গোলাম মোহাম্মদ কাদের। জি এম কাদের নামেই পরিচিত। পেশায় প্রকৌশলী জি এম কাদেরের রাজনীতিতে আগমন ১৯৯০ সালে বড় ভাই সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের পতনের পর। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত মহাজোট সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। বর্তমানে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান। দেশের রাজনীতির এ সময়ের হালচাল নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন কালের কণ্ঠ’র জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক লায়েকুজ্জামানের সঙ্গে। বালাগঞ্জ প্রতিদিনের পাঠকের জন্য সেই কথোপকথনের পুরোটাই তুলে ধরা হলো কালের কন্ঠ’র সৌজন্যে।
প্রশ্ন : একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কোনো আশঙ্কা করছেন কি না?
জি এম কাদের : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে প্রবল দুটি পক্ষ। দুটি ধারাই অনড় অবস্থানে আছে। একটি পক্ষ বলছে নির্বাচন হবে সংবিধানের আলোকে, বর্তমান ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর অধীনে। অন্য পক্ষটি তাদের ভাষায় সহায়ক বা নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে এখনো অটল আছে। এ নিয়ে যদি কোনো সমঝোতা না হয়, উভয়েই যার যার অবস্থানে থাকে তাহলে একটি সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, জনমনে এমন আশঙ্কা আছে। তবে আমি মনে করি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হবে, সংশয় কেটে যাবে।
প্রশ্ন : ড. কামাল, বি চৌধুরীর ঐক্যকে কিভাবে দেখছেন?
জি এম কাদের : ড. কামাল হোসেন ও বি চৌধুরী সম্মানিত মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা রাজনীতি করছেন। রাজনীতির অভিজ্ঞতা আছে। তবে সাংগঠনিকভাবে এবং জনসমর্থনের দিক থেকে তাঁদের অবস্থান সুদৃঢ় নয়। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে তাঁদের মোর্চাকে গুরুত্বসহ দেখতে হবে, এটাকে খাটো করে দেখা ঠিক হবে না। এখনো বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল তা বলা যাবে না। বিএনপির জনসমর্থনও নগণ্য নয়। তাদের ঘাটতি আছে শীর্ষ নেতৃত্বে। এই ঘাটতি তাদের দলীয় ঐক্যে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। এখানে বলা দরকার বিএনপি যদি ড. কামাল হোসেন ও বি চৌধুরীদের মতো নেতাদের অভিভাবক মেনে চলে তাহলে তাদের মোর্চা সরকারের বেশ শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়াতে পারে।
প্রশ্ন : আপনার কি মনে হয় দেশে আবারও ২০১৪ সালের মতো একতরফা একটি নির্বাচন হতে পারে?
জি এম কাদের : দেখুন ২০১৪ সালের পরিবেশ এবং আজকের পরিবেশ এক নয়। সময় এগিয়েছে, পরিস্থিতিও বদলেছে। একই ঘটনা বারবার ঘটে না। যেমন দেখুন একতরফা নির্বাচন দেশে এর আগেও অনেকবার হয়েছে, সে নির্বাচনগুলো কিন্তু ফলপ্রসূ হয়নি, অন্যদিকে ২০১৪ সালের নির্বাচনের সরকার কিন্তু দাপটের সঙ্গে মেয়দকাল পূর্ণ করছে। ২০১৪ সালের নির্বাচন নিয়ে সরকারের কিন্তু একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। সরকার আবার সেদিকে যাবে বলে মনে হয় না।
প্রশ্ন : অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে—আপনি কি এ বিষয়ে আশাবাদী?
জি এম কাদের : ভীষণভাবে আশাবাদী। শেষ পর্যন্ত সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হবে। সবাই নির্বাচনে আসবে। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে আসবে এবং অনিয়মের বিষয়ে সজাগ থাকবে। এ বিষয়ে জনগণকেও তারা সজাগ রাখার চেষ্টা করবে।
প্রশ্ন : কী মনে হয়, বিএনপি আসবে নির্বাচনে?
জি এম কাদের : অতীত নির্বাচন বর্জনের অজ্ঞিতা এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে বলে মনে করি। এমনকি খালেদা জিয়া মুক্ত না হলেও তারা নির্বাচনে আসবে।
প্রশ্ন : জাপার কি বিএনপি জোটে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে?
জি এম কাদের : না, এমন কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।
প্রশ্ন : তাহলে কি জাপা এককভাবে নির্বাচন করবে, নাকি মহাজোটে থেকেই?
জি এম কাদের : এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির যে কৌশল তাতে যদি শেষ পর্যন্ত কোনো অদৃশ্য কারণে বিএনপি নির্বাচনে না আসে তাহলে জাতীয় পার্টি ৩০০ আসেন নির্বাচন করবে। বিএনপি নির্বাচনে এলে জাতীয় পার্টি মহাজোটের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাবে। তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের বিষয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি, নীতিগত কোনো সিদ্ধান্তও হয়নি। কোনো ঘোষণাও দেওয়া হয়নি।
প্রশ্ন : মহাজোটে গেলে কত আসন দাবি করবেন?
জি এম কাদের : আমাদের দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ১০০ আসনের কথা বলেছেন। আবার পত্রিকায় দেখলাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন শরিকদের ৬০ থেকে ৬৫ আসন ছেড়ে দেওয়ার কথা। তবে এ নিয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। নির্বাচন কাছাকাছি এলে এ নিয়ে আলোচনা হবে।
প্রশ্ন : এ নির্বাচন কমিশন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব মনে করেন কি?
জি এম কাদের : সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আশাবাদী। একটি কথা বলা দরকার, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি হবে না, তা কিন্তু শুধু নির্বাচন কমিশনের ওপর বর্তায় না। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলো ফ্যাক্টর আছে, তার অন্যতম হলো প্রশাসনের ভূমিকা। সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে, না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। এ ছাড়া জনগণেরও ভূমিকা আছে। নির্বাচনে যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে জনগণ জেগে উঠলে কিন্তু অনিয়ম সম্ভব হয় না।
প্রশ্ন : জাতীয় পার্টিতে তরুণ প্রজন্মের আগমন ঘটছে না—ভবিষ্যতের দল নিয়ে কি কিছু ভাবছেন?
জি এম কাদের : ২৭ বছর ধরে আমাদের দলটি ক্ষমতার বাইরে। তরুণদের একটি অংশ সব সময়ই ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে জড়িয়ে যায়। তারা ক্ষমতাহীন বিরোধী দলের কাছে খুব বেশি আসতে চায় না। এ ছাড়া অন্যরা যেমন ছাত্রদের দিয়ে সংগঠন করিয়ে, লেজুড়বৃত্তি করিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোকে নেতা তৈরির প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে, জাপা নীতিগতভাবে তার বিরোধী। এটা পৃথিবীর কোথাও নেই। আমরা রাজনীতির সুস্থ ধারায় বিশ্বাসী, আশা করি একদিন সে ধারা প্রতিষ্ঠিত হবে।