১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর রাতে একদল মুক্তিযোদ্ধা থানা ভবনে অবস্থানকারী পুলিশ বাহিনীকে ঘেরাও করে ফেলেন। তথ্যের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধারা জানতে পারেন বালাগঞ্জ থানায় পাক হানাদার বাহিনী নেই, তবে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল জব্বারের নেতৃত্বে একদল বাঙালি পুলিশ রয়েছে। ৭ ডিসেম্বর সকালে বার্তা বাহকের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে আত্মসমর্পণের নির্দেশ পাঠানো হয়। পুলিশ বাহিনী তখন দুই ঘণ্টা সময় প্রার্থনা করে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা ঘোষণা করেন বড়জোর ১০ মিনিট সময় দেয়া যেতে পারে। অতঃপর সিদ্ধান্ত হয় পাক হানাদারের দোসররা সকাল ৯টায় অস্ত্র সমর্পণ করবে। এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক পুলিশ বাহিনী থানা ভবনের মালখানায় অস্ত্র জমা দেন এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সকাল পৌণে ১০টায় মুক্তি বাহিনীর অধিনায়কের নিকট চাবি হস্তান্তর করেন।
সকাল ১০টার সময় থানার সম্মুখস্থ প্রাঙ্গণে কুয়াশাঘন সকালে মাঠের এক পার্শ্বে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা সারিবদ্ধ ভাবে লাইন করে অবস্থান নেন। সবার হাতে ছিল অস্ত্র। সেদিন পাক সেনাদের আত্মসর্মণের পর উপজেলা সদরস্থ সাব-রেজিস্ট্রারী অফিস প্রাঙ্গণে মুক্তিকামী অসংখ্য মানুষের ভিড় জমে। মুক্তিবাহিনীর প্রায় ৪০ জন সদস্য উপস্থিত জনতার সামনে তাদের পরিচয় দেন। উৎসুক জনতা মুক্তিযোদ্ধাদের ‘বিজয়ী’ অভিবাদন জানান। মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সবাই শান্ত থাকুন। এখানকার সব কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বালাগঞ্জের পুলিশ বাহিনী এবং রাজাকাররা আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। আজ আমরা মুক্ত।’
সেই দিন বালাগঞ্জ মুক্তকারী ওই মুক্তিযোদ্ধা দলের সাথে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা মজির উদ্দিন আহমদ বলেন, একাত্তরের সেই দিনের কথা জীবনে ভোলার নয়। দেশকে শত্রুমুক্ত করতে আমরা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত পূর্ণতা আজও আসেনি। বর্তমান সময়ে যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধীদের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন – কোনো মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা কোনো দেশপ্রেমিক নাগরিক এদের বিচারের বিরোধিতা করতে পারে না। আমরা অবশ্যই যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধীদের বিচার চাই। স্বাধীনতা বিরোধীদের দিয়ে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন হতে পারেনা।