সাধারণত রোজার মাস শেষ হওয়ার দিকে অর্থাৎ ২৯ রোজার দিন বিকেলে এ কমিটি বৈঠকে বসে।
সেদিন যদি দেশের কোথাও চাঁদ দেখা যায় তাহলে পরদিন ঈদের ঘোষণা দেয় ফাউন্ডেশন আর তা না হলে ত্রিশ রোজা শেষেই ঈদ হয়ে থাকে।
এবারও ২৯ রমজানের দিন সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা কমিটি বৈঠকে বসবে ধর্মমন্ত্রীর নেতৃত্বে।
যেভাবে কাজ করে চাঁদ দেখা কমিটি
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের যে বিভাগটি চাঁদ দেখার মূল দায়িত্ব পালন করেন সে বিভাগটির দায়িত্বে আছেন প্রতিষ্ঠানটির দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক মোজাহারুল মান্নান।
মি: মান্নান বলছেন, চাঁদ দেখার সংবাদ নিশ্চিত করার জন্য ঢাকায় ধর্মমন্ত্রীর নেতৃত্বে বৈঠকে বসবেন চাঁদ দেখা কমিটির সদস্যরা, যেখানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সদস্য সচিব হিসেবে কাজ করে থাকেন।
তাঁর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মূল চাঁদ দেখা কমিটির সাথে একযোগে প্রতিটি জেলায় একটি করে কমিটি কাজ করে। দেশের কোথাও চাঁদ দেখা গেলে সেটি স্থানীয় প্রশাসন বা ইসলামিক ফাউন্ডেশন সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে জেলা কমিটির কাছে পৌঁছায়।
পরে জেলা প্রশাসন দ্রুত সেটি নিশ্চিত করে বিভিন্ন ভাবে- যেমন স্থানীয় অনেকে চাঁদ দেখেছে কি-না কিংবা স্থিরচিত্র বা ভিডিও চিত্র এসব দ্রুত সংগ্রহ করে নিশ্চিত হয়ে থাকে স্থানীয় প্রশাসন।
সেক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য ও ভালো দৃষ্টি শক্তিসম্পন্ন কাউকে চাঁদ দেখতে হবে।
পরে সে খবরটি যাচাই হয়ে জেলা কমিটি হয়ে কেন্দ্রীয় চাঁদ দেখা কমিটির হাতে পৌঁছায়।
একই সাথে আবহাওয়া অধিদফতরের দেশজুড়ে যে ৭৪টি স্টেশন আছে সেখান থেকেও তথ্য নেয় চাঁদ দেখা কমিটি।
যদি আবহাওয়া অনুকূল না থাকে অর্থাৎ খালি চোখে চাঁদ দেখার সুযোগ না থাকলে আবহাওয়া স্টেশন থেকে পাওয়া তথ্যও চাঁদ দেশের আকাশে উঠেছে কি-না তা নিশ্চিত হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মি: মান্নান অবশ্য বলছেন, “চাঁদ উঠলে সেটি কোথাও না কোথাও দেখা যায় সাধারণত। মানুষের চোখে বা মেশিনের (আবহাওয়া স্টেশনের)সাহায্যে এটি নিশ্চিত হলেই কেবল ঈদ উদযাপনের ঘোষণা দেয়া হয়”।
আবহাওয়া স্টেশনগুলো চাঁদ দেখার কাজে যেভাবে সহায়তা করে
ঢাকা আবহাওয়া অফিসে কর্মরত আবহাওয়াবিদ আয়েশা খাতুন বলছেন চাঁদ উঠলে সেটি কোথায় কত ডিগ্রিতে অর্থাৎ তার অবস্থান কি হবে এবং কতক্ষণ সময় ধরে দেখা যেতে পারে সেজন্য আবহাওয়া অফিসের একটি বিভাগ আগে থেকেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতেই হিসেব নিকেশ করে স্টেশনগুলোকে জানিয়ে থাকে।
তার ওপর ভিত্তি করে সবগুলো স্টেশন কাজ করে এবং সম্ভাব্য সময়টিতে সম্ভাব্য স্থানে খালি চোখে ও যন্ত্রের সাহায্যে দেখা হয়।
আবার যেহেতু একটি নতুন চাঁদ দৃশ্যমান হতে বেশ কিছুক্ষণ (প্রায় ৩০ ঘণ্টাও হতে পারে) সময় লাগে সেক্ষেত্রে যন্ত্রের সাহায্য নেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
আয়েশা খাতুন বলছেন, যদি কোথাও চাঁদ উঠে তাহলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার জন্য যদি সেটি চোখে দেখা না যায় তখন যন্ত্র ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি জানান অপটিক্যাল থিওডিলাইট নামক একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন টেলিস্কোপ দিয়ে আবহাওয়া স্টেশনগুলো কাজ করে থাকে।
“তবে চাঁদ উঠলে সেটি কোথাও না কোথাও খালি চোখে না হলে টেলিস্কোপে ধরা পড়বেই। আর সেটি দেখা মাত্রই আবহাওয়া বিভাগ সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিয়ে থাকে”।
এভাবেই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নেতৃত্বে সারাদেশের কমিটি গুলো ও আবহাওয়া বিভাগ একযোগে কাজ করে ঈদের চাঁদ দেখার সঠিক তথ্য নিশ্চিত করে থাকে বলে জানালেন মোজাহারুল মান্নান।
অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল তথ্যাদির সাহায্যে নতুন চাঁদ দেখা সম্ভব?
অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি দাবি করে চাঁদ কবে দেখা যাবে সেটি আগে থেকেই জানা সম্ভব।
তাদের দাবি প্রতিটি হিজরি মাসের শুরু হবার সময় এখন জোতির্বিজ্ঞানীদের জানা। এমনকি তারা আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতিটা ঈদের দিন তারিখ, প্রতিটি হিজরি মাস শুরু হওয়ার সুনির্দিষ্ট দিন জানেন।
এর আগে গত ৫ই জুন অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ১৩ই জুন ২০১৮ বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৪৩ মিনিটে বর্তমান চাঁদের অমাবস্যা কলা পূর্ণ করে নতুন চাঁদের জন্ম হবে। চাঁদটি পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৬ মিনিটে সূর্যাস্তের সময় দিগন্ত রেখা থেকে ৬ ডিগ্রি উচ্চতায় ২৮৯ ডিগ্রি দিগংশে অবস্থান করবে এবং ৩৪ মিনিট দেশের আকাশে অবস্থান করে সন্ধ্যা ৭ টা ২০ মিনিটে অস্ত যাবে। তবে এদিন চাঁদের ১% অংশ আলোকিত থাকলেও দেশের আকাশে চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। চাঁদটি পরদিন ১৫ই জুন শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৭ মিনিটে সূর্যাস্তের সময় দিগন্ত রেখা থেকে ১৯ ডিগ্রি উপরে ২৮৪ ডিগ্রি দিগংশে অবস্থান করবে এবং প্রায় ১ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট দেশের আকাশে অবস্থান শেষে রাত ৮টা ২৩ মিনিটে ২৯২ ডিগ্রি দিগংশে অস্ত যাবে। এই সময় চাঁদের ৪% অংশ আলোকিত থাকবে এবং দেশের আকাশ মেঘমুক্ত পরিষ্কার থাকলে একে বেশ স্পষ্টভাবেই দেখা যাবে। এই সন্ধ্যায় উদিত চাঁদের বয়স হবে ৪১ ঘণ্টা ৪ মিনিট এবং সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যাবে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে”।
“সুতরাং ইসলামি নিয়ম অনুযায়ী আগামী ১৫ই জুন সন্ধ্যায় নতুন চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ই জুন শনিবার থেকে শাওয়াল মাসের গণনা শুরু হবে এবং ঐদিনই পবিত্র ঈদ উল ফিতর পালিত হবে”।
কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মো: হারুনুর রশীদ বিবিসিকে জানান যে চাঁদ দেখা নিয়ে জোতির্বিদদের ধারণা সবসময় সঠিক প্রতীয়মান হয়নি।
“ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের আলেমরা একমত হয়েছেন যে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে চাঁদ দেখা গেলেই সে অনুযায়ী রোজা বা ঈদ হবে। এমনকি সৌদি আরবে ঈদ হলেই বাংলাদেশে হবে সেটিও হবেনা সময়ের পার্থক্যের কারণে”।