রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Sex Cams

সমমনা ৮ দলের সিলেট সমাবেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ে ঐক্যের ঘোষণা



ছবি সংগৃহীত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতন হলেও তার অন্ধকার ছায়া এখনও বিদ্যমান। একদল দেশ লুট করে বিদেশে ‘বেগমপাড়া’ বানিয়েছে; খুন, গুম, নির্যাতন চালিয়েছে এবং জনরোষে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। কলাপাতায় ঘুমিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। অন্যদিকে আরেক দল নিজেদের দ্বন্দ্বে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, সিলেটে ৮ দলের সমাবেশ শেষ হলেও এখান থেকেই বিজয়ের সূচনা হবে, ইনশাআল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র–জনতার রক্তের বিনিময়ে দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হলেও ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। সংস্কার ও গণভোটে আপত্তি থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভোটের দিন গণভোট আয়োজন করতে সরকার বাধ্য হয়েছে। যারা শুধু নির্বাচনের জন্য উন্মত্ত ছিলেন, এখন তারাই নির্বাচন পেছানোর কথা বলছেন। নির্বাচনে কোনো টালবাহানা জনগণ মেনে নেবে না।

শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেলে সিলেটের ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ইসলামী ও সমমনা ৮ দলের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মূল অনুষ্ঠান বেলা ২টায় শুরু হলেও সকাল ১১টা থেকেই জনসমাগম শুরু হয় এবং দুপুর ১টার আগেই মাঠ ও আশপাশের এলাকা জনসমুদ্র হয়ে ওঠে। জাতীয় নির্বাচনের আগে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের ওপর গণভোট, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডসহ পাঁচ দফা দাবি ও গণভোটে ‘হ্যাঁ’ পক্ষের বিজয় নিশ্চিতে আয়োজিত এ সমাবেশে ৮ দলের নেতাকর্মীরা দলীয় প্রতীকসম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুন-প্লেকার্ড নিয়ে স্লোগান দেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও জাতীয় প্রত্যাশা পূরণে দেশপ্রেমিক ইসলামী ও সমমনা ৮ দল মাঠে রয়েছে। যারা এখনও পৃথক অবস্থানে আছেন, তাদেরও আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। চাঁদাবাজ ও দখলদারদের অপবাদ নেয়ার চেয়ে ইসলামের ও দেশের স্বার্থে ৫ দফা দাবির আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজিমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়তে সবার ঐক্য প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, বিভিন্ন শক্তি দিয়ে ভয় দেখানো হয়, কিন্তু যারা হাসিমুখে ফাঁসির দড়ি মেনে নেয়, তাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। জুলুম, চাঁদাবাজি ও দখলবাজি আর বরদাশত করা হবে না। মানবিক বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী আচরণ চলতে দেওয়া হবে না। জনগণ জেগে উঠেছে, বিজয় হবেই।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আব্দুল বাসিত আজাদ। পরিচালনায় ছিলেন ইসলামী ও সমমনা ৮ দলের সিলেট জেলা ও মহানগর নেতারা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর সৈয়দ মো. রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) বলেন, ৫৪ বছর দেশকে জিম্মি করে রাখা শক্তির চরিত্র মানুষ দেখেছে। তারা এখন পরস্পরকে ধ্বংস করছে। ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের খুনীদের বিচার, টাকা পাচারকারীদের বিচার ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে নির্বাচন ছিল আমাদের দাবি। অথচ সংস্কার, দৃশ্যমান বিচারে তারা বাধা দিয়েছে। জনগণ ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তারা এখন নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, যত ষড়যন্ত্রই হোক তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হবেই।

তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্ট আল্লাহ আমাদের স্বাধীনতা দান করেছেন। দেশপ্রেমিকরা ব্যর্থ হলে ইতিহাস কলঙ্কিত হবে। তাই দেশ ও জনগণের সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর শায়খ মাওলানা মামনুল হক বলেন, ইসলামী আন্দোলনের নেতারা দীর্ঘদিন বিদেশী শক্তির ক্রীড়নকদের হাতে নির্যাতিত হয়েছেন, জীবন দিয়েছেন। জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিবাদ উৎখাতের পর এখন নতুন ফ্যাসিবাদ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, কিন্তু তা প্রতিহত করা হবে। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের নির্বাচন শুধু প্রতীকের নির্বাচন নয়, এটি জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার গণভোটের নির্বাচন। ‘হ্যাঁ’ পক্ষের বিজয়ে ঘরে ঘরে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীর মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজী বলেন, একটি দল ইসলামী দলগুলোর সাথে প্রতারণা করে এসেছে। তারা শরিয়া মানে না। তাদেরকে পরাভূত করতে হবে।

বাংলাদেশ ডেভোলপমেন্ট পার্টি-বিডিপির সভাপতি এডভোকেট এ.কে.এম আনোয়ারুল হক চান বলেন, বিভাগীয় সমাবেশগুলো স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—জুলাই বিপ্লবের অর্জন জনগণের ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। ইশ্বরদীতে কুকুরছানা হত্যাকে মিডিয়ার অতিরঞ্জিত প্রচার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অথচ সীমান্তে মানুষ হত্যা নিয়ে নীরবতা গ্রহণযোগ্য নয়। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ মিডিয়া দরকার। প্রয়োজনে আবার জুলাই বিপ্লবের ডাক দেওয়া হবে।

জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান বলেন, বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মসূচি শেষ হলেও আন্দোলন শেষ নয়। দেশে নতুন ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হতে দেওয়া হবে না। জনগণ ১৫ আগস্ট, ৬ আগস্ট ও ৫ আগস্ট তিন স্বৈরাচারের পতন দেখেছে। আবারও কেউ সে পথ বেছে নিলে একই পরিণতি হবে।

বক্তারা বলেন, ইসলামের বিজয়ের জন্য ৮ দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং অন্যান্য ইসলামী দলকেও এই ঐক্যে শামিল হতে হবে। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস বন্ধ হয়নি। মানবিক বাংলাদেশ গড়তে নীতি ও নেতৃত্ব দরকার।

সমাবেশে বক্তৃতা করেন—জামায়াত, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, ইসলামী আন্দোলনবাংলাদেশ এবং বিডিপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন হাফিজ মুহিউদ্দিন মো. নাকিব।

সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা আব্দুল বাসিত আজাদ বলেন, ভোট দিয়ে দায়িত্ব শেষ নয়, ভোট রক্ষা করতে হবে। দেশের সব ইসলামী ও দেশপ্রেমিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এবার লক্ষ্য ইসলামকে ক্ষমতায় নেওয়া। জুলাই শহীদদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ৮ দলের যুগপৎ আন্দোলন চলবে।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!