সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নে ১টি মাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় দিয়েই চলছে ইউনিয়নের মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম। নিয়মানুযায়ী, চতুর্দিকে ৫ কি.মি. রাস্তার পর পর একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকার কথা, সেখানে ২৩ কিলোমিটারের পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নে মাত্র ১ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ১৮০০০ পূর্ব পৈলনপুরীর শিক্ষা সেবায় ১ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উপর ভরসা রাখতে নারাজ পূর্ব পৈলনপুরের জনসাধারণ।
জানা যায়, পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের গালিমপুর গ্রামে ৯০ শতাংশ জমি নিয়ে ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে গালিমপুর হুরুন্নেছা খানম উচ্চ বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৫৫৬ জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। এরমধ্যে ২৪৫ জন ছাত্র এবং ৩১১ জন ছাত্রী রয়েছে। এই একটি মাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও নানা সমস্যায় জর্জরিত। গালিমপুর হুরুন্নেছা খানম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ রুকন উদ্দিনের সাথে একান্ত আলাপকালে জানা যায়, পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক পাখা, বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাট ও একটি কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন জরুরী হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়টির জন্য। এমনকি ইউনিয়নের ১ টি মাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও গালিমপুর হুরুন্নেছা খানম উচ্চ বিদ্যালয়ে জাতীয় দিবস গুলোতে ও শহীদদের স্মৃতিচারনে পুষ্প অর্পন করার জন্য নেই কোনো শহীদ মিনার। ফলে যেকোনো জাতীয় দিবসে অস্থায়ী শহীদ মিনারেই ভরসা রাখতে হয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। জানা যায়, ৫৫৬ জন ছাত্র-ছাত্রীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন ৯ জন, এর মধ্যে ৮ জন এমপিও ও ১ জন খন্ডকালীন হিসেবে কর্মরত রয়েছেন এবং দুইজন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।
পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: আব্দুল মতিন জানান, ২৩ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাত্র ১ টি। আবার যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতির কারনে এই ইউনিয়নের অনেক শিক্ষার্থী শেরপুর ও মনুমুখ এলাকার মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোতে চলে যায়। ইউনিয়নে আর কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের কিত্তে জালালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করার একটি আবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আবেদনটির তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নে আরো একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা না হলে অদূর ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম হুমকির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জানা যায়, গালিমপুর হুরুন্নেছা খানম উচ্চ বিদ্যালয়ে অত্র ইউনিয়নের শিক্ষার্থী ছাড়াও প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীই আসে পার্শ্ববর্তী মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর গ্রাম থেকে। এই ইউনিয়নের জনসাধারণের দাবি পূর্ব পৈলনপুরে আরো একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করা।
এ ব্যাপারে বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আবদুল হক বলেন, পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় এখানে সরকারি ভাবে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হচ্ছে না। যদি স্থানীয় কেউ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন তাহলে আমরা তাঁকে সহযোগীতা করব।
বালাগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: নজরুল ইসলাম বলেন, এখানে আরো একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন রয়েছে। এই ইউনিয়নে আরো একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় হওয়া উচিত। যদি কেউ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন তাহলে আমরা তাঁকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেব।
অত্রাঞ্চলে আরো একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন হলে পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নে শিক্ষার হার বাড়াতে সাহায্য করবে। প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিকে ঝরে পড়ার হার কমাতে সাহায্য করবে। তাই বালাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নে আরো একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি।