ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সৈকত শহর দীঘার জাহাজবাড়ি পর্যটন কেন্দ্রের অডিটোরিয়াম হলে রবিবার ( ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯) ‘বঙ্গবন্ধু রিসার্চ অ্যান্ড কালচারাল ফাউণ্ডেশন’ এর সহযোগিতায় ওয়েস্ট বেঙ্গল রুরাল নিউজপেপার ওনার এন্ড এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘বঙ্গপ্রদেশ বঙ্গবন্ধু সাহিত্য সম্মেলন’। এতে দুই বাংলার কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, সংস্কৃতিকর্মী ও অধ্যাপকসহ গুণীজনদের উপস্থিতিতে উৎসব মুখর পরিবেশে শত শত লোকের মিলন মেলায় মুখরিত হয়ে ওঠে সৈকত শহর দীঘার জাহাজবাড়ি পর্যটন হল।
দুপুর ১২টার সময় বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও প্রদীপ জ্বালিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের সূচনা পর্ব। তারপর দুই বাংলা থেকে আগত অতিথিদের ব্যাজ, ফুলের তোড়া ও ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর ছবি সংবলিত সম্মাননা স্মারক দিয়ে অতিথিদের বরণ করে শুরু হয় সম্মেলনের মূল পর্ব।
স্বামী বিরজানন্দ মহারাজ এর সভাপতিত্বে ও ড. চিত্তরঞ্জন মাইতি ও ঔপন্যাসিক সুকেশ কুমার মন্ডলের যৌথ সঞ্চালনায় এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন – অধ্যাপক ড. শচীনন্দন সাউ, অধ্যাপক ড. পিনাকী দাস, অধ্যাপক ড. জ্যোতির্ময় রায় চৌধুরী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সিদ্ধার্থ বাহুবলীন্দ্র, ড. লুতফুর রহমান, সীতারাম সেনাপতি, চলচ্চিত্র পরিচালক এ্যালবার্ট খান, প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি মধুরিমা অধিকারী, সাংবাদিক হারুন অর রশিদ সাগর, ভারতের বিখ্যাত আন্তর্জাতিক কবি সুব্রত ভট্টাচার্য ঋকতান, কবি ও শিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহিদ, সাংবাদিক তরুণ ভট্টাচার্য, সাংবাদিক অংশুমন ফাদিকার, কবি রওনক আহমদ এনাম গীতিকার কবি রাফিদ, কনিস্ক শাসমল, সুজিত ভৌমিক।
অতিথিরা বক্তব্য রাখতে গিয়ে বার বার উঠে আসে পবিত্র গঙ্গা ও পদ্মার নানা প্রসঙ্গ । দুই বাংলার সৃষ্টি ও কৃষ্টির নানা পথচলা ও সাংস্কৃতিক মেল বন্ধনের কথা, বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা, বক্তারা বলেন- যদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হতো, তাহলে এই দুই বাংলার মানুষ কখনো বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারতো না। দুই বাংলার মানুষের মধ্যে এই মেল বন্ধনের সুযোগ হতো না। বঙ্গবন্ধু, বিশ্ববন্ধুর জন্য আজ আমরা গর্বিত, আজ আমরা বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চা, গবেষণা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পালন করতে পারছি একমাত্র বঙ্গবন্ধুর জন্যই। আমরা বঙ্গবন্ধুর আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। তারি পাশাপাশি ২০২০ সালে যথাযথ মর্যাদায় মুজিববর্ষ পালন এবং স্মরণীয় করে রাখার জন্য বিভিন্ন আয়োজনের উদ্যোগ করছি।
বাংলাদেশ থেকে আসা কবি সাহিত্যিকরা এ পার বাংলার মানুষের সঙ্গে সাংস্কৃতিক জগতের নিরবচ্ছিন্ন সম্পর্কের কথা মনে করিয়ে দেন। সাংবাদিক অংশুমান ফাদিকার ও কবি ঔপন্যাসিক সুকেশ কুমার মন্ডলের আন্তরিক উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় এদিনের অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতি মনস্ক মানুষের মনে দাগ কাটে। দুই বাংলার কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে এই অনুষ্ঠানের উজ্জ্বল ছবি ফুটে ওঠে সৈকত শহর দীঘা জুড়ে। এদিনের এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষজনের মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহ দেখা যায়। জাহাজ বাড়ির আশে পাশে ছিল উৎসাহী মানুষের ভিড়। অডিটোরিয়াম ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। দুপুরের মধ্যাহ্নভোজের আপ্যায়ন শেষে শুরু হয় অনুষ্ঠানের শেষ পর্ব। এতে বাংলাদেশ থেকে আগত অতিথিসহ সকল অতিথিদের প্রদান করা হয় বঙ্গপ্রদেশ বঙ্গবন্ধু সম্প্রীতি স্মারক সম্মান, দুই বাংলার কবিদের কবিতা পাঠের আসর এবং সম্মেলনে আগত সকলকে প্রদান করা হয় বঙ্গপ্রদেশ স্মারক সম্মান, সনদপত্র, ফাইল ও কলম ইত্যাদি।
অনুষ্ঠানের শেষাংশে কত্থকনৃত্যশিল্পী স্নেহা ভট্টাচার্য একাধারে চারটি নৃত্য পরিবেশন করে দুই বাংলার এই মিলন মেলার মঞ্চকে মাতিয়ে তুলে। তার এই অসাধারণ নৃত্য পরিবেশা জন্য তাকে পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয় বঙ্গপ্রদেশ বঙ্গবন্ধু সম্প্রীতি স্মারক সম্মান, সনদপত্র ও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উত্তরীয় সম্মান। পরিশেষে ঔপন্যাসিক সুকেশ কুমার মন্ডল তার “পন্ডিত স্যার” উপন্যাসের আলোকে চলচ্চিত্র নির্মানের সম্মতিপত্র তুলে দেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক এয়লবাট খানের হাতে তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে সন্ধ্যা ৭ ঘটিকার সময় সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।