আবদুর রশীদ লুলু সম্পাদিত ছোট কাগজ ‘আনোয়ারা’ ১৪ নভেম্বর ২০০৪ সাল থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত আনোয়ারা বায়ান্ন সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। কয়েক বছর আগে ‘আনোয়ারা’ প্রথম কবে হাতে পেয়েছিলাম মনে নেই। তবে প্রথম দর্শনেই ভালো লেগেছিল চেহারাটা। উন্নত কাগজে পরিচ্ছন্ন ছাপা নবীন-প্রবীণ লেখকদের নানা রকম লেখা ছাত্র শিক্ষকসহ সকল পেশাজীবি পাঠকদের পড়ার মতো রুচিশীল একটি কাগজ। এর কিছু সংখ্যা নিয়মিত পেয়েছি। পড়েছি। অন্যান্য কাগজ থেকে লেখাও এতে ছাপা হয়েছে। সম্পাদক সাহেব খুব যত্ন ও গুরুত্ব দিয়ে লেখকদের লেখা ছেপে থাকেন। আনোয়ারার সে কপিগুলো এখনো আমাদের রেনেসাঁ সাহিত্য পাঠাগারে সংরক্ষিত আছে। বহু পাঠক নাড়াচাড়া করছেন।
‘আনোয়ারা’ সম্পাদক আবদুর রশীদ লুলুর মায়ের নাম। খুব সুন্দর নাম। অর্থের দিক থেকেও অতীব তাৎপর্যপূর্ণ- অর্থ আলোক মালা। আনোয়ারা নামে পত্রিকা প্রকাশ করে সম্পাদক তাঁর মায়ের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা-ভক্তি ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। ধন্য মায়ের ধন্য ছেলে। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা- ভালোবাসার এটি এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দেশের ছাত্র-ছাত্রী ও অন্যান্য মায়ের সন্তানেরা যদি এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করেন এবং জানতে পারেন তবে তারা প্রভাবিত হবেন, আমার বিশ্বাস।
আমাদের দেশে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বাড়ছে এবং উচ্চ শিক্ষার হারও অনেক বেড়েছে। সেই তুলনায় শিক্ষিতদের মনের প্রশস্ততা ও উচ্চ চিন্তার হার বাড়ছে বলে মনে হয় না। বরং ক্রমশই যেনো সবার মন সংকোচিত হচ্ছে। হিংসা ঘৃণা সংকীর্ণতা ভেদাভেদ ও স্বার্থপরতা সমাজের চারদিকে ময়লা আবর্জনার মতো জমে উঠেছে। অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা সহনশীলতা বিশ্বাস মায়া-মমতা সম্প্রীতি উধাও হয়ে যাচ্ছে। অনেকে মনে করেন লেখালেখি করা ও পত্র-পত্রিকা প্রকাশ করে কী লাভ? এটাতো কোন জরুরী কাজ নয়। তাদের কাছে টাকা উপার্জন করাটাই আসল কাজ। তাদের চিন্তা ও দৃষ্টি শুধু নিজের পেটের দিকে। সমাজ, দেশ, জাতি ও মানবতার দিকে নয়। এই জাতীয় মানুষের মধ্যে প্রকৃত পক্ষে হৃদয় আছে কিনা সন্দেহ হয় আমার। পেটের ক্ষুধার জন্য যেমন ভাতের প্রয়োজন তেমনি আত্মারও ক্ষুধা রয়েছে। যাদের আত্মা মরে গেছে তাদের আর সে ক্ষুধা নেই। যাদের আত্মা তাজা আছে তাদের আত্মার ক্ষুধার জন্য আত্মার খাদ্যের প্রয়োজন। আত্মার খাদ্য-ভালো কথা, মহৎ চিন্তাভাবনা, মহৎ কাজ, সাহিত্য, বই-পত্র ইত্যাদি। বই পত্রের জগত এক বিশাল জগত। জগত ও জীবন যে কত বড় বিশাল তা বই পত্র পড়ে চিন্তা করলে কিছুটা উপলব্ধি করা যায়। এর মধ্যেই রয়েছে ইতিহাস ঐতিহ্য ধর্ম, দর্শন ও নানা চিন্তা করার উপায়-উপকরণ। মহৎ সাহিত্য মানুষকে মহৎ হতে প্রভাবিত ও অনুপ্রাণিত করে। হৃদয় উদার ও প্রশস্ত করে।
‘আনোয়ারা’ ছোটকাগজ হলেও এবং তার শক্তি সীমিত হলেও সেই পথের পথিক, সেই মহৎ উদ্দেশ্য বুকে ধারণ করে প্রকাশিত হচ্ছে এ যাবৎ। আনোয়ারার লেখাগুলো সংক্ষিপ্ত। অল্প পরিসরে। একটি মূল্যবান স্বর্ণ অলংকার ভরে রাখার একটি ছোট্ট কেস যেনো। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি লেখা উল্লেখ করা যায় সম্প্রতি প্রকাশিত সংখ্যা থেকে। যেমন জাস্টিস মুফতী তকী উসমানীর জীবজন্তুর সাথে সদ্ব্যবহার, আহমদ-উজ-জামানের আনইম্পোর্টেন্ট ডায়রী, ফারহানা মোবিন এর বাতাবি লেবুর পুষ্টি, প্রফেসর ডা. এহসানুল হক এর শিকড় সন্ধানে, ফাহমিদা হক এর পাখি বন্ধু সালিম আলী, মোঃ আবদুর রউফ এর আনোয়ারা নাম, আব্দুর রশীদ লুলু এর কৃষি বিষয়ক প্রবাদ-প্রবচন, আব্দুল হামিদ মানিক এর সিলেটে রবীন্দ্রনাথ, সরকার শাহাবুদ্দীন আহমদ এর জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের অন্তিম দিনগুলো অনেক ঐতিহাসিক তথ্যপূর্ণ রচনা। কবি মহি উদ্দিন শীরু আমার অতি পরিচিত প্রিয় একটি নাম। তাঁর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে লিখেছেন মোহাম্মদ জুয়েল আহমদ। আনোয়ারা মূলত শিকড় সন্ধানী ছোট কাগজ। এতে আমাদের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, ইতিহাস-ঐতিহ্য, ধর্ম, কৃষি, হোমিও, গল্প, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, আলোচনা-সমালোচনা, স্মৃতিচারণ, প্রবাসী ব্যক্তিত্ব, সফল ব্যক্তিত্ব, নারী, প্রকৃতি-পরিবেশ প্রভৃতি বিচিত্র বিষয়ে সংক্ষিপ্ত অথচ চমকপ্রদ লেখা ছাপা হয়ে থাকে। আনোয়ারায় অনেক সমাজকর্মী ও কীর্তিমানদের ছবিসহ পরিচিতি ছাপা হয়।এককপি আনোয়ারা হাতে পেলে ঘরে বসে দেশ-দুনিয়ার অনেক কিছু জানা যায়। এমন সাবলীল রুচিশীল সর্বজনের পাঠ উপযোগী পত্রিকা প্রকাশের জন্য আব্দুর রশীদ লুলুকে অনেক অনেক মুবারকবাদ জানাচ্ছি।
লেখক: প্রবীণ সাহিত্যিক, টাঙ্গাইল।