
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশজুড়ে নির্বাচনী উত্তাপ বাড়ছে। নানা মহলে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা প্রচারিত হলেও সরকার দৃঢ়ভাবে বলছে নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন হবে। ফলে দেশ কার্যত নির্বাচনমুখী—এমন ধারণাই শক্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
বিগত তিনটি নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগে জনগণের আগ্রহ না থাকলেও এবার ভোট দিতে পারার উচ্ছ্বাস স্পষ্ট। রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে ভেতরে চলছে প্রার্থী মনোনয়নের হিসাব-নিকাশ।
প্রধান দলগুলোর অবস্থান:
বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দল ছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় মাঠে মূলত সক্রিয় রয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। নতুন দল এনসিপিও প্রচারে সরব, যদিও তাদের সাংগঠনিক শক্তি এখনও অনিশ্চিত। অন্যদিকে বিভাজনে দুর্বল হয়ে পড়ফ্যাসিবাদের দোসর তকমা পাওয়া জাতীয় পার্টি এখন মূলত রংপুরনির্ভর দলে পরিণত হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী একদিকে নির্বাচনী ব্যবস্থায় পি আর পদ্ধতির দাবি তুললেও নির্বাচনী প্রস্তুতিতে এগিয়ে আছে। ইতোমধ্যে তারা প্রায় সব আসনেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে বিএনপিতে একেক আসনে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপ্রত্যাশা স্পষ্ট করছে অভ্যন্তরীণ দূর্বলতা। ফলে নেতা কর্মীদের মাঝে বাড়ছে দূরত্ব ও বিভেদ।
সিলেট-৩ আসনের চিত্র: সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনে ইতোমধ্যে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াতে ইসলামী। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান হোসেনকে প্রার্থী ঘোষণা করে দলটি মাঠে নেমেছে।
অন্যদিকে বিএনপি থেকে শোনা যাচ্ছে অন্তত তিনজন শীর্ষ নেতার নাম – জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, ইউকে বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা লন্ডনপ্রবাসী ব্যারিস্টার এম এ সালাম। এছাড়া তরুণ আইনজীবী আদনান (সাবেক জেলা সভাপতি এম এ হকের ছেলে) মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় আছেন।
বিভক্ত বিএনপি, সুযোগে জামাত: এ আসনে পছন্দের প্রার্থীকে কেন্দ্র করে দল হিসাবে বিএনপির ভেতরে বিভক্তি দিন দিন বেড়ে চলেছে। জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী আন্দোলনে সক্রিয় থাকায় বড় অংশ তার পক্ষে থাকলেও, ব্যারিস্টার সালাম স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়তা বাড়াচ্ছেন। এম এ মালেকেরও নিজস্ব সমর্থক রয়েছে। ফলে স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এখন বলয়ভিত্তিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। এই পরিস্থিতির পূর্ণ সুফল পাচ্ছেন জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা লোকমান হোসেন। তিনি ইতোমধ্যেই নিজের নামেই ভোট চাইতে পারছেন, অথচ বিএনপির নেতারা কেবল দলের হয়ে প্রচারণায় সীমাবদ্ধ।
ভোটারদের দ্বিধা: এলাকার ভোটারদের মধ্যে অনেকেই ব্যক্তি প্রার্থীকে গুরুত্ব দেন। বিএনপি যত দেরিতে প্রার্থী নিশ্চিত করবে, ততই সেই ভোটারদের ধরে রাখা কঠিন হবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। অনেকে আগেই সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলেছেন, যা পরে বদলানো কঠিন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে সিলেট-৩ আসনে বিএনপি যদি দ্রুত প্রার্থী চূড়ান্ত না করে, তবে মাঠের লড়াইয়ে জামাত এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে।



