# বাংলা আমার মায়ের ভাষা
বাংলা আমার ভাষা
বাংলা আমার রক্তে মাখা
সোনালী স্বপ্ন আশা।
(কবিতা : বাংলা আমার)
# একাত্তরের আগুন যখন
মায়ের বুকে জ্বলে
যায়নি কভু সন্তান হারা
মাতৃ হৃদয় ভুলে।
(কবিতা : বিজয়ের দিনে)
# একাত্তরের পঁচিশে মার্চ
কালোরাতে পাকবাহিনী
বাংলার বুকে ঘটালো এক
গণহত্যার কাহিনী।
(কবিতা : বিজয়ের কলতানে, গ্রন্থ নামকরণ)
# আমার দেশের শিল্পী বাউল
গায় সুমধুর গান
তাদের গানের মধুর সুরে
আকুল করে প্রাণ।
(কবিতা : আমার দেশের বাউল)
# গর্বিত এক বাঙালী আমি
বাংলা আমার গর্ব
এই বাংলাতেই জন্ম আমার
বাংলাই আমার সর্ব।
— — —
লাল সবুজের জয় পতাকা
উড়লো আমার দেশে
গর্বিত এক বাঙালী আমি
আমার স্বাধীন দেশে।
(কবিতা : গর্বিত বাঙালী)
# স্বাধীন দেশের এই দীনতা
ফোরাবে এক দিন
দেশটাত নয় ভূট্টো জিন্নার
নাচবে তাধিন ধিন্।
(গ্রন্থের শেষ কবিতা : স্বাধীন দেশের এই দীনতা।)
কবি তাঁর সব কবিতায় বাংলাদেশ ও স্বাধীনতা বিষয়ক বিরহ যন্ত্রণার বিদগ্ধতার চিত্র রূপায়ন করে কথ্যভাষায় সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন।
এ বইতে সব’চে দীর্ঘ কবিতাটি “স্বাধীনতার মহান দিনে” নামে পঁয়ত্রিশ লাইনে নির্মিত।
এবং সবচে ছোট কবিতাটি বার লাইনের “শহীদ গাজীর তরে” নামে-
# “একাত্তরের রণাঙ্গনের
শহিদ গাজী যারা
বাংলা মায়ের বীর সেনানী
শ্রেষ্ঠ সন্তান তারা।
হানাদারদের ঘায়েল করে
আনলো বিজয় যারা
বাংলার বুকে সবার হৃদে
চির অমর তারা।
তাদের তরে জানাই আজি
শ্রদ্ধা সালাম শত
যেখানেই থাক সুখ শান্তিতে
কাটুক অবিরত।”
এখানে কবি বীরত্বের দ্যোতনায় প্রতিবাদী হওয়ার উত্তাল প্রেরণা দিয়েছেন এবং উত্তাল যৌবনকে ফুটিয়ে তুলেছেন সাবলীল শব্দায়নে।
প্রিয় পাঠক লক্ষ করেছেন কবি তার কাব্য রচনা শৈলী নির্মাণে কোনরূপ কার্পন্য করেন নাই, ঋদ্ধহস্তে উপমা, রূপক কাব্য উপাদান ব্যবহার করেছেন, শব্দ প্রয়োগও করেছেন যথাযথভাবে। তবে বাক্যর অনুগামীতায় কিছুটা অসংগতি পরিলক্ষিত হয় এবং কাব্যরীতি অনুযায়ী অপ্রয়োজনীয় বিরাম চিহ্ন ব্যবহার করেন নাই।
পদ্য কবিতার ধারাবাহিকতা ঠিক থাকলেও পর্ব বিন্যাসে যতি, ছেদ, চাল আরো মাত্রাবৃত্তিক হওয়া শুদ্ধ।
চমৎকার উপমা, অনুপ্রাস, উৎপ্রেক্ষা, রূপ-রূপক, ব্যঞ্জনাময় শব্দের বিন্যাস, কাব্যিক ছন্দ-পর্ব-রীতি-শৈলী ও সরল ঝংকারে সাবলীল বাক্য নির্মাণ, যাথোপযুক্ত উদাহরণসহ বস্তুনিষ্ঠ তথ্য ও উপাত্ত সম্বলিত এবং অজানা অনেক খুনসুটির অবতারণামূলক দেশাত্ববোধ ও দেশপ্রেম অন্তরালে প্রেম রসময় সহজপাঠ্য, প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা ৪৬ টি কবিতা।
