ফিলিস্তিন, কাশ্মির, মিয়ানমার, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাকসহ সর্বত্র করুণ কান্না। রাসুল (সা.) চৌদ্দশত বছর আগে বিধর্মীদের দ্বারা মুসলমানদের নির্যাতিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী ঘোষণা করে গেছেন। আজ তার ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন হচ্ছে।
সুনানে আবু দাউদের একটি হাদীসে বর্ণিত আছে, ‘তোমাদের ওপর এমন একটি সময় আসবে, তোমাদের বিরুদ্ধে সকল জাতি এমনভাবে ডাকবে, যেমনটি খাওয়ার দস্তরখানের দিকে লোকদের ডাকা হয়ে থাকে!
এ কথা শোনে একজন লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সে দিন কি আমাদের মুসলিমদের সংখ্যা কম হবে? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, না, সেদিন তোমরা সংখ্যায় কম হবে না। বরং তোমরা সেদিন আরো অনেক বেশি হবে। তবে তোমরা বন্যার পানির উপরিভাগে ভাসমান খড়কুটার মত হবে।
মহান আল্লাহ তোমাদের দুশমনদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর করে দেবেন। আর তোমাদের অন্তরে ‘ওহান’ ঢেলে দেবেন। এক লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ওহান জিনিসটি কী? আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, দুনিয়ার মহব্বত আর মৃত্যুকে অপছন্দ করা।’ (সুনানে আবু দাউদ/ ৪২৯৭)
উল্লেখিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) মুসলমানদের নির্যাতিত ও লাঞ্চিত হওয়ার দু’টি কারণ উল্লেখ করেছেন। এ দু’টি কারণ বর্তমান যুগের অধিকাংশ মুসলমানের মাঝে পাওয়া যায়। একটি হলো দুনিয়ার মহব্বত, আরেকটি হলো মৃত্যুর ভয়।
তারা দুনিয়ার মহব্বতে এমন পাগল যে, দুনিয়ার ধনসম্পদ ও সম্মান-মর্যাদা অর্জনে সদা ব্যস্ত থাকায় আল্লাহর হুকুম আহকাম পালনের প্রতি চরম উদাসীন। আর মৃত্যুর ভয়ে এমন ভীত যে জালিম কাফির মুশরিকদের জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে জিহাদ করার সাহস পায় না।
ঈমানদারগণ ঈমান গ্রহণের পর দুনিয়ার মোহে পড়ে সৎ আমল করতে অবহেলা না করলে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে খিলাফত দান, ইসলাম প্রতিষ্ঠা এবং বিধর্মীদের অত্যাচার থেকে নিরাপত্তা দানের ওয়াদা করেছেন।
এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের ওয়াদা দিয়েছেন, তাদের অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন যেমন তিনি শাসনকর্তৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার এবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে, তারাই অবাধ্য। (সুরা নুর : আয়াত ৫৫)
আর মৃত্যুর ভয়কে উপেক্ষা করে জিহাদ করা ব্যতিত কাফির বেঈমানদের অত্যাচার থেকে অসহায় মাজলুম মুসলমানদের রক্ষার কোন উপায় নেই।
এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না। দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও। (সুরা নিসা: আয়াত ৭৫)
হায় আফসোস! নির্যাতিত মুসলমানদের রক্ষার জন্য যুদ্ধ করা তো অনেক দূরের কথা তাদের আশ্রয় দিতেও বর্তমানে মুসলিমরা রাজি নয়। কোন মুসলমান রাষ্ট্র নির্যাতিতদের সাহায্যে তেমন জোরালোভাবে এগিয়ে আসছে না।