোনো ক্ষেত্রে সিলেটি ভাষার সাথে উড়িয়া ভাষার সাদৃশ্য পাওয়া যায়। সেই সাদৃশ্য শব্দগত দিক থেকে যেমন আছে তেমনি রূপতাত্ত্বিক দিক থেকেও আছে।
১. শব্দগত সাদৃশ্য: ঘুরন্টি, দুয়ার, উবা, খিড়কি, নোয়া, বইজ্জা, স্বোয়াদ ইত্যাদি সিলেটি শব্দ উড়িয়া ভাষাতে বিদ্যমান। শব্দগুলোর প্রমিত বাংলা যথাক্রমে- ঘোরাঘুরি, দরজা, অপেক্ষা করা, জানালা, নতুন, বোস, স্বাদ।
২. রূপতাত্ত্বিক সাদৃশ্য: সিলেটি ও উড়িয়া ভাষায় ‘-কু’ প্রত্যয় ব্যবহারের সাদৃশ্য আছে। যেমন:
(ক) সিলেটি: অখনকু (এই সময়), হিবলাকু (সেই সময়)।
(খ) উড়িয়া: যিবাকু (যেতে), করিবাকু (করতে), দিবাকু (দিতে) ইত্যাদি।
৩. সিলেটি ও উড়িয়া উভয় ভাষাতেই ‘অনি’ প্রত্যয়ের ব্যবহার আছে। যেমন: সিলেটিতে ‘খাইলাইছনি? (খেয়েছ?), উড়িয়াতে ‘খাইসারিলনি’? (খেয়েছ?)
বাংলা ভাষার সাথে উড়িয়া ভাষার বেশকিছু শব্দের সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন: মা, বাবা, ভাই, দাদা, দিদি, কাকি, মামা, শ্বশুর ইত্যাদি। বাংলার সাথে পার্থক্য সৃষ্টিকারী কতিপয় শব্দ হলো- বাবা=বাপা/বপ্পা, দাদু=অজা, দিদা=আই, বোন=বৌনি/অপা, কাকা=ককা, শাশুড়ি=সাসু, ছেলে=পুও, মেয়ে=ঝিঅ, বাচ্চা=পিলা, মিত্র=সামু, ছিল=থিল, পান্থাভাত=পক্ষালু, গাছ=গচ্ছ, ক্ষুধার্ত=ভুকিলা, দুপুরবেলা= খরাবেলে, একটি=গোটিয়ে, বৌদি=ভাউজো, মাথা=মু-, ঠোঁট= ওঠঅ, জিহ্বা=জিভঅ, পা=গুড়অ, কোমর=ওঠা, ডিম=অন্ডা, রাস্তা=বাট্ট ইত্যাদি।
চাবাগানগুলোতে উড়িয়া ভাষার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, শত প্রতিকূলতার মধ্যেও বহুভাষা ও সংস্কৃতির পাশে এখানে এখনো টিকে আছে উড়িষ্যা থেকে আগত উড়িয়া ভাষা ও সংস্কৃতি। কোথাও কোথাও ভাষাটি মৌখিকভাবে সগর্বে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে, আবার কোথাও কোথাও ভাষাটি মনে মনে আছে কিন্তু মুখে মুখে নাই। এখানে এই ভাষার লিখিত কোনো চর্চা নাই। চাশ্রমিকের যে আয় তা দিয়ে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যয় নির্বাহ করা কষ্টকর। জীবিকাকেন্দ্রিক এই প্রকট দারিদ্রের মধ্যে তাদের নিজ উদ্যোগে পরিকল্পিতভাবে ভাষা-শিল্প-সাহিত্যের চর্চা করে বিকাশ ঘটানোর কথা তারা ভাবতে পারে না। তারপরও তাদের জীবনের সাথে যতটুকু ভাষা ও সংস্কৃতি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে তা একান্তই প্রাকৃতিক। এক্ষেত্রে তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে এবং বৈচিত্র্যময় ভাষা ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে কিংবা বিকাশ ঘটাতে রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে। ভাষার ব্যবহারিক গুরুত্ব বাড়াতে মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থাও করতে হবে। যেহেতু উড়িয়া ভাষার নিজস্ব লিপি আছে এবং সংশ্লিষ্ট লোকজন এই লিপির সাথে পরিচিত, তাই সরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে অনায়াসেই বাংলাদেশে উড়িয়া ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ ত্বরান্বিত হবে।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও ভাষা গবেষক।