লেখকের মেধা ও মনন সুপরিচ্ছন্নভাবে পরিস্ফুটিত হয়েছে। অন্তমিলের নাতিদীর্ঘ কবিতাগুলো সুন্দর ভাবে সন্নিবেশিত হয়েছে, সহজ পাঠ্য এবং বোধে গ্রাহ্য, যা পড়ার জন্য আলাদা সময় করে নেয়া প্রয়োজন নাই।
তবে পুরোপুরি আধুনি নির্মাণ শৈলী কবিতার গায়ে বসাতে পারেন নাই, কবি চেষ্টা করেছেন তেমনও মনে হয় না। কিন্তু উত্তর আধুনিক করতে ব্যর্থ হয়েছেন, কারণ : উত্তর আধুনিক কবিতায় অনন্তগামী ইন্দ্রীয় গ্রাহ্য ভাব ও বিষয় থাকতে হয়, আমার কাছে তা প্রতিপন্ন হয় নাই, এবং রীতি-শৈলীতে অব্যয় পদের ব্যবহার হয় না, যেমন ; তো তা এবং যদি তবে নতুবা অথবা মতো জন্য যেমন তেমন বরং ইত্যাদি কিন্তু কবি তার কবিতায় এগুলো প্রয়োগ করেছেন। এছাড়া মোর, আমায়, তোমায় এ ধরনের শব্দও বর্তমান কবিতায় ব্যবহার দোষণীয়। তবে প্রচ্ছন্ন বীর্যবান যৌবনের স্ফূরণ কবিতার সরল রেখায় সমস্ত কবিতাকে এক কক্ষে না রেখে বিভিন্ন ভাব ভাবনায় ছড়িয়ে বিধৃত করেছেন।
অন্যদিকে একই শব্দ বারবার ব্যবহার করায় বুঝা যায় শব্দ ভাণ্ডারে খাঁটতি আছে। গ্রন্থটি পাঠান্তে কবিতা কেমন হয়েছে, তাও পাঠক অনুধাবন করতে পারবেন।
বইটি সকল মানুষের পাঠযোগ্য ও সংগ্রহে সংরক্ষণযোগ্য।
বইটির নাম করণ হয়েছে একটি দেশাত্ববোধক কবিতার নামে। বইটির নামকরণের সার্থকতা এ কবিতাটি পড়েই পাঠক ব্যক্ত করবেন।
তবে কবিতাগুলোর নামকরণ করা হয়েছে একাধিক শব্দ সমন্বয়ে। নামকরণের ব্যাপারে কবি কোনো শব্দ সংকোচন করেন নাই।
এবং আবেগময় কিছু শব্দ অহেতুক কবিতায় প্রয়োগ হয়েছে সে সম্পর্ক জানা থাকা আবশ্যক। যেমন —
# “তো” আবেগ প্রকাশ করতে যেয়ে আসল কথা বলতে
না পেরে তো তো তো করে অর্থাৎ তোতলামী থেকে “তো” ধ্বনির উৎপত্তি।
# “গো” এটা পশ্চিম বঙ্গের একটি কথ্য আবেগী ধ্বনি যেমন-
হ্যাঁ গো, কেমন আছো গো, ইত্যাদি
# “রে” এটা প্রচলিত সঙ্গীত ধ্বনি, সা-রে-গা-মা এর ধ্বনি। যেমন- ও, পাখি রে—-, মাঝি বাইয়া যাও রে —-।
এ রকম আরও আছে।
তাই এসব অপ্রয়োজনীয় আবেগী ধ্বনি কবিতায় প্রয়োগ করা অবাঞ্চনীয়।
বেশ কিছু বানান বিভ্রান্তি পরিলক্ষিত হয় তবে ছাপাত্রুটি নাই। বই’র শেষে একটি নির্ঘন্ট বা বানান সংশোধনী থাকা আবশ্যক ছিলো।
বইটি উৎসর্গীত হয়েছে ; কবির প্রয়াত মা-বাবা ও মুক্তিযুদ্ধে জড়িত সকল আত্মার প্রতি ।
৫ ফর্মার বই, সুন্দর আকর্ষণীয় চার রঙের প্রচ্ছদ। মজবুত বাঁধাই এবং দ্বিতীয় ফোল্ডারের কবির আবক্ষ ছবি । ৮০ গ্রাম কাগজ, ১/৮ সাইজ। মূল্য টাকা ১৫০.০০
আবু সুফিয়ান খান : কবি, সমালোচক ও মুক্তিযোদ্ধা।