শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৯ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বালাগঞ্জ ডেকে যায়।। আব্দুর রশীদ লুলু



দেশের একটি সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী উপজেলা বালাগঞ্জ। সর্বপ্রথম ১৮৮২ সালে বালাগঞ্জ, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জ এবং রাজনগর নিয়ে বালাগঞ্জ থানা প্রতিষ্টিত হয়। এরপর ১৯২২ সালে এক গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে বর্তমান এলাকা নিয়ে গঠিত হয় বালাগঞ্জ থানা। ১৯৮২ সালে মান উন্নীত করে বালাগঞ্জ থানাকে উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বৃহত্তর বালাগঞ্জ উপজেলার অতীত কাল থেকেই রয়েছে অনেক সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য। এই উপজেলার একটি অন্যতম ঐতিহ্য শীতল পাটি। যা দেশ-বিদেশে সমাদৃত।

নিজ কর্মগুণে এখানকার অনেক মানুষ রয়েছেন দেশ-বিদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত। এঁদের মধ্যে উলেখযোগ্য হলেন-মুক্তিযোদ্ধের সর্বাধিনায়ক মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী, শ্রমিক নেতা আফতাব আলী, আমৃত্যু বিপ্লবী দিগেন দাস গুপ্ত, কবি-শিক্ষাবিদ শরচ্চন্দ্র চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতার আহমদ, বীর প্রতীক ইনামুল হক চৌধুরী, সিলেট লোকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান দেওয়ান আব্দুর রহিম চৌধুরী, পাকিস্তান শাসন আমলের সিলেট পৌরসভার নির্বাচিত প্রথম চেয়ারম্যান দেওয়ান আব্দুর রব চৌধুরী, বিজ্ঞানী ড. মাহমুদুল আমীন, ব্যারিষ্টার আব্দুল হামিদ, তত্তাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মঈনুল হোসেন চৌধুরী, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট সচিব শফিউর রহমান চৌধুরী, সাবেক যুগ্মসচিব মকবুল হোসেন, উপমহাদেশের খ্যাতনামা হোমিও চিকিৎসক ডাঃ প্রেমদা রঞ্জন দাশ, শিক্ষানুরাগী রাজা গিরিশ চন্দ্র, শিক্ষাবিদ লতিফুর রহমান চৌধুরী, শিক্ষাবিদ ললিত মোহন দে, শিক্ষাবিদ জৈন উল্যা, শিক্ষাবিদ প্রফেসর গোলাম মোস্তফা, বিশিষ্ট লেখক-শিক্ষাবিদ-অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মো. আব্দুল আজিজ, খ্যাতিমান আইনজীবি রাধাকান্ত গুপ্ত, বিচারপতি খিজির আহমদ চৌধুরী, কবি- শিক্ষাবিদ মহিউদ্দিন শীরু প্রমুখ।

বিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বৃহত্তর বালাগঞ্জের রয়েছে গৌরব উজ্জল ভূমিকা। ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স, কানাডা, ইতালী, সৌদি আরবসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে বালাগঞ্জবাসীর সরব পদচারণা। বিশেষ করে ব্রিটেনে বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর এডুকেশন ট্রাষ্ট্র, প্রবাসী বালাগঞ্জ আদর্শ উপজেলা সমিতি ও বালাগঞ্জ যুব সমিতির কথা বলতেই হয়। যে সংগঠনগুলোর মাধ্যমে বালাগঞ্জের ব্রিটেন প্রবাসীরা নিজ এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। সাহিত্য-সাংবাদিকতায় এবং প্রকাশনায়ও রয়েছে বালাগঞ্জের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা।

এতদসত্ত্বেও বালাগঞ্জের গৌরব কোথায় যেন থমকে গেছে। একজন বালাগঞ্জবাসী হিসাবে নিরবে কান পাতলে আমি যেন স্পষ্ট শুনতে পাই বালাগঞ্জের গুমরে ওঠা কান্নার শব্দ। বালাগঞ্জ যেন বলছে, হে তরুণ বালাগঞ্জবাসী তোমরা অতীত নিয়ে গৌরব করছো, কিন্তু বর্তমান কই? বর্তমানের গৌরব গাঁথা কই? তোমরা অতীত নিয়ে থেকো না। তোমরা জাগো, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবো।

এ প্রেক্ষিতে দল-মত-ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে বালাগঞ্জের সবার প্রতি আমার অনুরোধ, বালাগঞ্জ ডেকে যাচ্ছে, আসুন আমরা জাগি। স্বপ্ন দেখি। এমন স্বপ্ন-যে স্বপ্ন বালাগঞ্জের সার্বিক সমৃদ্ধির। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন নয়-এমন স্বপ্ন, যে স্বপ্ন উন্নয়নের, যে স্বপ্ন সমৃদ্ধির, যে স্বপ্ন প্রতিষ্ঠার, যে স্বপ্ন ঘুমুতে দেয় না। প্রসঙ্গত মনে পড়ছে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কথা। প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বিজয় ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘আমেরিকার শক্তি তার অস্ত্রবল বা অর্থবলের মধ্যে নয়। আমেরিকার শক্তি তার উদ্ভাবনীশক্তি ও সৃজনশীলতার মধ্যে।’

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কন্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমিও বলব, আমাদের পেশিশক্তি (মাস্তানী) বা অর্থের পেছনে নিরন্তর ছুটে চলা নয়, আমাদের চাই শিক্ষা তথা উদ্ভাবনী ও সৃজনশীলতার পিছে ছুটে চলা। তবেই আমরা শিক্ষা-প্রযুক্তি-কৃষি-শিল্প-বিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবো। হতে পারবো গৌরবান্বিত। শেষ কথা, বালাগঞ্জে (এবং দেশে) বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও সফল ও কীর্তিমান মানুষ চাই। যাদের নিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গৌরববোধ করবে। ৪ মার্চ ২০১৩

 আব্দুর রশীদ লুলু: ইসলাম ধর্ম, হোমিওপ্যাথি ও কৃষি বিষয়ক লেখক ও গবেষক।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!