১২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছিল টিম বাংলাদেশ। এমতাবস্থায় হেসেখেলে বল করছিল পাকিস্তানি বোলাররা। কিন্তু হেসেখেলে ব্যাট করেননি ফর্মইন ব্যাটসম্যান মুশি। ৪র্থ উইকেট পার্টনারশিপে ১৪৪ রানের গড়ে ওঠা এক অতিমানবীয় জুটিতেই ধীরে ধীরে বাংলাদেশের পক্ষে আসতে শুরু করে ম্যাচ। ৬০ করে মিঠুন আউট হলেও মুশফিক তার সমস্ত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ব্যাট করতে থাকলেন। পায়ের ইনজুরি নিয়েও একের পর এক সিঙ্গেল তুলতে থাকেন। শাহীন আফ্রিদির গুড লেন্থের বলটিতে কিপারে ক্যাচ যখন যায় তখন মুশফিক সেঞ্চুরি থেকে মাত্র একরান দূরে। হতাশা নিয়ে ফিরলেও মাহমুদউল্লাহ মাশরাফি শেষ কাজটা করে দেন।
২৩৯ রান যে এই উইকেটে বিশাল সেটা প্রমাণ করলেন মেহেদী-মুস্তাফিজরা। প্রথম দু ওভারেই ফখর জামান ও বাবর আজমের বিদায়ে স্বস্তি পায় টাইগাররা। অধিনায়ক সরফরাজ সাহস করে চারে আসলেও মুস্তাফিজের বাউন্সারে চার রানের বেশি করতে পারেননি। ৪র্থ উইকেটে ইমাম উল হকের সাথে শোয়েব মালিক জুটি জমে গেলেও বড় জুটিতে রুপান্তরিত হয়নি। একপর্যায়ে ৯১ রানে ৫ উইকেট হারায় পাকিস্তান। ইমামের দৃঢ়তায় শঙ্কা জাগে। কিন্তু অসাধারণ অধিনায়ক মাশরাফির কৌশলের কাছে হারে পাকিস্তান। এদিন বোলার হয়ে যাওয়া মাহমুদউল্লাহ হয়তো ক্যারিয়ার সেরা বোলিংটা করলেন। সাথে সৌম্যর দারুন বল আর জয়ের দারুন ক্ষুদা নিয়ে নামা এগারো টাইগারের জীবন বাজি রাখা ফিল্ডিংয়ে ৩৭ রানের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে টিম বাংলাদেশ। ২০১২, ২০১৬ এরপর ২০১৮। আবারো এশিয়া কাপের ফাইনালে টাইগাররা।
তবে ফাইনালে প্রতিপক্ষ ভারত মানেই তো গত এশিয়া কাপের দুঃসহ স্মৃতি। এশিয়া কাপের ইতিহাসে সেবারই (২০১৬) প্রথম টি-টোয়েন্টি সংস্করণ মাঠে গড়িয়েছিল। আগের ম্যাচগুলো দোর্দণ্ড প্রতাপে খেলে ফাইনালে উঠে আসা বাংলাদেশ শিরোপা–লড়াইয়ে তেমন প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। বৃষ্টিবিঘ্নিত সেই ফাইনালে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ১৫ ওভারে ৫ উইকেটে ১২০ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। জবাবে ৭ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের জয় পেয়েছিল ভারত।
এবার কি তাহলে সেই হারের জ্বালা মেটানোর পালা? ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো দেখা মিলেছিল ফাইনালের। সেই হারের স্মৃতি ভোলা সম্ভব? শ্বাসরুদ্ধকর সেই ম্যাচে পাকিস্তানের ৯ উইকেটে ২৩৬ রান তাড়া করতে নেমে ২ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। মুশফিক-সাকিবের সেই কান্না এখনো পোড়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। গত টুর্নামেন্টে সুযোগ পেয়েও মোছা যায়নি সেই কান্না। এবার? প্রতিপক্ষ তো সেই ভারত—মুশফিকদের মধ্যে আলাদা একটা তাড়না থাকাই স্বাভাবিক।
তাই অতীতের সব দুঃস্মৃতি ভুলে গত দুবার রানার্সআপ বাংলাদেশের এবার যে জয়ের অপেক্ষা। এমতাবস্থায় সব মিলিয়ে এই ফাইনাল হয়ে উঠেছে অনেক প্রত্যাশার এক ফাইনাল।