শুক্রবার ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানে বড় ধরনের সামরিক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই অভিযানে একযোগে আঘাত হানা হয় ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি অনুযায়ী, এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু অবকাঠামো, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ও সামরিক নেতৃত্ব।
এই হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান চিফ অভ স্টাফ মোহাম্মদ বাগেরি নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। যদিও প্রথমে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছিল, তিনি নিরাপদে রয়েছেন।
এর আগেই ইরানি বিপ্লবী গার্ড (আইআরজিসি)-এর প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। এছাড়াও নিহত হয়েছেন আইআরজিসির আরও এক শীর্ষ কর্মকর্তা এবং দুই পরমাণু বিজ্ঞানী—মোহাম্মদ মেহেদি তেহরানচি ও ফেরেইদুন আব্বাসি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন ইরানি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ইতোমধ্যে রাডার ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে লক্ষ্য করে তৃতীয় দফায় হামলা শুরু করেছে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, রাজধানীর একটি আবাসিক ভবনে চালানো হামলায় নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উপদেষ্টা আলি শামখানি গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে নূর নিউজ। তবে খামেনি সুস্থ রয়েছেন এবং তাকে নিয়মিত ব্রিফ করা হচ্ছে।
ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র আবুল ফজল শেকারচি এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলকে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে।”
এদিকে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর চিফ অফ স্টাফ এয়াল জামির জানিয়েছেন, দেশটির সেনারা সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে এবং ‘দশ হাজারের বেশি সেনা মোতায়েন করা হয়েছে’।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু টেলিভিশন ভাষণে বলেন, “যতদিন প্রয়োজন, এই সামরিক অভিযান চলবে। এটা একদিনের আক্রমণ নয়।”
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, তারা এই হামলায় জড়িত নয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, “ইসরায়েল আমাদের জানায়, এটি তাদের আত্মরক্ষার জন্য অপরিহার্য।”
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ১১টায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আহ্বান করবেন।
যেসব স্থানে হামলা চালানো হয়েছে:
তেহরান ছাড়াও ইরানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
-
নাতাঞ্জ: ইরানের সর্ববৃহৎ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র
-
খোররমাবাদ: বিশাল মিসাইল ঘাঁটি
-
তাবরিজ: পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র ও সামরিক ঘাঁটি
-
ইস্ফাহান, আরক, কেরমানশাহ: সামরিক স্থাপনা ও গোপন গবেষণা কেন্দ্র
-
তেহরানের মাহাল্লাতি: সামরিক পরিবারদের আবাসিক এলাকা
রাজধানীজুড়ে ছয় থেকে নয়টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। আল জাজিরার তেহরান প্রতিনিধি তহিদ আসাদি জানান, রাত ৩টার দিকে তিনি নিজে অন্তত দুটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন।
ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন টিভি ইরিব বিস্ফোরণের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করছে, যেখানে বিভিন্ন এলাকায় ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে।
বিশ্লেষকদের মত:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেহরানের পারমাণবিক অগ্রগতির সময়েই এই হামলা চালিয়ে ইসরায়েল কৌশলগত বার্তা দিয়েছে। তবে এর পাল্টা প্রতিক্রিয়া যে ভয়াবহ হতে পারে, সেই আশঙ্কাও করছেন তারা।