
ছবি সংগৃহীত
শুক্রবার সকালে সারা দেশে অনুভূত ভূমিকম্পটি সাম্প্রতিক বহু বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পনগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে হঠাৎ কেঁপে ওঠে ঢাকা ও আশপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
জাতীয় ভূকম্পন কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তি নরসিংদীর মাধবদী এলাকার প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে। স্থানীয়ভাবে এর মাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এটি ৫ দশমিক ৫ মাত্রার হিসেবে রেকর্ড করেছে।
বুয়েটের পূরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প–বিশেষজ্ঞ মেহেদি আহমেদ আনসারী জানান, এই কম্পনে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। তাঁর মতে, এই অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক কাঠামোর কারণে বড় ধরনের ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বহুদিন ধরেই রয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, মাত্রা যদি ৬–এর কাছাকাছি পৌঁছায়, তাহলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ঝুঁকি তৈরি হবে।
ইতিহাসেও বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বেশ কয়েকটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের নজির রয়েছে। ১৭৬২ সালের ‘গ্রেট আরাকান আর্থকোয়েক’ ছিল প্রায় ৮ দশমিক ৫ মাত্রার, যার প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল চট্টগ্রাম, ফেনী ও কুমিল্লা পর্যন্ত। ১৮৯৭ সালে আসামে সংঘটিত ৮ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটিও ছিল বিধ্বংসী। এরপর ১৯১৮ সালে সিলেটের বালিসিরা উপত্যকায় ৭ দশমিক ৬ এবং ১৯৩০ সালে আসামের ধুবড়িতে ৭ দশমিক ১ মাত্রার আরেকটি বড় কম্পন রেকর্ড করা হয়।
অধ্যাপক আনসারী বলেন, বড় ধরনের ভূমিকম্প সাধারণত প্রায় দেড় শতকের ব্যবধানে ফিরে আসে। সেই হিসাবে আবারও ৭ মাত্রা বা তার বেশি শক্তিশালী কম্পনের ঝুঁকি সামনে চলে এসেছে। আজকের ভূমিকম্প বাংলাদেশকে সতর্ক হওয়ার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি জানান, রাজধানীতে প্রায় ২১ লাখ ভবন রয়েছে, যার মধ্যে ছয়তলার বেশি ভবনের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। বড় ভূমিকম্প হলে এসব উচ্চ ভবনই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়বে। পুরান ঢাকার কিছু ভবনে আজকের কম্পনে রেলিং ও পলেস্তারা খসে পড়া সেই ঝুঁকিরই ইঙ্গিত বহন করে।
রানা প্লাজা ধসের পর গার্মেন্টস কারখানার ভবনগুলোর কাঠামো পরীক্ষা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল—সেটিকে সব ধরনের ভবনে সম্প্রসারণ জরুরি বলে তিনি মনে করেন। তাঁর মতে, রাজধানীর ভবনগুলোর অবস্থা এখনই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন, কারণ অনেক স্থাপনা এখনো বিল্ডিং কোড মেনে নির্মিত হয়নি।
তিনি আরও জানান, ভূমিকম্পসহ অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা বাড়াতে বিশ্বব্যাংক রাজউককে ১৮ কোটি মার্কিন ডলার দিয়েছে। তবে এত বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মতো সক্ষমতা রাজউকের রয়েছে কি না, সে নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।



