সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্রেক্সিট নিয়ে পাঁচটি প্রশ্ন ও তার উত্তর



ইন্টারনেটের এই যুগে যখনি কোন বিষয় নিয়ে জানতে চাই, বেশিরভাগ মানুষ গুগলে সেটি লিখে খোঁজ করে। ব্রেক্সিটও তার ব্যতিক্রম নয়।

কিছুদিনে ব্রেক্সিট নিয়ে গুগলে সবচেয়ে বেশি জিজ্ঞাসিত পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর এখানে সহজভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। খবর বিবিসির।

১. ব্রেক্সিট মানে কী?

‘ব্রিটেন এক্সিট’ নামটিকে সংক্ষেপে ডাকা হচ্ছে ব্রেক্সিট নামে- যা হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাবার প্রক্রিয়া।

ইউরোপিয় ইউনিয়নভুক্ত ২৮টি দেশ একে অন্যের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে পারে এবং সেখানে বসবাস বা কাজ করতে পারে।

৪০ বছরের বেশি সময় ইউনিয়নের সঙ্গে থাকার পর ২০১৬ সালের জুনে একটি গণভোট নিয়েছিল যুক্তরাজ্য, যেখানে ভোটাররা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে ভোট দেন।

কিন্তু সেই ভোটের ফলাফলের সঙ্গে সঙ্গেই ব্রেক্সিট হয়ে যায়নি। এই বিচ্ছেদ ঘটবে ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ তারিখে।

২. ব্রেক্সিট চুক্তি কী?

ব্রেক্সিট নিয়ে ভোটাভুটির পর, প্রক্রিয়া নিয়ে যুক্তরাজ্য আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়।

এই আলোচনার বিষয়, কী শর্তে বিচ্ছেদ হবে। এটা হচ্ছে বেরিয়ে আসার সমঝোতা যেখানে নির্ধারণ করা হবে, যে কী কী শর্তে ব্রিটেন ব্রেক্সিট থেকে বেরিয়ে আসবে। ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পরে কি ঘটবে, তা আলোচ্য বিষয় নয়।

বুধবার এই বিচ্ছেদের বিষয়ে খসড়া চুক্তি তুলে ধরেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে।

এখানে তার মূল বিষয়গুলো:

অর্থকড়ি: ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেনা চুকাতে যুক্তরাজ্য ৩৯ বিলিয়ন পাউন্ড দিবে।

সময়সীমা: ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যিক বিষয় ঠিক করে নেবে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মানিয়ে নেবে।

অভিবাসন: ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকরা এবং তাদের পরিবার মুক্তভাবে যুক্তরাজ্যে আসতে পারবেন।

বাণিজ্য: অন্তর্বর্তী সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন হবে না।

উত্তর আয়ারল্যান্ড: ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা যুক্তরাজ্য, কেউ চায় না উত্তর আয়ারল্যান্ড আর রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ডের মাঝে কোন কড়া সীমান্ত থাকুক। তাই দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে, ব্রেক্সিট নিয়ে বোঝাপড়ায় যাই ঘটুক না কেন, এখানে সীমান্ত উন্মুক্ত থাকবে।

৩. উত্তর আয়ারল্যান্ড ও রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ড

পুরো ব্রেক্সিট আলোচনার মধ্যে এটা দুই পক্ষের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কোন পক্ষই চায় না, উত্তর আয়ারল্যান্ড ও রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ডের মাঝে প্রহরী চৌকি, তল্লাশি ঘটুক।

সুতরাং তারা একটি ‘ব্যাকস্টপে’ সম্মত হয়েছে, যার মানে এই দুইটি দেশের মাঝে কখনোই কড়াকড়ি সীমান্ত থাকবে না।

এর মানে পুরো যুক্তরাজ্যে না হলেও উত্তর আয়ারল্যান্ডে খাবার, পণ্যের মানে কিছু ইইউ রীতিনীতি অব্যাহত থাকবে।

এই পদ্ধতি শুধুমাত্র তখনি কার্যকর হবে, যদি ইইউ আর যুক্তরাজ্যের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সময়েও কোন বাণিজ্য চুক্তি না হয়।

কিন্তু বিষয়টি বিতর্কিত। অনেকে হয়তো বলবেন, এর ফলে যুক্তরাজ্যকে এখনো ইইউ আইনের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। আবার উত্তর আয়ারল্যান্ডের ক্ষেত্রে আলাদা বিধিবিধান থাকবে, এটাও অনেকে পছন্দ করছেন না।

৪. ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে কখন পার্লামেন্ট ভোটাভুটি করবে?

২৫ নভেম্বর এই চুক্তির বিষয়ে ইউরোপীয় নেতাদের সমর্থন আদায়ের জন্য চেষ্টা করবেন প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে।

সেখানে অনুমোদন পেলে তিনি ব্রিটেনের পার্লামেন্টে এমপিদের সমর্থনের জন্য তুলবেন। সেটা ডিসেম্বর নাগাদ হতে পারে।

আপাতত মনে হচ্ছে, তার এই চুক্তিটি হয়তো পার্লামেন্টে প্রত্যাখ্যাত হবে। রক্ষণশীল দল থেকে তিনি যেমন পর্যাপ্ত সমর্থন পাচ্ছেন না, তেমনি অন্য দলের এমপিরাও এই চুক্তি নিয়ে সন্তুষ্ট নন।

৫. আসলেই কি কখনো ব্রেক্সিট হবে?

যুক্তরাজ্যের আইন বলছে, ব্রেক্সিট হতে যাচ্ছে।

তবে অনেকে দ্বিতীয় দফার গণভোটের জন্য দাবি তুলেছেন। তারা প্রশ্ন তুলতে চান, ‘চুক্তির বিস্তারিত জানার পরেও কি আপনি চান যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেন বেরিয়ে যাক?’

এটা হলে হয়তো ব্রেক্সিটের বিষয়টি বদলে যেতে পারে-তবে টেরেসা মে বারবার বলে আসছেন, দ্বিতীয় দফার গণভোট হবে না।

শেয়ার করুন:

প্রিন্ট করুন প্রিন্ট করুন

error: Content is protected !!