ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ১৭ জন। হামলার দায় ‘কাশ্মীর রেসিস্ট্যান্স’ নামক একটি গ্রুপ স্বীকার করেছে। তাদের দাবি, বহিরাগতদের মাধ্যমে কাশ্মীরের জনসংখ্যাগত কাঠামো বদলে দেওয়া হচ্ছে, আর তা প্রতিরোধ করতেই এই হামলা।
হামলার পরপরই ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করলেও, এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। এ নিয়ে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে—এটি কি ভারতের পরিকল্পিত ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’?
পাকিস্তানের সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার (অব.) আহমেদ সাঈদ মিনহাস বলেন, “হামলাটি ভারতের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় গভীরে ঘটেছে, অথচ দোষারোপ করা হচ্ছে পাকিস্তানকে।” তিনি ২০১৯ সালে ভারতের পাইলট আভিনন্দনকে ফেরত দেওয়ার উদাহরণ দিয়ে পাকিস্তানের সহনশীলতার কথা স্মরণ করান।
অন্য একজন বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) রশিদ ওয়ালি ভারতীয় মিডিয়াকে উদ্দেশ করে বলেন, “তদন্ত শুরুর আগেই পাকিস্তানকে দোষারোপ করা হচ্ছে, যা বিপজ্জনক ফলাফল ডেকে আনতে পারে, যেমনটা হয়েছিল বালাকোট হামলার সময়।”
পাকিস্তানের সাবেক এমপি মুশাহিদ হুসেন সিদ্দিকি বলেন, “প্রতিটি হামলার পর ভারতের অভ্যাস হয়ে গেছে পাকিস্তানকে দোষারোপ করা। কাশ্মীর এক্সপ্রেস থেকে শুরু করে পহেলগাম পর্যন্ত একই ধাঁচের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।”
এদিকে, পাকিস্তান সরকার হামলায় নিহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শফকত আলী খান নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন।
হামলার পর আন্তর্জাতিক মহল থেকেও নিন্দা জানানো হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “এই হামলা ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকে আরও দৃঢ় করবে।” মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান উরসুলা ভন ডের লিয়েন হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং ভারতকে সমর্থন দিয়েছেন।
ভারত হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ৫টি পদক্ষেপ হলো:
সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত
আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ
পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল
সার্ক ভিসা ছাড় সুবিধা বন্ধ
পাকিস্তানি কূটনীতিক ও সামরিক উপদেষ্টাদের বহিষ্কার
বিশ্লেষকদের মতে, এ হামলা দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।